আমাদের একজন বাউন্ডুলে লেখক আছেন। লেখক বাউন্ডুলে কি না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না অবশ্য, তবে তিনি বাউন্ডুলে নামে একটা সিরিজ লিখতেন। প্রতি সোমবারে তা ছাপা হতো পত্রিকার পাতায়। আমরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকতাম। পড়তে পড়তে আমাদের মনে হত এই লেখকের কাঁধে নিশ্চিতভাবেই একটি ঝোলা আছে। তিনি খালি পায়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ান, আর মানুষ দেখেন। তিনি মানুষের যন্ত্রণাকে ধারণ করতে পারেন, মানুষের দৈনন্দিন কথাবার্তা তার চাবুক কলাম লাগতো স্লোগানের মত। মিলেনিয়ামের ঊষালগ্নের সেই সময়টায় আমাদের প্রাত্যহিক দিনলিপির অনিবার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছিলো তার কলাম। লেখকের নামটা অনেকেই হয়তো অনুমান করতে পারছেন। তার নাম সুমন্ত আসলাম। তিনি এখনো বাউন্ডুলে লিখেন। প্রতি বছর বইমেলায় তা প্রকাশিত হয়। সুমন্ত আসলামকে শুধুমাত্র বাউন্ডুলে সিরিজ দিয়ে মূল্যায়ন করা অনুচিত কাজ হবে। কারণ এছাড়াও তার বইয়ের সংখ্যা কম না। তিনি লিখছেন কিশোর উপন্যাস, লিখেছেন প্রেমের গল্প, লিখেছেন রম্য রচনা।
আসুন জেনে নেই, সুমন্ত আসলামের যে ১০ টি উপন্যাস আপনার অবশ্যই পড়া উচিৎ!

১। দহন
ফাঁসির দড়িটার কাছাকাছি গিয়ে থমকে দাঁড়ালো রাশিক। তারপর আস্তে আস্তে মাথাটা উঁচু করে দড়িটার দিকে তাকালো। পুরো দড়িটা একেবারে স্থির। কেবল গোল অংশটা মৃদু দুলছে। আর কোন বিশেষ কাজ নেই তার। গোল অংশটায় শুধু মাথাটা গলিয়ে দেওয়া, তারপর পায়ের নিচের চেয়ারটা কোনোরকমে সরিয়ে ফেলা, ব্যস! মনে মনে হাসি পেল রাশিকের। অনেক কিছু ভেবেও করে ফেলল সে। না, আর ভাবাভাবির কাজ নেই। সে মরে যাবেই। স্রেফ গলায় দড়ি দিয়ে মরবে। গলায় দড়ি দিয়ে মরার মধ্যেও নাকি বীরত্ব আছে। কোথায় জানি পড়েছিল সে। আস্তে আস্তে সে চেয়ারে ডান-পা রাখল। একটু যেন টলে ওঠল সেটা। ভর দিয়ে বাম-পা তোলার আগেই থেমে গেল সে হঠাৎ। সেভাবেই কি যেন ভেবে নিল মনে মনে। সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল। দ্রুত পড়ার টেবিলের কাছে গিয়ে ঝটপট কাগজ-কলম নিয়ে লিখে ফেলল ৯টি নাম। তার খুবই পরিচিত এই ৯টি নাম। এই ৯ জনের মধ্য-থেকে সে যেকোনো একজনকে খুন করবে। খুনটি করবে ঠাণ্ডা মাথায়। এই খুনটি করার পেছনে বিশেষ কারণ আছে। তারপর নিজের ঘরে এসে ঝোলানো দড়িটার সাথে ঝুলিয়ে দেবে নিজের দেহটা।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকারা, আপনাদের মনে নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন জাগছে যে, কি এমন হলো যে, সে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল? আর যদি নিবেই, কিন্তু তার আগে তাকে একটি মাত্র খুনই বা কেন করতে হবে? তাও আবার বেছে বেছে ৯টি মানুষ থেকে? সে ৯টি মানুষের তালিকায়ই-বা কার কার নাম আছে? আপাতত আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাবেন