হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তাঁকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়।সাবলীল ঘটনার বর্ননা আর সহজ ভাষায় লেখার কারণে হুমায়ুন আহমেদের বই এর তুলনা নেই। হুমায়ূন আহমেদ একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও হুমায়ূন আহমেদ সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। হুমায়ুন আহমেদের বইসমূহ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত।
আসুন জেনে নেই হুমায়ূন আহমেদ এর সেরা ৭ বই সম্পর্কে, যেগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে

IN BLISSFUL HELL
হুমায়ূন আহমেদের প্রথম লেখা উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে‘র ইংরেজি অনুবাদ করেছে মুহাম্মদ নুরুল হুদা। প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশনী। অনূদিত বইটির লিঙ্ক এখানে
বইটি নিয়ে শামসুর রহমান লিখেছিলেন যখন ” হুমায়ূন আহমেদের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশিত হয়, তখন আমি দৈনিক বাংলার একজন সহকারী সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলাম।
বইটি পড়ে আমার এত ভালো লেগেছিল যে, স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আমি আমার কলামে সেই বইয়ের একটি নাতিদীর্ঘ আলোচনা করি। সেদিনই আমার মনে হয়েছিল, আমাদের কথাসাহিত্যে একজন নতুন কথাশিল্পীর আবির্ভাব ঘটেছে”

Flowers Of Fame
‘আগুনের পরশমণি’ হুমায়ূন আহমেদের অতি বিখ্যাত মুক্তিযুদ্ধের ওপর লেখা একটি বই। এই বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছিল আমি যেন ফিরে গেছি সেই ১৯৭১ সালে! নিজেকে মনে হচ্ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধের এক চাক্ষুস সাক্ষী। এই উপন্যাসের একেকটি চরিত্র যেন বাংলাদেশের সব মানুষরই প্রতিচ্ছবি!
এই গল্পের মূল চরিত্র হল মতিন সাহেব এবং তার পরিবার। তিনি এক স্বল্প বেতনের চাকুরে। মুক্তিযুদ্ধের বিভীষিকার মধ্যে স্ত্রী ও ২ মেয়ে নিয়ে নিদারুন আতঙ্কে দিন কাটে তার। কিন্তু, এই বিপদের মধ্যেও তিনি নিজ বাড়িতে ঠাই দেন এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধার। সে হল তার এক বন্ধুর ছেলে বদি। বদিকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের প্রবল আপত্তি থাকা সত্ত্বেও পরবর্তীতে এই বদিই হয়ে উঠে এই পরিবারের এক অতি আপনজন।
আজকের তরুণ প্রজন্ম যদি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেতে চায়, তবে তার উচিৎ অবশ্যই এই ‘আগুনের পরশমণি’ বইটি পড়া। কারণ এই একটি বই ই পারে তাকে মুক্তিযুদ্ধের মহাত্মতা সম্পর্কে ধারণা দিতে। তাকে উৎসাহিত করবে এই বিষয়ের উপর আরও বই পড়া ও জানার জন্য। হুমায়ূন আহমেদের প্রথম চলচিত্র এই বইটির কাহিনী অবলম্বনে তৈরি। বইটির ইংরেজী অনুবাদের লিঙ্ক এখানে

A Few Youths In the Moon
জনপ্রিয় উপন্যাস ‘চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক’ এর ইংরেজি অনুবাদ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এম. হারুনুর রশিদ এর অনুবাদ প্রকাশ করেছে সময় প্রকাশনী। বইটি নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেনঃ আমার ইচ্ছা ছিল খুব আনন্দময় একটি গল্প লিখব। কয়েকজন যুবক চাঁদের আলোয় পথে পথে হাঁটছে, হইচই করছে এই নিয়ে গল্প। লিখতে লিখতে অন্যরকম হয়ে গেল। এই কারণেই আমি কখনও বিশেষ কোনো পরিকল্পনা মাথায় রেখে লিখতে বসি না। সব সময় দেখেছি যা লিখতে চাই তা লিখতে পারি না। যা লিখতে চাই না তা লিখে ফেলি। আমার জন্যে লেখালেখির পুরো ব্যাপারটাই কেমন এলোমেলো।

Zero
এটাও সায়েন্স ফিকশন। তাঁর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ‘শূন্য’ এর ইংরেজি অনুবাদ। প্রকাশ করেছে প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা। বইটির ভুমিকায় হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেনঃ আমাদের চারপাশের চেনা জগৎ এবং চারপাশের বাইরে অচেনা জগৎ নিয়ে আমার নিজের কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে। মাঝে মাঝে আমার অনিন্দ্রা রোগ হয়। বাসার সবাই ঘুমিয়ে থাকে আমি বারান্দায় বসে সিগারেটের পর সিগারেট টেনে হার্ট, ফুসফুসের যত রকম ক্ষতি করা সম্ভব ক্ষতি করতে থাকি। আর তখন অদ্ভুত সব চিন্তা-ভাবনা আসতে থাকে। মনে হতে থাকে- আমাদের এই শরীরের ভেতর আছে আরেকটি শরীর, আমাদের এই জগতের ভেতরে আছে আরেকটি জগৎ। সেই জগৎ সম্পর্কে লিখলে কেমন হয়?
শূন্য নামের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখার এই হল ‘শানে নজুল।’ শূন্য বইটিতে যুক্তির চেয়ে কল্পনাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখার সময় লেখককে সচেতনভাবে কল্পনা পরিহার করে যুক্তিতে থাকার চেষ্টা করতে হয়। আমি কখনো তা পারি না। আমি শ্রদ্ধা করি- যুক্তি, কিন্তু ভালবাসি-কল্পনা। আর এটা তো জাগতিক সত্য ভালবাসার এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে ভালবাসাই জয়ী হয়।
আমার এই কল্পকাহিনী যদি পাঠক-পাঠিকাদের কিছুটা হলেও দ্বিতীয় জগৎ সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে তাহলেই আমার অনিদ্র রোগে রাত জাগা সফল হবে। জয় হোক অনিদ্রার।

