দীর্ঘ ২৫ বছরের গবেষণার ফসল হিসেবে মুজিববর্ষকে সামনে রেখে কথাপ্রকাশ থেকে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে শেখ সাদীর লেখা ‘বঙ্গবন্ধু অভিধান‘ বইটি। জানা-অজানার ভীড়ে অন্তরালে থাকা নানা খুঁটিনাটি তথ্য ও সময়ের ইতিহাসকে ঘিরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ অভিধান এটাই প্রথম। বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সমগ্র জীবন এবং সেই সাথে তাঁর চারপাশের ঘটনা, ৫৫ বছরের জীবনে জনপদে ঘটে যাওয়া নানা বিষয়, দাঙ্গা, দেশভাগ, ভাষা সংগ্রাম, ছয় দফা, মুক্তিযুদ্ধ, ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্র ও নৃশংসতাসহ অনেক জানা-অজানাই ধারণ করে আছে বইটি, যা এমনভাবে আর কোথাও গ্রন্থিত হয়নি। জন্মশতবর্ষে এই বইটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। জীবনীসাহিত্য এবং বাঙালির ইতিহাসে নিঃসন্দেহে শেখ সাদীর এক মূল্যবান সংযোজন বলা চলে একে।
লেখক শেখ সাদী পেশায় সাংবাদিক ও নেশায় গবেষক। তিনি জানেন, সাহিত্যের সত্য, ইতিহাসের সত্য আর জনজীবনের সত্য আলাদা। তাই তাঁর কাছে খোঁজাটাই আসল। সেই খোঁজ থেকে বঙ্গবন্ধুর অন্যরকম এক জীবনের খোঁজ দিয়েছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষকে সামনে রেখে আয়োজিত একুশে বইমেলা ২০২০-এ।
বইটিতে খুঁজে পাওয়া যাবে রাজনীতি ও কর্মের বাইরের বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধুর উচ্চতা কত ছিল? কেমন ছিল তাঁর জন্মক্ষণ? গ্রহ-নক্ষত্রের বাছবিচারটাই বা কি ছিল? এমন খুঁটিনাটি অজানা তথ্য নিয়ে শেখ সাদী গবেষণা করেছেন দীর্ঘ ২৫ বছর। তাতে ধরা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৫৫ বছরের জীবন এবং তাঁর চারপাশ। দিনপঞ্জী মেনে বঙ্গবন্ধুর সারাটা জীবন উঠে এসেছে ‘বঙ্গবন্ধু অভিধান‘ বই এর মলাটের ভেতর। সেসকল ঘটনার ভেতরে যেমন বঙ্গবন্ধু আছেন, তেমনি আছে তাঁর জনপদ।

বইটির শুরুটাও বেশ চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয়। ১৯২০ সালে এই মহান নেতার জন্মতিথি কেমন ছিল- তিথি নক্ষত্রের হিসেবসহ এমন নিখুঁত বিবরণ হয়তো আর কোনো বইতেই পাওয়া যাবে না। ঠিক তার পরেই দেখা মিলবে বঙ্গবন্ধুর নামকরণের ইতিহাস ও নামের অর্থের বর্ণনা। তার কী কী ডাকনাম ছিল এবং সেসব নামের পেছনের ইতিহাস কী ছিল তা-ও জানা যাবে সেখান থেকে। টুঙ্গিপাড়ার শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী হয়ে ওঠেন সেই গল্প উঠে আসে। গল্পের ছকে ধরা দিয়েছেন একে একে পরিবারের সকলেই। মা, বাবা, ভাই, বোন- প্রত্যেকেই চিত্রায়িত হয়েছেন লেখকের বর্ণনায়। চিত্রায়িত হয়েছে শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাম টুঙ্গিপাড়া।
শুধু গ্রামের বর্ণনাই নয়, গ্রামের নামের পেছনের গল্পও উঠে এসেছে বইটিতে। সেখান থেকে একটু সামনে এগোলেই চোখের সামনে ভেসে উঠবে মহান এ নেতার গ্রামের বাড়ি, লেখকের অসাধারণ লেখনীর মধ্য দিয়ে। এরপর একে একে আসতে থাকবে সেই জন্মসালে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক ঘটনা ও সেসবের বর্ণনা। লীগ অব নেশনস এর প্রতিষ্ঠা, অসহযোগের ইশতেহার, খিলাফতের ইশতেহার, মিরাটে খিলাফতের অধিবেশনে গান্ধীজীর বক্তব্য, খিলাফতের আন্দোলন, চার দফা- একে একে সব তারিখ অনুযায়ী নিয়মমাফিক চোখের সামনে আসতে থাকবে বইটির ভেতর।
এরপর কী আসবে? সেটা জানার জন্যই আপনাকে পড়তে হবে অসাধারণ এই বইটি, যার মধ্য দিয়ে জানা যাবে একজন বঙ্গবন্ধুকে, যিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন প্রতিটি বাঙালির জীবনেই।
এই ব্লগটি লিখেছেন সিরাজাম মুনিরা তুলি
comments (0)