আসিফ মেহ্দী তার পাঠক মহলে বিভিন্ন পরিচয়ে পরিচিত। বিশেষ করে রম্য, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি, উপন্যাস আর ন্যানো কাব্য-এই চার শাখাতে তিনি পাঠকপ্রিয় হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী তাকে পাঠক সমাজে বিশেষ স্থান করে দিয়েছে। একের পর দারুন দারুন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখে জয় করেছেন অসংখ্য পাঠকের মন। পেশায় তিনি বাংলাদেশ বেতারের গবেষণা ও গ্রহণ কেন্দ্রে সহকারী বেতার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করলেও আত্মিক টানে লিখে চলেছেন একের পর এক বই এবং বাংলাদেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন কিশোর আলো’, ‘বিজ্ঞান আনন্দ’ ও ‘বিজ্ঞান চিন্তা’তে। তিনি মোট ১৪ টি বই লিখেছেন এবং এর মধ্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সংখ্যা ৬ টি।
তরু-নৃ

২০১৭ সালের বই মেলায় প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর নাম তরু-নৃ। বইটি প্রকাশের পর পাঠক সমাজ থেকে পেয়েছেন অসংখ্য প্রশংসা। বইটি পড়তে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় অন্যরকমভাবে চিন্তা করার সুযোগ মিলবে। বইটি পড়তে গিয়ে জানা যাবে, চিরতারুণ্যের ঔষধ ‘মহাতরল’-এর প্রস্তুতপ্রণালি উদ্ভাবনের পর বৃক্ষবিজ্ঞানী নটরাজ গুম হয়ে যান! ‘মহাতরল’
তৈরি করার জন্য এবং বৃক্ষবিজ্ঞানীর খোঁজে অভিযান শুরু করে এক তরুণ বিজ্ঞানী। ঘটতে থাকে একের পর এক আধিভৌতিক, অকল্পনীয়, অপ্রত্যাশিত ও রোমাঞ্চকর ঘটনা! এসব কাহিনির ঘটনাস্থল এদেশেরই একটি দ্বীপ-সন্দ্বীপ! তরুণ বিজ্ঞানী অভিযানের পথে সংগী হয় মিলি এবং তরুন বিজ্ঞানীর বন্ধু তাজোয়ার। বইটি পড়তে গিয়ে মনে হবে কি নেই এতে। রম্য ও রোমান্স, তেমনি আছে ভয়-গুম-খুনসহ ভিন্ন ধাঁচের অ্যাডভেঞ্চার। পড়তে পড়তে মনের অজান্তেই উত্তেজিত হয়ে জানতে ইচ্ছে হবে কি হতে যাচ্ছে শেষ মুহুর্তে।
ট্রুপিটু:পৃথিবীর মহাবিপদ
পৃথিবীজুড়ে নেমে এসেছে নীরবতা! রাস্তাঘাটে, অফিস-আদালতে, মাঠে-ময়দানে, শপিংমলে বা সিনেমাহলে কোথাও কোনো মানুষ নেই। যাদের ভাগ্য ভালো, তারা মৃত্যুরোগে আক্রান্ত না হয়েই বাসা পর্যন্ত পৌঁছতে পেরেছে। আর যাদের ভাগ্য খারাপ, তারা ভয়ংকর অসুখটির খপ্পরে পড়েছে এবং বমি করতে করতে মারা যাচ্ছে। কেউ পথেই মারা যাচ্ছে; আবার কেউকেউ বাসায় যাওয়ার পর আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারটি বুঝতে পারছে। তাদের মৃত্যু ঘটছে বাসাতে; প্রিয় মানুষগুলোর চোখের সামনে। বিভীষণ মৃত্যুফাঁদে পৃথিবীবাসী! এই মহাবিপদে পড়ে পৃথিবী কি মানুষহীন ধুধু গ্রহে পরিণত হতে যাচ্ছে; নাকি এ থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে পাবে মানুষ-সেটিই এই বইতে ফুটে উঠেছে আসিফ মেহ্দীর চমৎকার লেখনীর মাধ্যমে।

