প্রতিবারের মতো এবারও একুশে বইমেলায় এসেছে নতুন বেশ কিছু উপন্যাস। আগের লেখকেরা তো আছেনই, সাথে যোগ হয়েছেন নতুন অনেক লেখকও। উপন্যাসের কলেবর সাধারণত অন্যান্য ঘরানার লেখার চেয়ে কিছুটা আলাদা। উপন্যাসে জীবনের অনেকটা অংশ উঠে আসে, আর তাতে নিজেকে জড়িয়ে নেওয়া সহজ হয় অন্যান্য ধরনের লেখার চেয়ে। তাই উপন্যাসের আলাদা একটি পাঠকগোষ্ঠী রয়েছে, উপন্যাসপ্রেমী এই পাঠকদের জন্য নিয়ে এসেছি এবারের বইমেলার তারকাসম কিছু উপন্যাস , যা কি না এরই মধ্যে নজর কেড়েছে পাঠক ও সমালোচকদের।
গত দুই সপ্তাহে যে উপন্যাসগুলো পাঠকমহলে সবচেয়ে বেশি সাড়া জাগাতে পেরেছে, তা নিয়ে আজকের এই লেখা। এতে সংক্ষেপে বইগুলো সম্পর্কে কিছু বর্ণনা থাকবে, যা পড়ে পাঠক আগে থেকেই উপন্যাসগুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিয়ে নিতে পারবেন। হয়তো আপনার সংগ্রহে রাখার মতো বইও এর মধ্যেই রয়েছে।

১) অর্ধবৃত্ত
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ঔপন্যাসিকদের মধ্যে সাদাত হোসাইনের নাম উল্লেখযোগ্য পর্যায়ে রয়েছে। পাঠকমহলে তাঁর জনপ্রিয়তাও বেশ তুঙ্গে। এবারের বইমেলায় তাঁর উপন্যাস ‘অর্ধবৃত্ত’ ইতোমধ্যেই কুড়িয়ে নিয়েছে অনেক প্রশংসা। এ বইয়ে প্রেমের রূঢ় সত্যকে খুঁজে এনেছেন লেখক, প্রেমের কমনীয়-নমনীয় রূপের বাইরেও যে একটি জটিল চাওয়া-পাওয়ার সমীকরণ থেকে যায়, তারই বর্ণনা করেছেন তিনি। বৃত্তের পুরোটা নয়, অর্ধেকটা নিয়েই এ উপন্যাসের সৃষ্টি। হতাশাকেই জীবনের অনুপ্রেরণা মনে করা সাদাত হোসাইন জীবনকে দেখেন ইতিবাচক দৃষ্টি দিয়ে।
ক্যামেরার দৃষ্টি দিয়েও জীবনকে দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর, ছবি তুলতে ভালোবাসেন। এছাড়াও, ইতোমধ্যেই তিনি নির্মাণ করেছেন দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য নির্বাক চলচ্চিত্র। ফটোগ্রাফি, চলচ্চিত্র নির্মাণ, লেখালেখি– সৃজনশীল এ তিনটি মাধ্যমেই তিনি সবসময় চেয়েছেন কোনো একটা গল্প বলতে। গল্পবলিয়ে এই লেখকের নিজস্ব একটি প্রোডাকশন হাউজ রয়েছে, সেখানেও তাঁর অনুপ্রেরণা এই গল্প বলার প্রবণতাই।

২) মেঘডুবি
কিঙ্কর আহসানের ‘মেঘডুবি’ উপন্যাসটিতে কাব্যময়তার ছোঁয়াও আছে, তাই কাব্যপ্রেমীরা এ উপন্যাসটিতে কবিতার স্বাদ খুঁজে নিতে পারেন খুব সহজেই। ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাঠকদের টাইমলাইনে ছড়িয়ে গেছে ‘মেঘডুবি’ উপন্যাসে থাকা কিছু কবিতার লাইন। বিজ্ঞাপন জগতের সাথে যুক্ত আছেন পেশার বদৌলতে, তবে নিজেকে লেখক হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য তাঁর। কিন্তু তাই বলে জনপ্রিয় লেখকের তকমা গায়ে আঁটতে রাজি নন কিঙ্কর।
অনেক অনেক মানুষ বই কিনলেই যে কাউকে জনপ্রিয় বলা যায়, এ নীতিতে বিশ্বাসী নন তিনি। বর্তমান সময়ে বিজ্ঞাপন ও প্রচার-প্রসার কতটা জরুরি, সেটা তিনি ভালো করেই জানেন এবং বইয়ের প্রচারে সময় ও অর্থ ব্যয় করাকে ইতিবাচকভাবেই দেখেন। কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখির সাথে জড়িত আছেন কিঙ্কর আহসান, পত্রপত্রিকায় লেখালেখির মধ্য দিয়ে শুরুটা হয়েছিল। প্রতিটি বইয়ে ভিন্ন প্লট, ভিন্ন শৈলী অনুসরণ করেন তিনি। তাই বৈচিত্র্যের স্বাদ পেতেও পাঠকেরা তাঁর কাছে এসে থাকেন।

