সফল হওয়ার জন্য কেন পড়বেন?
বই পড়ার সঙ্গে কি সফলতার কোনো সম্পর্ক আছে? আছে নিশ্চয়ই। কারন বিশ্বজুড়ে যারা সফল মানুষ তারা প্রত্যকেই প্রচুর বই পড়েন। যেমন, মার্কিন উদ্যোক্তা ওয়ারেন বাফেট প্রতিদিন অন্তত ৫০০ পৃষ্ঠা পড়েন। বিল গেটস শুধু পড়েনই না, তাঁর পড়া বইগুলো নিয়ে নিজের ব্লগে নিয়মিত লেখেন। অন্য দিকে অনেক মানুষও অনেক আছেন, যাঁরা প্রচুর বই পড়েন, কিন্তু সফল নন। তাহলে? বই পড়া শুধু নিছক আনন্দের মাধ্যম না হয়ে তা থেকে যদি শেখা যায় তাহলে তো সেটা বোনাস। আর আপনি যদি কর্মক্ষেত্রে নিজেকে আরোও একটু উন্নত করতে চান, আরোও বেশী কর্মক্ষম হতে চান এবং নিজের ভিতর চিন্তা ভাবনায় পরিবর্তন আনতে চান তাহলে জানার চেষ্টা করাটাই হতে পারে মূল লক্ষ্য।
এমন লক্ষ্যগুলো সামনে রেখেই বিভিন্ন প্রকাশনী স্কিল ডেভেলপমেন্টের প্রাথমিক বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বেশ কিছু বই প্রকাশ করেছেন, যারা ব্র্যান্ড, মার্কেটিং কিংবা সেলস নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য রকমারি ডট কম এর বেস্টসেলার তালিকা থেকে নির্বাচিত বইগুলোর বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা তুলে ধরা হলো। এসকল বই কর্পোরেট সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট পাঠকসমাজকে বেশ আকৃষ্ট করেছে এবং এসব বিষয়ের উপর বিশদভাবে জানতে এই বইগুলো কিনছেন অনেক পাঠক। তবে এর মধ্যে এই বিষয়গুলোর উপর কিছু বই জনপ্রিয়তা ও বিক্রির পরিমাণের দিক থেকে ছাড়িয়ে গিয়েছে বাকি সবগুলোকে।
৭. ফেইলিওর ইন সেলস : বিক্রয়চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
এই বছরের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং, বিপণন ইত্যাদি বিষয়াদির বইগুলোর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় ও বিক্রিত বইগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘ফেইলিওর ইন সেলস : বিক্রয়চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কারণ ও প্রতিকার’। এই বইটি লিখেছেন বিশিষ্ট ক্যারিয়ার, বিক্রয় ও বিপণন বিষয়ক লেখক মোঃ আব্দুল হামিদ।

‘স্বরে অ’ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত এই বইটিতে লেখক কর্পোরেটসহ বিভিন্ন সেক্টরে সেলস এর ক্ষেত্রে কীভাবে একজন নানা সমস্যা ও ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে পারেন সেগুলো তুলে ধরেছেন। যেকোনো বিক্রয়চেষ্টা ব্যর্থ হলে তার নেপথ্যে কারণ কী কী হতে পারে তা লেখক তুলে ধরেছেন এই বইটিতে। এসকল সমস্যা প্রতিকারের মাধ্যমে কীভাবে সেলসের ক্ষেত্রে প্রভূত সফলতা অর্জন করা সম্ভব তার উপায়ও লেখক সূচারুরূপে ফুটিয়ে তুলেছেন বইটিতে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেলসসহ প্রোডাকশন, মার্কেটিং ইত্যাদি বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা ব্যক্তিদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে এই বইটি বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
৬. ইমোশনাল মার্কেটিংঃ কাস্টমারকে আজীবন ধরে রাখার উপায়।
মার্কেটিং তো সবাই করে কিন্তু ইমোশনাল মার্কেটিং কয়জনেই বা করতে পারে? মার্কেটিং নিয়ে তোলপাড় সারা বিশ্বে। কিন্তু নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের মার্কেটিং বিষয়ে জ্ঞান দেওয়ার নেই কেউ। ইমোজি দিয়েই যে করে ফেলা যায় ইমোশনাল মার্কেটিং তাই বা ক’জনের জানা? ধর্মীয় আবেগের মাধ্যমে করা যায় মার্কেটিং। খালি সেল সেল করলে কি হবে, মার্কেটিংয়ের যথাযথ ব্যবহার জানতে হবে। জানতে হবে কাস্টমার আজীবন ধরে রাখার টেকনিক। এই বিষয়ের উপর বাংলা ভাষায় বই সংখ্যা নেই বললেই চলে। এজন্য মুনির হাসান লিখেছেন ইমোশনাল মার্কেটিং। বইটি আদর্শ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে।

