ব্ল্যাকহোল অভিযানের কথা শুনলেই পাঠকের মনে কিছুটা খটকা লেগে যাওয়ার কথা। ব্ল্যাকহোল কি ? ব্ল্যাকহোল অপারেশনে কে যাবে, কেন যাবে? ব্ল্যাকহোলে যাওয়া কী সহজ কাজ? তাছাড়া ব্ল্যাকহোল অপারেশনে যেতে হলে পারি দিতে হবে লক্ষ্য কোটি আলোকবর্ষ! কিন্তু লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরের কোনো স্থানে মানুষের পক্ষে যাওয়া কী সম্ভব? মোটেই না। তাহলে? অজানা সবকিছুই জানার আগ্রহ থাকতে হবে এবং জানতে হবে। আসলেই তো! কী এই ব্ল্যাকহোল? ব্ল্যাকহোলের রহস্যই বা কী? চলো তবে, আজকের লেখাটি পড়ে জেনে নেয়া যাক, মহাবিশ্বের এই ব্ল্যাকহোলের রহস্য! তবে তার আগে যেনে নেওয়া যাক আসলে ব্ল্যাকহোল কি?
ব্ল্যাকহোল
ব্ল্যাকহোল হল মহাবিশ্বের এমন কিছু তারকা বা নক্ষত্র যা এমন শক্তিশালী মহাকর্ষ বল তৈরি করে যে এটি তার কাছাকাছি চলে আসা যেকোন বস্তুকে একেবারে টেনে নিয়ে যেতে পারে। হোক সেটা কোন গ্রহ, উপগ্রহ,তারকা, ধুমকেতু বা স্পেসক্রাফট। নিমেষে ধ্বংস করে ফেলে যেখান থেকে গ্রহ, উপগ্রহ বের হয়ে আসতে পারে না। তবে কি ব্ল্যাকহোল কি পৃথিবী ধ্বংস করতে পারে ?
ব্ল্যাকহোল মোটেও মহাশূন্যের এতটা কাছে ভ্রমণ করে না যে, তা গ্রহ, উপগ্রহ,তারকা কে তার শিকার বানাতে পারে। আর পৃথিবীও কোন দিন ব্ল্যাকহোলে গিয়ে পতিত হবে না। কারণ, কোন ব্ল্যাকহোলই কিন্তু পৃথিবীর সৌরজগতের এতটা কাছাকাছি নয়, ব্ল্যাকহোল লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরে যার অবস্থান । কিন্তু আসলেই কী ব্ল্যাকহোলে যাওয়া সহজ কাজ? লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরের কোনো স্থানে মানুষের পক্ষে যাওয়া কী সম্ভব?

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA) সহ পৃথিবীর যাবতীয় মহাকাশ গবেষণার সাথে জরিত যে কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটি ব্যাপারে এখনও অস্পষ্ট । ফলে সঠিক পথ অনুসরন করে ভেতরের যাবতীয় তথ্য বিজ্ঞানপ্রিয় বিশ্ববাসীর কাছে উপস্থাপন করতে পারছেন না তারা। অর্থাৎ রহস্যঘেরা এই ব্ল্যাকহোলের উৎপত্তি কোথায় বা উপস্থিতি নিয়ে আছে বিস্তর আলোচনা, সমালচনা। সুতরাং যত আলোচনা ততই আকাঙ্ক্ষা। বিজ্ঞানীরা জান-প্রান এক করে তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন সেই ব্ল্যাকহোল এর তথ্য সংগ্রহের জন্য । নাসার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক বিশাল আকৃতির মহাকাশযানে করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ১৫০ জনের একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হবে পৃথিবী হতে লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরে ব্ল্যাকহোল পর্যবেক্ষণ করার জন্য । এর পরই চলতে থাকে বাপক কর্মযোগ্য ।
নাসা সারা পৃথিবী হতে ১৫০ জন কে বাছাই করে এই মিশনের জন্য যারা জ্ঞানে পৃথিবীর অন্যান্য মানুষদের থেকে অনেক এগিয়ে । দীর্ঘদিন বিভিন্ন ভাবে নজরে রেখে এই ব্যাক্তিদের নির্বাচন করেছে নাসার সর্বোচ্চ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল। আর এই বর্তমান সময় এবং ভবিষ্যতের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ থেকে ডিউক তার অসামান্য জ্ঞানের জন্য যা তাঁকে পৃথিবীর অন্যান্য মানুষদের থেকে আলাদা পরিচয় দেয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এই ১৫০ জন ব্যাক্তি আগে থেকে জানতে পারেনা যে তাদের এই মিশনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে ।

ডিউক