৩) গতকাল
মধ্যবিত্তের জীবন নিয়ে, প্রেমের সনাতন চিত্র নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘গতকাল’। বইমেলায় ৩১ নম্বর স্টল অনিন্দ্য প্রকাশের প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাবে বইটি। লেখক ইশতিয়াক আহমেদের পূর্ববর্তী উপন্যাসগুলোর মতো এ বইয়েও তিনি এক সাদামাটা জীবন ও যাপনের গল্প বলতে চেষ্টা করেছেন। তবে সেই সাদামাটা জীবনের বাঁকে লুকিয়ে থাকে রোমাঞ্চের ছোঁয়া, একটু আলাদা কিছু মাত্রা। উপন্যাসের চরিত্রগুলোর মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব, একটি গোলকধাঁধায় আবর্তিত তাদের জীবন- সবটার সাথেই পরিচিত হবেন পাঠক। একটা সময় চরিত্রগুলোর মধ্যে ফেলে আসা জীবনের কোনো ছাপ খুঁজে পাওয়াও মুশকিল নয়। কারণ এই চরিত্রগুলো আমাদেরই আশপাশ থেকে নেওয়া, আমাদেরই চেনা মুখ ছেঁচে গড়া।

৪) রাখাল
মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি যখন আলোর মুখ দেখছে, তখন প্রথম আলোর মুখ দেখেন লতিফুর ইসলাম শিবলীও। শুধু লেখালেখিই নয়, সঙ্গীত ও অভিনয়ের জগতেও তাঁর পদচারণা রয়েছে। ব্যান্ড গান লিখে নাগরিক জীবনের তারুণ্য, তার মধ্যে নিহিত যন্ত্রণাকে প্রকাশ করেছেন নিজস্ব ভাষায়। আধুনিক প্রজন্মের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতার এটাও একটি বড় কারণ।
এবারের বইমেলায় বহুল প্রশংসিত ‘রাখাল’ তাঁর লেখা ইতিহাস আশ্রিত একটি উপন্যাস। এতে সতীদাহ প্রথার যূপকাষ্ঠে নিক্ষেপিত এক নারীর মর্মব্যথা বর্ণিত হয়েছে। সেসময়ের সমাজব্যবস্থা, বর্ণপ্রথার কাঠিন্য ও নির্মম ভাগ্যের বেড়াজালে নারী কীভাবে আবদ্ধ থাকত, তা নিয়েই উপন্যাসটি রচিত। বইটি নালন্দা প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে। ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া জাগিয়েছে ইতিহাসের পাতা থেকে নির্যাস নিয়ে লেখা বইটি।

৫) সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর
সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেছেন মৌরি মরিয়ম। তাঁর বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। সবাই যেখানে ‘মানুষ এখন বই পড়ছে না’- এমন ধারণা রাখে, সেখানে তাঁর বিশ্বাস, পাঠক বাড়ছে। নিজের লেখক জীবন ও বইয়ের অভিজ্ঞতা থেকেই এ কথা বলেন তিনি। মৌরি মরিয়ম রচিত ‘সুখী বিবাহিত ব্যাচেলর’ বইটি পাওয়া যাচ্ছে এবারের বইমেলায়। উপন্যাস ঘরানার এই বইটিতে রোমাঞ্চ রয়েছে, ধাঁধার উত্তর খোঁজার মতো গল্পের বাঁক রয়েছে।
এ উপন্যাসে জীবনের অনেকগুলো গল্প, অনেকগুলো প্রেমকে একটা মলাটে গুছিয়ে আনবার দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। আকারে অনেকটা প্রশস্ত এ বইয়ের কাহিনীও বেশ বিস্তৃত। পাঠক একবার পড়া শুরু করলে এ বিস্তৃতিতে হারিয়ে যেতে বাধ্য। উপন্যাসটি মূলত প্রেমের, তবে পাশাপাশি জীবনের অন্যান্য বিষয়ও উঠে এসেছে। নতুন লেখকদের মধ্যে মৌরি মরিয়মের জনপ্রিয়তা ও তাঁর বইয়ের আবেদন- দুটোই ক্রমে বাড়ছে। ভবিষ্যতেও লেখালেখি নিয়ে পরিকল্পনা রয়েছে মৌরির, নিজের আশাবাদ ও ইতিবাচক মন নিয়ে তাই তিনি লেখালেখিতেই বেশিরভাগ সময় ও মন দিতে চান।
লিখেছেনঃ অনিন্দিতা চৌধুরী
সবগুলো উপন্যাস একসাথে পেতে এখানে ক্লিক করুন
comments (0)