সুমন্ত আসলামের “দহন” বইটিতে। পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ আমাদের বিত্তবান ও উঁচু শ্রেণির সমাজের লোকেরা বা তাদের সন্তানেরা যাদের আমরা খুবই সুখি বলে জানি আসলে তারা কততুকু সুখি? অর্থবিত্তের মাঝেই কি সব সুখ, নাকি মনের সুখই আসল? এমনই এক ভিন্ন বিষয়বস্তুকে শিল্পরূপে সৃজন করে উপন্যাস লেখা আসলেই ব্যতিক্রম। উপন্যাসের কাহিনি সহজ-সাবলিল ও হৃদয়স্পর্শী। কৃত্রিমতার কোন আশ্রয় নেয়া হয়নি বরং বাস্তব জীবনের ঘটনাগুলো টেনে আনা হয়েছে। যা আপনার অবশ্যই ভালো লাগবে। বইটি সংগ্রহ করতে পারবেন এই লিংক থেকেঃ দহন

২। কেউ এসে ডেকে যায় জ্যোৎস্নায়
মেয়েটির খুব শখ-পাহাড়চূড়ায় বসে জ্যোৎস্না দেখবে সে। তবে একা নয়, একজন থাকতে তার পাশে। সারারাত বসে তারা গল্প করবে, স্বপ্ন বুনবে, প্রগাঢ় অনুভবে মাতিয়ে দেবে সে পাহাড়চূড়া, জ্যোৎস্না, মোড়ানো পাহাড়চূড়া।
জ্যোৎস্না সে এমনিতেও দেখে -তার ঘরে, বারান্দায়, ছাদে , রাস্তায় , অনেক জায়গায়। কিন্তু সবসময় তার মনে হয়-কে যেন ডাকে। জ্যোৎস্নার মাঝে কে যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে তার জন্য। থমকে দাঁড়ায় সে এক সময়। থমকে দাঁড়াবেন পাঠক আপনিও।
জ্যোৎস্না পাগল এ মেয়েটিকে সবাই অন্তী বলে ডাকে। অসম্ভব রূপবতী মেয়েটির সঙ্গে আমরা সবাই আজ জ্যোৎস্না দেখব এবং খুঁজে বের করব-কে তাকে ডাকে, কেন ডাকে, অপার হয়ে বসে থেকে কে শোনায় ভালোবাসার কথা!

৩। তবুও একদিন
ছেলেটির নাম দন্তন্য রুহমান। বেশ অদ্ভুত একটি নাম। এরকম নাম আবার কারো হয় নাকি? হ্যাঁ এই বইয়ের নায়কের নাম দন্তন্য রুহমান। অবশ্য তার বাবা-মা কিন্তু তার নাম রেখেছিলো নজির রহমান। নজির রহমান নামটি তার মা রেখেছিলেন। ছেলেটির নানার নামের সাথে মিল রেখে। কিন্তু ছেলেটির মনে হয় সে তার নানার মতো ভালো মানুষ না। তার ভেতর আছে রাগ, ক্ষোভ, হিংসা সবকিছু। তাই নজির রহমান থেকে নিজেই নাম বদলে রাখে দন্তন্য রুহমান। দন্তন্যদের সংসারে আছে বাবা, মা, বড় বোন মনু আর ছোট দুই বোন মিতি আর লুবা। ঝুট ঝামেলাহীন সাধাসিধে এক মধ্যবিত্ত সংসার। বাবা চাকরি থেকে রিটায়ার্ডের পর ছেলেটির বড় বোন মনু আপাই তাদের সংসার চালান শিক্ষকতা করে। ছোট বোন মিতি ভার্সিটিতে ভর্তির চেষ্টায় আছে। মোটামুটি সুখী একটি পরিবার। পরিবারের সব সদস্যরা সহজ-সরল চরিত্রের হলেও কিন্তু দন্তন্য ছেলেটির চরিত্র বেশ অদ্ভূত। হটাৎ হটাৎ বাসা থেকে উধাও হয়ে যায় কাউকে কিছু না বলেই। আবার মাসখানেক পর বাসায় আসে। কিন্তু কেন যে এমন করে কেউ জানেনা! এমনকি ইন্টার পরীক্ষার আগে পড়াশোনা পর্যন্ত ছেড়ে দেয় ছেলেটি। ছেলেটা এমনই এক অদ্ভূত চরিত্রের যে কেউ খুব সহজে তাকে আপন করে নেয় ভালবেসে ফেলে। কিন্তু সবসময় ছেলেটা পালিয়ে বেড়ায় তার আপন মানুষদের থেকে। কোন এক অজানা কারণে। সেই অদ্ভুত ছেলেটির কাহিনী নিয়েই লেখা সুমন্ত আসলামের “তবুও একদিন”!

