প্রোফেসর শঙ্কু। বাংলা সাহিত্যে একটি জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র। ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায় এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন। শঙ্কু, প্রোফেসর শঙ্কু নামেই সমধিক পরিচিত। তিনি একজন বৈজ্ঞানিক ও আবিষ্কারক। চরিত্রটির আদ্যপ্রান্ত জানাচ্ছেন জনি হোসেন কাব্য।
যেভাবে শুরু
সাল টা ১৯৬১। সন্দেশ পত্রিকায় বের হলো ‘ব্যোমযাত্রীর ডায়েরি’। সেখানে দেখা মেলে স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যাপক প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর। গল্পটি হালকা চালে লেখা এবং এটি লেখার সময় লেখক প্রোফেসর শঙ্কু চরিত্রটি নিয়ে সিরিজ করার কথা ভাবেননি। ১৯৬৫ সালে গ্রন্থাকারে এর উপস্থিতি ঘটে।
পুরো নাম
প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু।
জন্মতারিখ
১৬ জুন।
পেশা
বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক।
পড়াশোনা
ছাত্র হিসেবে শঙ্কু ছিলেন অসাধারণ। জীবনে সর্বদাই প্রথম হতেন। গিরিডির স্কুল থেকে মাত্র ১২ বছর বয়সে ম্যাট্রিক পাস করেন। এরপর ১৪ বছর বয়সে কলকাতার কলেজ থেকে আইএসসি এবং ১৬ বছর বয়সে ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রিতে ডবল অনার্সসহ বিএসসি পাস করেন। মাত্র ২০ বছর বয়সে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন।
পরিবার
পিতা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু। তিনি গরিব মানুষদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করতেন। মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে মারা যান। শঙ্কুর অতিবৃদ্ধ প্রপিতামহ বটুকেশ্বর শঙ্কু। অবিবাহিত বিজ্ঞানী হিসেবে প্রফেসর শঙ্কুর খ্যাতি জগতজোড়া।
কাজেরক্ষেত্র
বিহারের গিরিডিতে তার কাজের ক্ষেত্র। পোষা বিড়াল নিউটন ও চাকর প্রহ্লাদকে নিয়েই তার কাজ কারবার। কখনও কখনও প্রতিবেশী অবিনাশ চট্টোপাধ্যায় ও শুভাকাঙ্ক্ষী নকুড় বাবুকেও দেখা যায়।
দক্ষতা
অকুতোভয়, আত্মভোলা শঙ্কু ৬৯টি ভাষা জানেন। মূলত পদার্থবিজ্ঞানী হলেও বিজ্ঞানের সকল শাখায় তাঁর অবাধ গতি। হায়ারোগ্লিফিক পড়তে পারেন; এবং বিশ্বের সকল দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, ধর্ম, সামাজিক রীতিনীতি ও বিশ্বসাহিত্য বিষয়ে তাঁর সম্যক ধারণা আছে।
অর্জন
শঙ্কুর আবিষ্কারের ঝুঁড়িতে আছে ৭২টি আবিষ্কার। তারমধ্যে কয়েকটি হলো, ম্যাঙ্গোরেঞ্জ, অ্যানাইহিলিন, নার্ভিগার, মিরাকিউরল, অমনিস্কোপ, ক্যামেরাপিড। সুইডিশ আকাদেমি অফ সায়েন্স তাকে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করেছে। ব্রাজিলের রাটানটান ইনস্টিটিউট থেকে পেয়েছেন ডক্টরেট। পাঁচটি মহাদেশের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কারক হিসেবে তাঁকে স্থান দিয়েছেন টমাস আলভা এডিসনের পরেই।
অভিযান
মঙ্গলগ্রহ থেকে শুরু করে ইংল্যান্ড, জার্মানি, জাপান, স্পেন এমনকি সাহারা মরুভূমি ও সমুদ্রের তলদেশেও তিনি অভিযান চালান।
চরিত্র
প্রোফেসর শঙ্কু তীক্ষ্ণবুদ্ধি, নির্লোভ ও সৎ। কিছুটা আত্মভোলা প্রকৃতির মানুষ। তার চরিত্রে বিশেষভাবে লক্ষণীয় এক ঋষিসুলভ ধৈর্য ও সংযম। তিনি স্বদেশপ্রেমিক; বেদ, উপনিষদ, আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা গভীর। আবার বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিল্প ও সাহিত্যের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। তিনি জ্যোতিষে বিশ্বাস না করলেও ভূতপ্রেত ও তন্ত্রমন্ত্রে বিশ্বাস করেন।
কথক
শঙ্কু সিরিজের গল্পগুলি প্রোফেসর শঙ্কুর জবানিতে দিনলিপির আকারে লিখিত।
গল্পপট
গল্পগুলির পটভূমি ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।
নিবাস
প্রোফেসর শঙ্কুর নিবাস তদনীন্তন বিহারের গিরিডি শহরে।
সঙ্গী
বাড়িতে তার সর্বক্ষণের সঙ্গী নিউটন নামে ২৪ বছরের একটি পোষা বিড়াল ও তাঁর চাকর প্রহ্লাদ। বিশ্বের নানান দেশের বিজ্ঞানীরা তাঁর বন্ধু, তাদের মধ্যে বহুবার উল্লিখিত হয়েছে স্ক্রোল ও সন্ডার্সের নাম। প্রতিবেশী অবিনাশ চট্টোপাধ্যায় ও হিতাকাঙ্ক্ষী নকুড়বাবু তার কোনো কোনো অভিযানে সঙ্গী হয়েছেন।
ভ্রমণ
কর্মসূত্রে গিয়েছেন কলকাতাসহ ভারতের নানা স্থানে। গিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জার্মানি, জাপান, স্পেন, মিশর, নরওয়ে, সুইডেন, তিব্বতে।
পরিসংখ্যান
প্রোফেসর শঙ্কু চরিত্রের অমর স্রষ্টা সত্যজিৎ রায় ১৯৬১ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত শঙ্কুকে নিয়ে মোট ৩৮টি সম্পূর্ণ ও ২টি অসম্পূর্ণ কাহিনি লিখেছেন।
প্রোফেসর শঙ্কু সমগ্র বই কিনতে ক্লিক করুন !
সত্যজিৎ রায়ের সকল বই কিনতে ক্লিক করুন !
আরও পড়ুনঃ