দীর্ঘ সময় পর সম্পূর্ণ স্থিতিশীল হলো নিশি। ঘটনাটা এতটাই দ্রুত ঘটল যে, শ্বাস নিতে ভুলে গেল সবাই। ডা. সুরাইয়া আতঙ্কিত চোখে নিশিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার মৃগী রোগ আছে নাকি?’
নিশি ডা. সুরাইয়ার কথার উত্তর দেওয়ার আগেই, পাশ থেকে প্রফেসর ফেরদৌসের গলা শুনতে পেলেন তিনি,
‘না! ওর কোনো মৃগী রোগ নেই।’ নিশি, অমল ও ডা. সুরাইয়া লক্ষ্য করলেন প্রফেসর ফেরদৌস ওদের দিকে না তাকিয়ে ঠিক ওদের পেছনের দেয়ালের দিকে ‘হা’ করে অবাক দৃষ্টিতে পলকহীন তাকিয়ে আছেন। প্রফেসরের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেয়ালের দিকে তাকাল ওরা, আর তাকাতেই ত্রাসে চোখগুলো যেন মুখের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসবার উপক্রম হলো সবার।
দেয়ালের উপর অমল ও ডা. সুরাইয়ার ছায়া পড়েছে ঠিকই, কিন্তু নিশির ছায়াটা সেখানে নেই! ব্যাপারটা দেখে নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়াল নিশি,
কিন্তু উঠে দাঁড়াবার পরও নিশি একদম ছায়াহীন!
পেইজ ১২৫

শ্রেয়া চেয়ারে বসতেই অল্প কথায় “কেমন আছেন, ভাল আছি” সেরে নিয়ে সরাসরি আসল কাজে চলে গেল অফিসার ইমন আহমেদ।
ইমনের কথা গুলো বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনতে থাকল শ্রেয়া, কিছুক্ষণ কথা শোনার পর চিন্তায় ভ্রু কুঁচকে গেল তার।
“একজন মানুষকে যদি কেউ ছুরি দিয়ে, গলা কেটে খুন করতে চায়, তাহলে কি হবে, সঠিকভাবে কি হতে পারে সেই মুহূর্তে?
খুনি প্রথমে মানুষটার মুখ নতুবা শরীর, হাত অথবা মাথা, এই ধরনের অঙ্গ গুলি শক্ত করে চেপে ধরবে?” ইমন তার হাতের ইশারায় কাউকে চেপে ধরার মতন ভঙ্গি করল।
ইমনের প্রশ্নে চুপ থেকে সম্মতি দিল শ্রেয়া, ইমন পুনরায় বলতে আরম্ভ করল,
“যখন মানুষটার গলায় ছুরি চালানো হবে, সে নিশ্চয়ই বাঁচার জন্য চেষ্টা করবে, ভিকটিমের সাথে খুনির একটি শক্তির পিড়াপীড়ি হবে, ধস্তাধস্তি হবে, হবে কিনা?”
এবার মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত করল শ্রেয়া।
কিন্তু জয়ার ক্ষেত্রে এই ব্যাপার গুলোর একটি ব্যাপার ও হয়নি!
ফরেনসিক রিপোর্টের কোথাও মৃত্যুর আগে শরীরের কোন অংশে সজোরে চাপের বা খুনির সাথে ভিকটিমের হাতাহাতির কোন প্রকার প্রমান পাওয়া যায়নি!
“এটা কি করে সম্ভব? এটা তো আর হতে পারে না যে কেউ স্বেচ্ছায় খুন হতে নিজের গলা পেতে দিয়েছে!”
পেইজ ১৩০
ইমনের কথায় এবার মোটামোটি দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে ফরেনসিক কর্মকর্তা শ্রেয়া, ইমন প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল শ্রেয়ার দিকে। শ্রেয়া টেবিলের উপরের ফরেনসিক রিপোর্ট গুলি তুলে নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কয়েকবার করে চোখ বোলাল, তারপর ধীর স্বরে বলল,
“শরীরে কোন স্লিপিং ড্রাগস বা ঘুমের ওষুধের নমুনাও পাওয়া যায়নি।” কথাটা বলেই রিপোর্ট গুলি থেকে চোখ সরিয়ে ইমনের দিকে তাকাল শ্রেয়া।
“Exactly!” হাতে তুড়ি মেরে ইমন বলল, “আর এটাকে আত্মহত্যা বলা সম্ভব নয়, কারণ যেই ছুরি দিয়ে খুন করা হয়েছে সেখানে ফিঙ্গার প্রিন্ট অন্য কারোর, জয়ার না”
“I have to check the reports again, officer. নিশ্চয়ই কোথাও কোন ভুল হচ্ছে, আমরা হয়ত কিছু এড়িয়ে গেছি।”
শ্রেয়ার এই কথায় ভ্রু উঁচিয়ে তার দিকে তাকাল ইমন, তারপর বলল, “কাউকে না কাউকে তো আমরা অবশ্যই এড়িয়ে যাচ্ছি, আর যাকে এড়িয়ে যাচ্ছি সব প্রমান থেকে সে নিজেকে কিভাবে যেন এড়িয়ে রেখেছে।”
পেইজ ১৩১