Equation Fiha
জনপ্রিয় সায়েন্স ফিকশন ‘ফিহা সমীকরণ’ এর ইংরেজি রূপ প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। ভবিষ্যতের কোন এক সময়ে, মানবজাতি দুই ভাগে বিভক্ত। এক ভাগে টেলিপ্যাথি আর মাইন্ড কন্ট্রোল এর ক্ষমতা সম্পন্ন মেন্টালিস্ট আর আরেক ভাগে সাধারণ মানুষের দল। যে দল সবচাইতে বেশি শক্তিশালী প্রকৃতিতে তারাই টিকে থাকবে, বাকিরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিজ্ঞান পরিষদ প্রধান ফিহা একাই লড়ে চলেছেন মানুষের পক্ষে, মানুষ যাতে টিকে থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে তার। কিন্তু মেন্টালিস্টরা কি তাকে সেই কাজে সফল হতে দেবে? এটাই ছিলো বইটির মূল কথা।

To The Woods Dark And Deep
হুমায়ূন আহমেদ এর অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস ‘সবাই গেছে বনে’র ইংরেজি অনুবাদ করেছেন ফারিহা সুলতানা। প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। আমেরিকা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান লাভের জন্য চমত্কার একটি বই । বইটিতে জানা যাবে আমেরিকার বিভিন্ন কালচার । লেখক বইটিতে বাংলাদেশকে আমেরিকার সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন । যারা একটুতেই বাংলাদেশকে নিয়ে হতাশ হয়ে যান বিশেষকরে তাদের বইটি পড়া উচিত । আমরা পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় কত বেশী মানসিক শান্তিতে আছি বইটি পড়লেই পাঠক তার বিচার করতে পারবেন । জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে চাইলে বইটি পড়ে দেখতে পারেন ।
হুমায়ূন আহমেদের প্রকাশিত নির্বাচিত সকল বই এই লিঙ্কে

Love You All
তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ সায়েন্স ফিকশনে সায়েন্স এর চেয়ে মানবিক আবেগের প্রাধান্য বেশি। অবশ্য হুমায়ূন আহমেদ এর বেশিরভাগ সায়েন্স ফিকশনেই তাই। প্রকাশ করেছে প্রতীক প্রকাশনা সংস্থা।
১৯৭২। বাংলাদেশের ক্রান্তিকাল। মাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের চারদিকে হাহাকার। এমন একটা সময়ে একদম যুবক বয়সে হুমায়ুন আহমেদ লিখেছিলেন ‘তোমাদের জন্য ভালবাসা’। নাম শুনলে বুঝার উপায় নেই এটা কি ধরনের বই। কিন্তু প্রথম প্যারা পড়লেই হটাৎ শির শির অনুভুতি হয়। মনে হয় পৌঁছে গেছি সহস্র বছর পরের কোন এক বিজ্ঞানময় জগতে। এটা হল হুমায়ুন আহমেদ তথা বাংলাদেশের সাহিত্যের প্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী— বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর দিকপাল ‘তোমাদের জন্য ভালবাসা’ উপন্যাস।
হুমায়ূন আহমেদ বোধকরি জন্মগত মুন্সিয়ানা নিয়েই জন্মেছিলেন। এই লেখা লেখার সময় তার বয়স খুব কি বেশি ছিল? তিনি তখন বাইশ বছরের তরুণ। কিন্তু কি আশ্চর্য লেখনি। প্রথম লাইন থেকে টানটান উত্তেজনার মাঝে টেনে নিয়ে গেছেন। দেশ-কাল উল্লেখ না করে— শুধু মাত্র পৃথিবীর মানুষের জন্য সকল বিজ্ঞানীদের সম্মেলনের ঘটনা দিয়ে গল্পের শুরু। আপনাদের মনে খটকা লাগতে পারে— যে এর আগে পরে ও তো অনেক লেখক এভাবে পৃথিবীর রক্ষার ভার হাতে তুলে নিয়ে নিজেই সৃষ্টি করেছেন এক একটি চরিত্র। এইচ জি ওয়ালস বা পূর্ববর্তী অনেকেই। কিন্তু বাংলায় হুমায়ূন আহমেদ এখানে প্রথমবারের মত সৃষ্টি করেছেন এমন এক পরিবেশ যা বাংলাদেশি সাহিত্যের প্রথম। এবং প্রথমবারেই তিনি ছিলেন শতভাগ সফল।
হুমায়ূন আহমেদের বেস্টসেলার সবগুলো বইয়ের লিঙ্ক
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অবস্থা খুব আশা জাগানিয়া। বাংলাদেশর সাহিত্যকে স্থান করে নিতে হলে আরও বেশি মৌলিক বাংলা গ্রন্থের অনুবাদ দরকার। হুমায়ূন আহমেদ এর বই হতে পারে তার আদর্শ নমুনা।
১০ খন্ডে হুমায়ূন রচনাবলী মাত্র ৬৪০০ টাকায়
আরও পড়ুনঃ
অমুসলিম লেখকদের ইসলাম নিয়ে যে ৪টি বই আপনাকে চমকে দেবে
মিসির আলি – রহস্যময় কাল্পনিক চরিত্রটির খুঁটিনাটি !
মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর যুদ্ধজীবন ও কিছু অজানা কথা !