ডিউক ছাব্বিশ বছর বয়সী এক টগবগে যুবক। সু-দর্শন, মেধাবী, সুঠাম দেহের অধিকারীও বটে। সে এতটাই মেধাবী যে, তাকে কোন পরীক্ষায় হারাতে পারেনি কেউ। অর্থাৎ জীবনের শুরু থেকে আজ অবধি কোন পরীক্ষাতেই দ্বিতীয় হয়নি ডিউক। ফলে সর্বোচ্চ মেধার তকমা নিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে, বর্তমানে উচ্চ শিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।
একদিন অন্ভুত শব্দে ঘুম ভাতে ডিউকের। ঢং ঢং টং এমন শব্দই হবে। এটা কি ঘড়ির ঘণ্টাধ্বনি নাকি অন্য কিছু? ডিউক বুঝার চেষ্টা করছে শব্দটা কিসের। বুঝতে পারছে না। আসলে ঘুমের মধ্যে শব্দটা কেমন ছিল ঘুম ভাঙার পর মনে করাও সম্ভব হচ্ছে না। ডিউক কিছু সময় বিছানায় শুয়ে ভাবতে থাকে শব্দটা আসলে কিসের ছিল । ভেবে বিছনায় উঠে বসে সে। বসেও কিছুক্ষণ ভাবে ডিউক। না এখানেও সব ফাঁকা সব শূন্য। তারপর মনে পরে ডিউক এর যে এটা তার মেইলের সেট করা তিনটা রিংটনের একটা। ডিউকের মেইলের রিংটোন বিশেষ ভাবে ৩ তা স্টেজ এ সেট করা যা সাধারন, গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় ভাবে ফিল্টার হয় এবং সেই অনুযায়ী আলাদা আলাদা রিংটোন বেজে ওঠে । তবে আজকের রিংটোন টা ৩ নাম্বার স্টেজের সুতরাং একটু চিন্তা হওয়ার ই কথা।
ডিউক সোফায় বসে কফি খাচ্ছে আর রবিন রুমের এপাশ ওপাশ করছে। ডিউক লক্ষ্য করে রবিন যথেষ্ট উত্তেজিত। সে একটা যন্ত্র হলেও তার মধ্যে প্রতিটি মানবীয় শুণাবলি বেশ ভালমতো থাকায় এমন করছে সে। টেনশনে ওভার রিঅ্যাক্ট করছে। তবে ডিউকের নিজ হাতে তৈরি রোবটের এ অবস্থা দেখে বেশ লাগছে তার। তাই একটু সময় নিয়েই কফি খাওয়ার পর্ব শেষ করে ডিউক। এরপর যথারীতি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মেইল যা তাকে এবং রবিনকে টেনশনে ফেলে দিয়েছিল তা ওপেন করার কাজে হাত দেয়। তারপর দুজনকেই অবাক করে দেয় সেই মেইল । ডিউক চোখ বড় বড় করে কী করবে বুঝে উঠতে না পেরেও একই ভাবে পড়তে থাক। রবিন একদম চুপ। কোন শব্দ করছেনা রবিন। এ অবস্থায় ডিউক ও রবিনের সম্মুখে যা ভেসে উঠে তা অনেকটা এমন-
প্রিয় ডিউক,
আপনাকে শুভেচ্ছা। বর্তমানে পৃথিবীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নাসার তরফ থেকে আপনাকে স্বাগতম। আপনাকে বর্তমান সময় এবং ভবিষ্যতের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচন করেছে নাসার সর্বোচ্চ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল। এখন হয়তো আপনি প্রশ্ন করে বসবেন, কেন এবং কীভাবে? আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার পূর্বে আমাদের এ প্রয়াসের কারণ আপনার নিকট ব্যাখ্যা করার প্রয়োজনীয়তা বেশি অনুভব করছি।
সম্মানিত অতিথি ডিউক, আপনি হচ্ছেন আমাদের হিসেব মতে ১৫০ জন সৌভাগ্যবান ব্যক্তির মধ্যে একজন যারা এ পৃথিবীর প্রতিনিধি হয়ে লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ দূরে মহাশূন্য ঘুরে বেড়াবেন। ডিউক এ পর্যন্ত পড়ে থেমে যায়। এসব কী পড়ছে সে? কোথাও ভুল নেই তাতে? কি সর্বনাশ। লক্ষ কোটি আলোকবর্ষ মহাশূন্যে ঘুরে বেড়াবে মানে কী? কী বলতে চাচ্ছে তারা! ডিউক চোখ দুটো বড় বড় করে পুনরায় পড়তে শুরু করে-