ইমোশনাল মার্কেটিং-টা আসলে কি কোন কাজে লাগে? এটা নিয়ে কি কোন কিছু করা যায়? এটা নিয়ে কি আগানোর কোন সুযোগ আছে? এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এই বইয়ে। এই বই নিয়ে দেখুন মুনির হাসান এবং মাহমুদুল হাসান সোহাগের আলাপচারিতা।
৫. ব্র্যান্ডিংয়ের অ আ ক খ (মার্কেটিয়ার, গবেষক ও শিক্ষকের অভিজ্ঞতায়)
বিক্রয়, বিপণন ও ব্র্যান্ডিং বিষয়ের বইগুলোর মধ্যে যে বইগুলো সর্বাধিক পাঠকনন্দিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম আরেকটি বই হলো সালেহীন চৌধুরী রচিত ‘ব্র্যান্ডিংয়ের অ আ ক খ (মার্কেটিয়ার, গবেষক ও শিক্ষকের অভিজ্ঞতায়)’
বইটি লেখক সালেহীন চৌধুরীর লেখা প্রথম বই হলেও ব্র্যান্ডিং এর বিভিন্ন বিষয় বইটিতে ফুটিয়ে তুলতে তিনি বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ব্র্যান্ডিং এর প্রাথমিক জ্ঞানসমূহ, ব্র্যান্ডিং সম্পর্কিত বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজি, ব্র্যান্ডিং বিষয়ক অভিজ্ঞ গাইডলাইন ইত্যাদি সবকিছুই লেখক তুলে ধরেছেন তাঁর এই বইতে। কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের বাজারে আনা নতুন পণ্য প্রমোশনের বিভিন্ন দিকও উঠে এসেছে বইটিতে। একজন দক্ষ মার্কেটিয়ার হিসেবে এসকল বিষয় সম্পর্কে লেখক তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছেন এই বইয়ে, যা কর্পোরেট সেক্টরে ব্র্যান্ডিংয়ে কর্মরত ব্যক্তিদের বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে।

৪. ব্রেইনফ্লুয়েন্স : দ্য সাইকোলজি অব মার্কেটিং
এই তালিকায় স্থান করে নেয়া আরেকটি বই হলো মার্কেটিং এর উপর বিশদভাবে লেখা ‘ব্রেইনফ্লুয়েন্স : দ্য সাইকোলজি অব মার্কেটিং’। বইটির লেখক মুনতাসির মাহদী, যিনি ইতোপূর্বেও মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে বই লিখেছেন। পেশাদার জীবন ও ক্যারিয়ার উন্নয়ন লেখা এই বইটি পাঠকসমাজে বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে।

কর্পোরেট সহ অন্যান্য সেক্টরে মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। সফল মার্কেটিং এর উপর একটি পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। তাই মার্কেটিংয়ের দায়িত্বে যারা নিযুক্ত থাকেন তাদের উপর থাকে আকাশসম চাপ ও প্রত্যাশা। মার্কেটিং ব্যাপারটি পুরোপুরি নির্ভর করে মার্কেটিয়ারের মনস্তত্বের উপর এবং অন্যদের মনস্তত্ব ঠিকমতো বুঝতে পারার উপরও। বাজার ও ভোক্তাদের মনস্তত্ব বুঝেই আগাতে হয় একজন মার্কেটিয়ারকে, যার জন্য করতে হয় অনেক ব্রেইনস্টর্মিং। মার্কেটিং বিষয়ে ইত্যাদি চিন্তাভাবনা ও মার্কেটিংয়ের বিভিন্ন কার্যকর সাইকোলজি এই বইটিতে তুলে ধরেছেন লেখক।
৩. আমি একজন সেলসম্যান!
তালিকার অপর একটি বই, যেটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং পাঠক ও সমালোচক উভয়ের কাছেই ব্যাপক নন্দিত হয়েছে, তা হলো ‘আমি একজন সেলসম্যান!’। আদর্শ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বিক্রয় ও বিপণন বিষয়ক এই বইটির রচয়িতা হলেন তানভীর শাহরিয়ার রিমন, যিনি একজন ইয়ুথ আইকন এবং পাশাপাশি দেশের অন্যতম শীর্ষ রিয়েল এস্টেট ব্যক্তিত্ব। কর্পোরেট দুনিয়ায় প্রায় ১৭ বছর কাজ করে তিনি অর্জন করেছেন বিশাল অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতাকেই তিনি সূচারুরূপে তুলে ধরেছেন এই বইতে।