(লেখকের কথা):আমি কখনো মিস করিনি। এই গুণটি আমার মধ্যে ছিল না। কিন্তু আজ ঘোরলাগা সন্ধ্যায় আমার কিছু একটা হয়েছে! আমি মিস করতে শুরু করেছি। এক একটি সেকেন্ড গড়াচ্ছে আর আমার মিস করার পরিমাণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। ছোট্ট এই জীবনে মিস করার মতো এতশত কিছু আমার আছে, তা আমি কল্পনাও করিনি।
আমি মিস করছি আমার শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যকে, আমার বাবা-মা-আপনজনদের, আমার একান্ত মুহূর্তগুলোকে, সর্বোপরি ভয়াবহভাবে মিস করছি আমার জন্মভূমি বাংলামাকে। মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর আমি পাড়ি জমাতে যাচ্ছি বিদেশে। ঘোরলাগা এমনই এক সন্ধ্যায় লিখছি নতুন সায়েন্স ফিকশন উপন্যাসের ভূমিকা।
এই বইয়ের মাধ্যমে আমি পরিচয় করিয়ে দিতে চাই ‘মহাবিজ্ঞানী সাফি’র সঙ্গে। মহাবিজ্ঞানীর কাহিনি পড়ে পাঠকবন্ধুদের মনোজগতে ঘোরলাগা তৈরি হলে মনে করব আমার শ্রম অচেনা কৃষ্ণগহ্বরে হারিয়ে যায়নি।
হিগস প্রলয়
২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় আসিফ মেহে্দীর আরোও একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হিগস প্রলয়। বইটি পড়ে জানা যাবে, মহাবিশ্ব ধ্বংসের এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন এক বিজ্ঞানী।

তাই তাকে ধরে নিয়ে গেছে বিদেশী কমান্ড দলের সদস্যরা। সেই বিজ্ঞানীকে বাচানোর জন্য এবং মহাবিশ্বকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী দিদার, বুয়েটের ছাত্র তুর্য এবং অন্যজগৎ থেকে আসা আরেক বিজ্ঞানী তাদের অভিযান শুরু করল। প্রথম পড়তে গিয়েও এই বইটিকে হয়ত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী মনে হবে না আর এখানেই লেখকের সার্থকতা। অনেকখানি ভয়, উত্তেজনা দিয়ে বইটি এগিয়ে যেত থাকবে। উনারা কি পারবেন ঐ বিজ্ঞানীকে রক্ষা করতে?? পারবেন কি মহাবিশ্বকে বিপদমুক্ত রাখতে??
ফ্রিয়ন
২০১২ সালে প্রকাশিত হয় আসিফ মেহেদীর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ফ্রিয়ন। সিডনি অপেরা হাউস, অস্ট্রেলিয়া, ২৭ মে ২০৩৭, সন্ধ্যা ৭ টা:

সিডনি অপেরা হাউসের ‘কনসার্ট হল’ কানায় কানায় পূর্ণ! কারণ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী লিসা সানারা আজ গান গাইবেন এখানে। বুলগেরিয়ান এই শিল্পী জন্ম দিয়েছেন গানের নতুন এক ধারা: ‘তালোহা’।
‘তালোহা’ সংগীতের সঙ্গে বাজানো হয় এমন এক আবেশী সুর যার মূর্ছনায় শ্রোতারা হারিয়ে যান অতীতে। তাদের স্মৃতিপট উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ! স্মৃতির ভিন্নতায় কেউ কাঁদেন, কেউ হাসেন। সেসময় সৃষ্টি হয় এক ঐন্দ্রজালিক পরিবেশ!
ঠিক ৭ টা ১৫ মিনিটে স্টেজ বিদীর্ণ হয়ে নিচ থেকে বেরিয়ে এল স্পেসশিপের আদলে তৈরি ছোট্ট একটি মডেল শিপ। মডেল স্পেসশিপটি স্টেজ থেকে কিছুটা ওপরে উঠে ভাসতে থাকল। স্টেজের ফাঁকা অংশটুকু জোড়া লাগার পর সেটা স্টেজে নেমে এল। সেই শিপ থেকে স্টেজে নামলেন লিসা সানারা।
সানারার ড্রেস-আপ, হেয়ার স্টাইল, সাজ-সজ্জা, হাঁটার ভঙ্গি, কথা বলার ভঙ্গি – সবই ভক্তরা পাগলের মতো অনুকরণ করে। যারা সানারাকে দেখেছেন, তাদের অনেকেই বলে থাকেন লিসা সানারার মতো সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোনো মেয়ের নেই! অপ্সরীর মতো দেখতে এই গায়িকা সবার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছেন। ভক্তরা সবাই যেন এক ইন্দ্রজালে আটকা পড়েছে! তারা যেন সম্মোহিত হয়ে তাদের প্রিয় তারকার দিকে ছুটে চলে যেতে চাইছে, উচ্ছ্বাসে কেউ মাতোয়ারা হয়ে আছে, কেউবা অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে শুধু তাকিয়েই আছে! কিন্তু সানারাকে আজ খুব বিষণ্ন দেখাচ্ছে। তিনি অন্যমনস্কভাবে সবার প্রতি হাত নেড়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বাদ্যযন্ত্রগুলো ‘তালোহা’ সংগীতের আবেশী সুর তুলেছে।
সানারা কণ্ঠ দিলেন। শ্রোতারা গানের সুরের জাদুতে হারিয়ে যাচ্ছেন অতীত থেকে অতীতে। কারও চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরছে, কেউ ভেউভেউ করে কাঁদছেন, আবার কেউ লাজুকভাবে হাসছেন!
পুরো হলভর্তি শ্রোতারা যখন স্মৃতির গভীরতায় ডুবে যাচ্ছেন, তখন সানারা এক ভয়ংকর কাণ্ড ঘটিয়ে বসলেন। তিনি তাঁর পরিহিত হাঁটু পর্যন্ত উঁচু বুটজুতার মধ্যে হাত ঢুকিয়ে একটা চকচকে ধারাল ছোরা বের করে আনলেন। তারপরের ঘটনা যারা খেয়াল করলেন, তারা সবাই হতভম্ব হয়ে গেলেন!
খানিকক্ষণের মধ্যেই পুরো ‘কনসার্ট হল’ যেন থমকে গেল! বুটজুতার মধ্যে লুকিয়ে রাখা ছোরাটা বের করে সানারা নিজের পেটে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তিনি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না; স্টেজে লুটিয়ে পড়লেন। পেট থেকে গলগল করে রক্ত বের হয়ে স্টেজ ভরে গেল। সানারা যন্ত্রণায় কিছুক্ষণ ছটফট করলেন, হাত-পা ছোড়াছুড়ি করলেন। আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই শিল্পীর মৃত্যু হতে খুব বেশি সময় লাগল না।
কেউ জানে না, সানারার মনে কী এমন দুঃখ ছিল যেজন্য তাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো। আসলে কারও জানা নেই, আপাতদৃষ্টিতে আত্মহত্যা মনে হলেও এটি আসলে হত্যাকাণ্ড! মহাজাগতিক ভয়ংকর এক ষড়যন্ত্রের বলি দুনিয়া কাঁপানো এই তারকা। কি ছিল এই মৃত্যুর কারন?? জানা যাবে বইটি পড়লে।
হ্যালু-জিন
২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় আসিফ মেহ্দী এর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী হ্যালু-জিন।

আটটি ছোট বৈজ্ঞানিক গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয় বইটি। বেশ এক্সাইটিং আটটি গল্প বইটিকে একটা অন্যরকম মাত্রা যোগ করেছে। গল্পগুলো হলো- নীল/ পৃথিবীর মহাবিপদ / অন্যরকম অ্যাডভেঞ্চার/ হ্যালু-জিন/ গ্রহাণু/ মহাভুল/ সাফারি পার্ক/ মাছিম্যান। গল্পের নাম শুনেই বোঝা যায় গল্পে আছে অন্যরকম বৈজ্ঞানিক অ্যাডভেঞ্চার।
আসিফ মেহ্দী এর বইগুলো পড়তে পড়তে আপনি হারিয়ে যাবেন কল্পনার অন্য কোন এক রাজ্যে, কল্পনায় হারিয়ে বোধ ও বাস্তবতার স্বাদ পেতে আপনার অবশ্যই এই সায়েন্সফিকশন গুলো পড়া উচিত।
আসিফ মেহ্দী এর বই সমূহ
1 thought on “আসিফ মেহ্দীর যে ৫ টি সায়েন্সফিকশন আপনার অবশ্যই পড়া উচিত !”
Pingback: বাংলায় সায়েন্স ফিকশনের ইতিহাস - রকমারি ব্লগ