এইরকম একটি বছরে মাঝে মাঝে কঠিন কোন বিষয় নিয়ে জানার আগ্রহ জাগে। আবার অন্য সময় মন অবসরও চায়। নিঃসন্দেহে ২০২০ সকলের জন্যই একটি কঠিন বছর ছিল। এরকম একটি কঠিন সময়ে আমরা যারা বইপ্রেমী, তারা সুযোগ পেয়েছিলাম বিভিন্ন ধরণের বই পড়ে দেখার। এই বছর আমি জটিল কিছু বিষয় যেমন “ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার” আন্দোলনের পিছনে যে অবিচার চলে আসছিল, সেগুলোর গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আবার অন্য সময় নিজের গতানুগতিক ধারার সামান্য পরিবর্তনের জন্য দিনশেষে চেষ্টা করেছি হালকা ধরণের কিছু পড়ার। বলা যায়, এই সময়ে অনেক ধরণের বই পড়া হয়েছে এবং তন্মধ্যে কিছু অসাধারণ বইও রয়েছে। যেহেতু ২০২০ শেষ হতে চলেছে, আমি নিম্নোক্ত ভিন্নধর্মী ৫টি বইয়ের সুপারিশ করতে চাই। আমি আশা করি আপনি বইগুলো থেকে এমন কিছু খুঁজে পাবেন যা আপনাকে সাহায্য করবে – অথবা আপনার পরিচিত কোন বইপিপাসুর কাজে আসবে – বছরটি ভালো আবহে শেষ করার জন্য।

মাইকেল আলেকজান্ডারের লেখা “দ্যা নিউ জিম ক্রোঃ ম্যাস ইনকারসারেইশন ইন দ্যা এজ অফ কালারব্লাইন্ডনেস”। অন্যান্য শ্বেতাঙ্গদের মতো আমি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চেষ্টা করেছি বর্ণবাদ সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার। আলেকজান্ডারের বইটি বিচার ব্যবস্থায় কিভাবে বিভিন্ন বর্ণের সম্প্রদায়কে, বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গদের অন্যায়ভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়, সে সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা গণ কারাগারের পিছনের ইতিহাস ও সংখ্যা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে বইটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। যদিও আমি পূর্বেই কিছু কিছু উপাত্তের সাথে পরিচিত ছিলাম, তবে আলেকজান্ডার এই বইটি আমাকে আরও পরিষ্কার ধারণা দিয়েছে। বিভিন্ন বর্ণের সম্প্রদায়ের উপর ন্যায়পরায়ণ দৃষ্টি প্রদান করার পাশাপাশি তাদের উপর বিনিয়োগের মাত্রা যে আরো বৃদ্ধি করা উচিত, বইটি পড়ে সে সম্পর্কে আমি আরও বেশি বিশ্বাসী হয়েছি।
ডেভিড এপ্সটাইনের লেখা “রেঞ্জঃ হোয়াই জেনরালিস্টস ট্রাইম্ফ ইন এ স্পেশালাইজড ওয়ার্ল্ড”। ২০১৪ সালে “টেড টক” এ খেলাধুলা সম্পর্কিত এপ্সটাইনের একটি অসাধারণ বক্তব্য দেখার পর আমি তার কাজগুলো অনুসরণ করা শুরু করি। এপ্সটাইন তার মনোরম এই বইটিতে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে স্থাপন করেছেন যে সামগ্রিক বিশ্ব বিভিন্নতা চায়। উদাহরণস্বরূপ নিজের ক্যারিয়ারকে ধরা যেতে পারে। কিন্তু আসলে আমাদের আরো উন্মুক্ত চিন্তাধারার মানুষ প্রয়োজন, যারা চলার পথে অর্জিত নানাবিধ অভিজ্ঞতা এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে আলিঙ্গন করতে সক্ষম হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি রজার ফেদেরার, চার্লস ডারউইন থেকে শুরু করে সোভিয়েত বিষয়ক “কোল্ড ওয়ার” যুগের বিশেষজ্ঞদের কথাও তুলে ধরেছেন। আমার মতে, তার ধারণাগুলো মাইক্রোসফটের কিছু কিছু সফলতাকে ব্যাখ্যা করতে সহায়ক হবে, কারণ এখানে চাকরিপ্রাপ্তদের নিজেদের কার্যক্ষেত্রের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্র সম্পর্কেও সম্যক ধারণা রাখতে হয়। যদি আপনি আপনার অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী সহকর্মীদের দ্বারা আড়ালে পড়ে যান, তবে এই বইটি অবশ্যই আপনার জন্য!