৪। বৃষ্টি তোমার জন্য
স্পষ্টভাবে কথা বলতে তিনি ভালোবাসেন, শুনতেও ভাল লাগে। কেবল কপট মানুষগুলো এড়িয়ে চলে তাঁকে, পাছে সত্য কথা শুনতে হয়! কবিতাও তিনি ভালো লেখেন। পত্রিকায় মাঝে মাঝে তার যে কবিতা বের হয়, বেশ অন্যরকম মনে হয় সেগুলো, পড়তেও অন্যরকম। তাঁর প্রিয় বিষয় অন্ধকার ও নৈঃশব্দ্য। কারন অন্ধকারের ভেতরে আলো জ্বালানো যায়, আর নৈশব্দের ভেতরে সৃষ্টি করা যায় শব্দ। কি অদ্ভুত! সারাজীবন মনে রাখার মতো একটা কথা।
প্রিয় আলফ্রেড খোকন, প্রিয় আলফ্রেড
স্পষ্ট বক্তা তাঁরাই, যাঁদের আত্মা কলুষিত নয়; হৃদয় যাঁদের মরিচাময় নয়; যারা কেবল কাদামাটি ভাবেশে ফুল ফোটায়। আপনার ফোটানো ফুল দিয়ে আমরা একদিন মালা গাঁথব বন্ধু!
মা নিয়ে অনেকেই অনেক রকম উপন্যাস লিখেছেন। আগামিতে আরও লেখা হবে। অনেকদিন আগে একটা মায়ের গল্প শুনেছিলাম- অন্যরকম, ভয়াবহ, হৃদয় কাপানো। গল্পটা মাথার ভেতর ঘুরছিল সেই তখন থেকেই। এবার সেই মাকে সামনে রেখে একটা কিছু লেখার চেষ্টা করেছি। আমাদের এই মা খুব সাধারন, কিন্তু অসাধারণ তাঁর জীবনদর্শন; আমাদের এই মা নিতান্তই আটপৌড়ে, কিন্তু অতি আধুনিক তিনি; আমাদের এই মা সব সময় হাসেন, কিন্তু তিনি আমাদের কাঁদিয়ে যান অবলীলায়। আমাদের এই মায়ের কাছে অতি ক্ষুদ্র আমরা, তাঁর ছায়ার চেয়েও আমরা তুচ্ছ। যারা মাকে ভালোবাসেন, যারা বাসেন না- সবার কাছেই তিনি একজন আদর্শ মা। এমনতর মা চাই, আর কিছু না, আর কিছু না।

৫। হয়তো কেউ এসেছিল
চোখ দুটো বুজে ফেলি আমি, সত্যি সত্যি। অস্পষ্ট একটা মুখ ভেসে ওঠে সঙ্গে সঙ্গে। আনত চোখে সে একবার তাকায়, ভ্রূ কাঁপিয়ে, সুর জাগিয়ে। ঠোটের কোণা দুটো একটু প্রসারিত হয়েই থেমে যায়। ঝট করে চোখ মেলে তাকাই আবার। আধো একটা ছায়া সরে গেল সামনে থেকে। নরম এক গুচ্ছ কেশ ছুয়ে গেল আমার চোখ-চিবুক-ঠোট। বেজে উঠলো সেই অমোঘ বানী- কী আশ্চর্য এই বেঁচে থাকা, কী সুন্দর যাপিত জীবন! অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠি আমি হঠাৎ, ভালোবাসি ভালোবাসি। দেয়ালে স্থির হয়ে বসে থাকা টিকটিকিটা বলে উঠলো- টিকটিক।

৬। আই সি দ্য সান