কর্পোরেট সেক্টরে বিক্রয় পেশার ক্ষেত্রে যারা ইতোমধ্যে অনেক দূর গিয়েছেন, যেমন- বিভাগীয় প্রধান অথবা শীর্ষ কর্মকর্তা, এই বইটি তাদের জন্য যেমন উপযোগী, যারা সেলস এ পেশাজীবন মাত্র শুরু করেছেন অথবা নতুন চাকরি খুঁজছেন, তাদের জন্যও বইটি একইরকমভাবে উপযোগী। তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্যও অত্যন্ত শিক্ষামূলক ও অনুপ্রেরণাদায়ক হিসেবে কাজ করবে এই বইটি। এই বইটির মাধ্যমে কর্পোরেট সেক্টরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে পাবেন স্মার্টনেস, ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ইত্যাদি সফট স্কিল বৃদ্ধির অনুপ্রেরণা ও উপায়।
২. বিজনেস ইজ নাথিং উইদাউট ব্র্যান্ডিং
২০২০ অমর একুশে বইমেলায় ব্র্যান্ডিং, সেলস ও মার্কেটিং এর উপর সর্বাধিক বিক্রিত ৫টি বইয়ের এই তালিকার শেষ বইটি হলো ‘বিজনেস ইজ নাথিং উইদাউট ব্র্যান্ডিং’। বইটি লিখেছেন মোঃ মাছুম চৌধুরী এবং বইটি প্রকাশিত হয়েছে ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে। নতুন কোনো পণ্য বা সেবা বাজারে আনার ক্ষেত্রে সেটি যাতে উপযুক্ত পরিমাণ ব্যবসাসফল হয় তার ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডিং অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যবসায়ের যেকোনো ক্ষেত্রেই ব্র্যান্ডিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো কিছুরই সফলতা সম্পূর্ণরূপে এর সফল ব্র্যান্ডিং এর উপর নির্ভরশীল, কারণ এটি নির্ধারণ করে পণ্যটি কতটুকু জায়গা করে নিতে পেরেছে সাধারণ মানুষের মনে। আর সফল ব্র্যান্ডিং এর উপায় ও নানা দিক নিয়েই আলোচনা করেছেন লেখক এই বইটিতে।

১. কমিউনিকেশন হ্যাকস
একবিংশ শতাব্দীর সবচেতে গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিল (Soft Skill) হচ্ছে ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন স্কিল (Effective Communication Skill)। অনলাইন এবং অফলাইনে আমাদের কথা-বার্তা পেশাদার পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় হল এই বইটি। এই বইটিতে সাইকোলজি, কমিউনিকেশন এবং প্র্যাক্টিকাল টিপস এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে, টপিকগুলো আজ নিজের লাইফে প্রয়োগ করে দেখলে আপনার জীবনের সার্বিক মান উন্নত হয়ে যাবে। শিক্ষা-জীবন, ক্যারিয়ার এবং সামাজি সম্পর্ক – সব ক্ষেত্রেই কমিউনিকেশন হ্যাকসগুলি আপনার কাজে দিবে।

এই বইগুলো এ ধরনের পেশার সাথে যুক্ত যেকোনো ব্যক্তির দক্ষতা, জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাখতে পারে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা। কারো যদি ক্যারিয়ার গড়ার ইচ্ছা থাকে কর্পোরেট সেক্টরে, তাহলে এই বইগুলো হতে পারে তার জন্য পাথেয়স্বরূপ। আর তার ফলেই তো এই বইগুলো এবারের বইমেলায় বেস্টসেলারের তকমা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ব্র্যান্ডিং, মার্কেটিং-এর সেরা বইগুলো দেখুন
*এই তালিকাটি ২০২০ সালে প্রকাশিত বইয়ের উপর এবং রকমারি ডট কম এর বেস্টসেলার তালিকা, বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে কর হয়েছে। এই ব্লগটি লিখেছেন সিয়াম আলমাস
comments (0)