এরিক লারসনের লেখা “দ্যা স্পেলেনডিড এন্ড দ্যা ভাইলঃ এ সাগা অফ চার্চিল, ফ্যামিলি, এন্ড ডিফায়েন্স ডিউরিং দ্যা ব্লিটজ”। মাঝেমধ্যে ইতিহাস বিষয়ক কিছু বই অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠে, যা গ্রন্থকার হয়ত কল্পনাতেও ভাবতে পারেন না। যেমন ১৯৪০ এবং ১৯৪১ সালে ব্রিটিশ নাগরিকরা তাদের বাড়ির বেইজমেন্টে কিংবা টিউব ষ্টেশনগুলোতে গাদাগাদি করে রাত্রি যাপন করতো কারণ জার্মানিরা তাদের বোম মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ধান্ধায় থাকতো – এ ঘটনা প্রাসঙ্গিক। কোভিড-১৯ এর জন্য আমরা যে ভয় এবং উদ্বেগের মধ্যে দিয়ে জীবন যাপিত করছি, তৎকালীন ব্রিটিশদের আতংকের কাছে আমাদের ভয় এবং উদ্বেগের তীব্রতার মাত্রা তুলনামূলক কম হলেও তা অনেকটা একই রকম। সাধারণ নাগরিকদের জন্য এই সময়টা কতোটা কষ্টকর হতে পারে, লারসন এই বইয়ে সে সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দিয়েছেন। উইনস্টন চার্চিল এবং তার কাছের কিছু উপদেষ্টাসহ কিছু ব্রিটিশ নেতারা যারা এই সংকটময় মুহূর্তে জনগণের পাশে ছিলেন, গ্রন্থকার এই বইয়ে চমৎকার ভঙ্গিমায় তাদের চরিত্র দান করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে জানার জন্য শুধু এই বইটি যথেষ্ট না হলেও, বইটিতে যে বিষাদময় সময়ের বিবরণ দেওয়া হয়েছে তা সাহিত্যের জন্য একটি অনন্য সংযোজন।

বেন ম্যাকিন্টায়ারের লেখা “দ্যা স্পাই এন্ড দ্যা ট্রেইটরঃ দ্যা গ্রেটেস্ট এস্পিওনাজ স্টোরি অফ দ্যা কোল্ড ওয়ার”। এই বইটির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ওলেগ গর্ডিয়েভস্কি, যিনি ছিলেন একজন কেজিবি কর্মকর্তা, কাজ করতেন ব্রিটিশদের পক্ষে ডাবল এজেন্ট হয়ে এবং অ্যালড্রিচ আমেস, একজন আমেরিকান স্বমতত্যাগী, যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল গর্ডিয়েভস্কির সাথে। ম্যাকিন্টায়ার এই গল্পগুলো শুধু যে পশ্চিমা উৎস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বলতেন তা কিন্তু নয়, রাশিয়ান দৃষ্টিকোণ থেকেও তার এই গল্পগুলো আসত (গর্ডিয়েভস্কি সহ)। আমার পছন্দের গুপ্তচর কাহিনীগুলোর মধ্যে উত্তেজনার দিক দিয়ে এটি অন্যতম।

বিজাল পি ত্রিভেদির লেখা “ব্রেথ ফ্রম সল্টঃ এ ডেডলি জেনেটিক ডিজিস, এ নিউ এরা ইন সাইন্স, এন্ড দ্যা পেশেন্টস এন্ড ফ্যামিলিস হু চেঞ্জড মেডিসিন”। এই বইটি বাস্তবিক অর্থেই উৎসাহজনক। এখানে উল্লেখযোগ্য কিছু বৈজ্ঞানিক নতুনত্বের কথা বলা হয়েছে এবং তা কিভাবে সিস্টিক ফাইব্রোসিস রোগী ও তার পরিবারের উন্নতি সাধন করেছে তা নিয়ে বলা হয়েছে। এই কাহিনীটি আমার কাছে অনেক বেশি অর্থপূর্ণ কারণ আমি এমন কিছু পরিবারকে চিনি যারা বইয়ে উল্লিখিত নতুন ঔষধটি দ্বারা উপকৃত হয়েছে। যেহেতু চিকিৎসাশাস্ত্রের অলৌকিক ঘটনাগুলো দ্রুতই গবেষণাগারের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে, তাই আমি আশা করি আসন্ন বছরগুলোতে আমরা এইরকম আরও বই দেখতে পারব।
– বিল গেটস
রকমারি বেস্ট সেলার সব ইংরেজি ভাষার বই দেখেতে ক্লিক করুন !
gatesnotes.com থেকে সংগৃহীত ভিডিওটি দেখুন !