প্রিয় পাঠক, উপন্যাসটা আপনি শুরু করবেন, তারপর ঘটে যেতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে উজ্জ্বলতম ঘটনা। আপনি স্থির বসে থাকবেন,তবুও ডুবে যাবেন ঘটনায়, প্রতিটি পরতে পরতে আপনি টের পাবেন_ না, ওখানে আপনিও আছেন, আপনিও জড়িয়ে গেছেন সবার সঙ্গে। এবং শেষ পর্যন্ত পড়া শেষ করে আপনি ভাববেন- এমন ঘটনা ঘটতে পারে না মানুষের জীবনে, এমন ভালবাসতে পারে না মানুষ কখনো! তারপর আপনি ঝট করে বলেই ফেলবেন- এমন উপন্যাস কখনো পড়েননি আপনি পাঠ প্রতিক্রিয়া : মূলত ফ্ল্যাপের অংশটুকু পড়েই আমি বইটি কিনে ফেলেছিলাম। তার আগে সুমন্ত আসলামের বই আমার খুব একটা পড়া হয়নি। বইয়ের প্রথমেই একটা মেয়েকে খুনের বর্ননা আছে। হাকিম নামক এক লোকের কুকর্মের কথা জেনে যাওয়া, ও তার প্রতিবাদের জন্যই এই খুন। দ্বিতীয় ঘটনা একটি ছেলের,বাড়ি থেকে রাতে অন্ধকারে পালিয়ে যায় সে। তারপর খুন করে তার কিছু শত্রু কে। অতঃপর আবারো পালিয়ে যাওয়া, অনেক অনেক দূরে পালিয়ে যাওয়া। তৃতীয় ঘটনা একটা অন্তঃসত্ত্বা মেয়ের। অবিবাহিত মেয়েটি লোক লজ্জার ভয়ে নিজের সব ছেড়ে বেরিয়ে আসে। এইরকম আরো কিছু ঘটনা। কেউ বা বিদেশে থাকা স্বামীর খোঁজে, আবার কেউ একটা চাকরির খোঁজে স্ত্রী -পুত্র কে রেখে ঘর ছাড়ে। তারা সবাই একসময় মিলিত হয়। উদ্দেশ্য একটাই এই দেশ ছেড়ে যাবে মালয়েশিয়া, কিন্তু সেটি বৈধ ভাবে নয়। সবাইকে লুকিয়ে,অন্ধকারের পথ পাড়ি দিয়ে চুপিসারে। যাত্রা করে সবাই। কিন্তু তারা কি জানত, সামনে অত পেতে আছে বিভীষিকা? পদে পদে জড়িয়ে আছে মৃত্যুর ভয়াল হাতছানি? উপন্যাসটি পড়তে গিয়ে শিউরে উঠেছিলাম আমি।
কয়েকমাস আগেই টিভি তে একদিন দেখেছিলাম,অবৈধ পথে অন্য দেশে পাড়ি জমানো মানুষ গুলোর দুর্বিষহ অবস্থা। কিন্তু তার পেছনের ঘটনা কি কারো জানা আছে? কত মানুষের সুখের স্বপ্ন, কত শিশুর ক্ষুধার আর্তনাদ, কত না বলা যন্ত্রনা, অভিমান, কত ভয় থেকে পালানোর উপায় হিসেবে আশাহত মানুষ গুলো একটু আলো ভেবে বেছে নেয় এই পথ। মাঝ পথে বারবার মৃত্যু এসে তাদের উপর থাবা বসায়, কেউ বা পরাজিত হয়ে পরিনত হয় জলে থাকা শ্বাপদের খাবারে,আর কেউ বা পা রাখতে পারে অন্যদেশের মাটিতে। কিন্তু সত্যি কি তারা মুক্তি পায়?নাকি আরো কোন বিপদ অপেক্ষমাণ থাকে সেখানে? উপন্যাসটি শেষ করে সত্যিই আমি বলেছিলাম, এমন বই আমি আগে কখনো পড়িনি

৭। জ্যোৎস্না নিমন্ত্রণ
ঝট করে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। ছেলেটাকে ভড়কে দেব, কঠিন কঠিন কিছু কথা বলব তাকে, চমকানোর প্রহর কেটে গেছে সেই অনেক আগেই, যেদিন বুঝলাম- নগ্ন আর ক্ষুধার্ত হয়েই জন্মেছি আমরা, কিন্তু এই নগ্নতা আর খুদা দিন দিন বেড়েই চলেছে আমাদের। এসব নিয়েই বড় হচ্ছি আমরা ।
চমকানোর আরো অনেক কিছু আছে।’ আমার তত্তে বাগড়া দিল সে, ‘আপনি কি জানেন- আমরা কখনোই বড় হই না, আমরা শুধু শিখি কীভাবে মানুষের সামনে নিখুঁতভাবে অভিনয় করতে হয়।’ ভ্রূ কুচকালাম আমি। কিন্তু সেটা দেখার সুযোগ দিলাম না তাকে। একটু চমকেই উঠলাম- যতটুকু বুদ্ধিমান ভেবেছিলাম বোকাকৃতির এই ছেলেটাকে, তাঁর চেয়ে বেশিই সে। সম্ভবত আরও বেশী। একটু ধাতস্ত হলাম আমি, ‘কিন্তু অভিনয় করেই মানুষ আজকাল বড় হচ্ছে, প্রতিনিয়ত এই অভিনয়কে অনুশীলন করছে।’ পলিথিন থেকে আরেকটা পেয়ারার টুকরো তুলে নিলাম হাতে, ‘জানেন তো, অনুশীলন মানুষকে নিখুঁত করে ।’ কিন্তু কোন মানুষই নিখুঁত নয়।’
পা থামালাম আমি। কৌশলী প্রত্ততুরে মুচকি হাসলাম। কিন্তু ব্যক্তিত্তের ধার না কমিয়ে সরাসরি তাঁর দিকে তাকালাম, ‘কোন মানুষই নিখুঁত নয়, এটা বিশ্বাস করেন আপনি?’ ‘নিজেকে আমি বুদ্ধিমান মনে করি না, সুখী মনে করতে চাই। যারা সন্দেহ প্রকাশ করে তারা বুদ্ধিমান, আর যারা বিশ্বাস করে তারা সুখী।’ মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি আমি, মুগ্ধতা আঁকরে ধরেছে আমাকে। ডান দিকে বাঁক নেয়া রাস্তাটা পেরুতেই পরস্পরের গা স্পর্শ হতে যাচ্ছিল, ছেলেটা থমকে দাঁড়াল। অনাহূত স্পর্শ এড়িয়ে আমি এগিয়ে গেলাম। মুগ্ধতা আরও বেঁড়ে গেল আমার। উদ্দেশ্য প্রনদিত ছুঁতে যাওয়া প্রচলিত কোন ছেলের উপকরণ তাঁর মাঝে খুঁজে না পেয়ে মনটা ভরে উঠলো। কণ্ঠে উচ্ছ্বাস তাঁর, ‘বিশ্বাস ব্যাপারটাই আসলে অন্যরকম। যদি আপনি বলেন, আকাশে দশ হাজার কোটি তারা আছে, সবাই বিশ্বাস করবে তা। কিন্তু সদ্দ রং করা কোন জিনিস দেখিয়ে যদি বলেন, রংটা এখনও কাঁচা আছে, অবিশ্বাস করে সঙ্গে সঙ্গে সবাই সেটা ছুঁয়ে দেখবে।’

৮। অযান্ত্রিক
আপনি এই যে লেখাটায় চোখ রেখেছেন, এখানে বইয়ের সংক্ষিপ্ত ঘটনা লেখা থাকে। কিন্তু এই বইয়ে কোনও সংক্ষিপ্ত ঘটনা নেই। প্রতিটি পর্বই হচ্ছে একেকটা বিশাল ঘটনা। একটু একটু করে যা পড়ে আপনার মনে হবে – এটা কি আমার কথা? না পাশের বাসার। কুন্তলের , না ওপাশের জানালার রাসাদের? অন্যরকম এক ঘােরলাগা মুহুর্তে আপনি নিজেই নিজেকে একসময় বলবেন এটা কি শেষপর্যন্ত একটি ভালােবাসার উপন্যাস? কিন্তু কোথাও তো এক টুকরাে ভালােবাসার কথা নেই! উপন্যাসটা আবার পড়তে শুরু করবেন আপনি!

৯। প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন চা খেতে আসেন আমাদের বাসায়
“প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন চা খেতে আসেন আমাদের বাসায়” বইয়ের সংক্ষিপ্ত কথা:
অবশেষে প্রধানমন্ত্রী এলেন।
চা খেলেন।
গল্প করলেন।
কিন্তু কোনো কোনো দিন-।
না, বাকিটুকু বলতে একটু কঠিনই হচ্ছে। কারণ এই ছোট্ট জায়গাটায় ওই বড় কথাগুলো বলা যাবে না, সম্ভব না। কেবল এটা বলা যায়-
এ রকম উপন্যাস কি কখনো লেখা হয়েছে এর আগে? ব্যস, এটুকুই।
টুকরো টুকরো অকৃত্রিম ভালোবাসা, ছোট্ট ছোট্ট জটিল সম্পর্ক আর প্রতিদিনের এইসব অদ্ভুতুড়ে জীবনযাপন, হঠাৎ নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া- এ রকম কেন হলো, এটা কী হলো! আপনার সেই ভাবনা আর শেষ হবে না।
প্রকৃত পাঠকদের একবার হলেও বইটি পড়া দরকার, তা কেবল নিজের জন্য, যেখানে তিনি তার নিজেকে দেখতে পাবেন কোনো না কোনো অংশে। তারপর আপনার মনে হবে-সত্যি, এটা অন্যরকম একটা উপন্যাস!

১০। যদি কখনো
যদি কখনো- সুমন্ত আসলাম. “ কি চমৎকার একজন মানুষ আপনি ইচ্ছে করলেই কোন প্রজাপতিকে পোষ মানাতে পারেন হাতের মুঠোয়. আকাশ থেকে উজ্জ্বল সপ্তর্ষি টা খসিয়ে টিপ বানাতে পারেন কপালের. একটা নীলাভ দোয়েল দম্পতিকে ডেকে গান শুনতে পারেন তাদের। সুখের সংলাপ ও “ সুমন্ত আসলাম এমনিই। তাঁর লেখার মাধুর্যে চমকে যেতে হয়। লাইনগুলি লিখে রাখতে ইচ্ছে করে। আগে তাঁর সহজ সরল হাসির বই পড়তাম। তাঁর কলাম এর সংকলন পড়তাম। যদি কখনো আরেকজনের পরামর্শে পড়লাম। দন্ত্যন। প্রথমে প্রথমে হিমুর মত মনে হলেও, লেখক বইয়ের পরতে পরতে আমাদের ব্লাকমেইলিং করেছেন। মিশিয়েছেন সেই ফুটপাতের ধারে অন্ধ খালাদের সাথে, খেতে শিখিয়েছেন। বলেছেন সেই ভাত খাবার দৃশ্যটি কিভাবে দেখতে হয়। আমরা দেখেছি। চৈতির মত কাউকে মনে রেখেছি। দন্ত্যন কিন্তু সমাজ বিমুখ নয়। কিন্তু তাঁর একটা ……আছে। সে তাই বলে চলেছে আশেপাশে চলা অপরাধের কথা। বলে চলেছে কেন এরকম হচ্ছে। কেন মেনে নিতে পারছিনা। বারবার হয়তো পড়বো না, কিন্তু যতক্ষন পড়েছি ততক্ষন মনে হয়েছে-সুমন্ত আসলাম যেন মনের কথা বলছেন। কতকিছু দেখেও যেন না দেখি আমরা। সত্যি বলতে আমার ক্যান্সার হাসপাতালের সামনেও কিন্তু সেই পা কাটা মহিলা টা হুইল চেয়ারে বসে থাকে। সবসময় হাসতে থাকে। দারোয়ানরা মাঝে মাঝে তাড়িয়ে দেয়। তাঁর হাসির কারন কোনদিন বের করতে চেষ্টা করিনি। ভেবেছি পাগল। আরে আমি ডাক্তার না-আমার একটা ভাব আছেনা। !!! বইটা হিমু পরিবহনের নবীন সদস্যকে দেবার জন্য নেয়া। দেবার আগে পড়ে নেয়া। যাকে বই দিলাম তাঁর মনের মধ্যেও যদি একই প্রশ্ন জাগে,। “ইমেলদা গেটস, প্রিয়াংকা চোপড়া, রবিন বিয়ান্না কেন্টি-তারা জীবনে যত আনন্দই পাক না কেন, ফুটপাতে বসে দামি কফি খাওয়ার আনন্দ পাবেন না কখনো।” প্রাণ খুলে হাসতে থাকে চৈতী। পাঠক হিসেবে সেই হাসির সাথে আমি ও হাসতে থাকি।
সুমন্ত আসলামের ১০ টি উপন্যাস একসঙ্গে পেতে ক্লিক করুন !
comments (0)