জনাব ডিউক, আপনার মধ্যে এক ধরনের ব্যতিক্রম উদ্ভাবনী শক্তি প্রত্যক্ষ করায় নাসার সর্বোচ্চ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর এ কারণে আপনি হবেন মহা সৌভাগ্যবান একশ পঞ্চাশ জন নারী-পুরুষের মধ্যে একজন। তবে শুধু মহাকাশে ঘুরে বেড়ানো সেটাই আসল কাজ নয়। এ অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক আছে। প্রশ্ন হচ্ছে কি সেই দিক? আসলে এ অভিযান মহাবিশ্বের সবচেয়ে বিস্ময়কর স্থান অর্থাৎ ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে মানবজাতির যে কৌতূহল সে ব্যাপারে পথ দেখাবে। তবে তার সমাধান হবে কিনা তা বলতে পারব না। সেক্ষেত্রে ব্ল্যাকহোলের অভ্যন্তরে হয়তো বা আপনাদের আকাশযান প্রবেশ করবে এবং তারপর কি ঘটবে তা দেখতে পৃথিবীতে থাকা কোন মানবজাতি অবশিষ্ট নাও থাকতে পারে। তা সত্ত্বেও যে ১৫০ জন মহামানব এ মহাভিযানে সম্পৃক্ত হবেন তারা এ পৃথিবীরই জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে থাকা মানব জাতির প্রতিনিধি। সে হিসেবে আপনারাই হবেন পৃথিবীর বুকে বিচরণ করা সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মহামানব। পৃথিবীকে প্রতিনিধিত্ব করা মহা ভাগ্যবান। মাননীয় ডিউক আপনাকে স্বাগতম। আমরা আশা করব এ অভিযানে অংশ নিয়ে মানবজাতির অজানাকে জানার যে আকাঙ্ক্ষা তার সফল বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবেন।
আপনার সার্বিক মঙ্গল কামনা করে শেষ করছি।
ধন্যবাদান্তে,
আন্তরিক শুভেচ্ছাসহ
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর প্রতিষ্ঠান ‘নাসার সর্বোচ্চ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের পক্ষে,
পরিচালক
নাসা।
ডিউক মেইল পড়া শেষ করে হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে। এ কেমন কথা! পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ছেড়ে কেমন ভ্রমণের প্রস্তাব পেল এও কি সম্ভব? লক্ষ কোটি বছর একটা মহাকাশযানে কীভাবে থাকবে ওই মানুষগুলো, এটা কী ধরনের প্রস্তাব! বাস্তবসম্মত নয়, বিভ্রান্তিমূলক। ডিউকের এই হতাশাজনক চুপ করে থাকা তার পালিত রোবট রবিনেরও ভাল লাগছে না। তবে বুঝতেও পারছে না আসলে ব্যাপারটা কী।

রবিন
ডিউকের এই কথা-বলা রোবট তার নিজের সষ্টি। অর্থাৎ ব্যক্তিগত কাজে সহায়তার জন্য নিজ হাতে রবিন নামে তৃতীয় শ্রেণির এ রোবটটি বানিয়ে নিয়েছে সে। রবিনের কাজ হল ঘর পরিষ্কার থেক শুরু করে বই, কম্পিউটার, পরনের কাপড়, জুতা, এগিয়ে দেয়া। ডিউকের মন খারাপ হলে গান শুনিয়ে মন ভাল করা, ডিউকের সাথে মাঝেমধ্যে গেমস খেলা ইত্যাদি ইত্যাদি।
ডিউক রোবটটি তৈরি করেছে ঠিকই তবে জিনিসটা সচল হওয়ার পর যখন কাজ শুরু করে তখন থেকে সে স্বাধীন। রবিন তার নিজের ইচ্ছেমতো ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরে এ রুম থেকে সে রুম ঘুরে বেড়ায়। যখন খুঁশি গান গায়, কথা বলে। এতে কোনরকম প্রতিবন্ধকতা ডিউকের পক্ষ থেকে ছিল না। কারণ ডিউকের প্রয়োজন হলে কারও সহযোগিতা পাওয়া আর তা নিয়ম করে পেলেই হয়। রবিন দেখতে বেশ অদ্ভুত। তার মাথা কম্পিউটারের মনিটর দিয়ে তৈরি যার উপর ডিউক একটি শক্তিশালী মুভিং ক্যামেরা বসিয়ে দেয়। রবিন সেই ক্যামেরার মাধ্যমে দেখতে পায়। এছাড়াও দেহ বানানো হয়েছে শক্ত ধাতব পদার্থ দিয়ে। পাশাপাশি দুটো হাতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে নিম্নাংশে এক ধরনের মেটাল হুইল বসানোর ফলে রবিন যখন চলাফেরা করে তখন এক্সট্রা কিছু শব্দ বরাবরই হজম করতে হয় ডিউককে। তারপরও নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল। রবিন অতি নিম্ন প্রজাতির রোবট । প্রভুভক্ত তবে মাঝে মধ্যে বেশি কথা বলা রোবটও সে। রবিন তার জন্য নির্ধারিত কাজগুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে করে থাকে। আর বেশি কিছু করতে গিয়ে বরাবরই তালগোল পাকিয়ে ফেলে সে। যেমন রবিনকে যদি বলা হয় প্যান্ট এগিয়ে দিতে রবিন শার্ট নিয়ে আসে। আর সাদা শার্ট এগিয়ে দিতে বললে নিয়ে আসে সবচেয়ে কালো যে শার্ট বা প্যান্ট সেটা। এর বাইরে জুতা এগিয়ে দিতে বললে তো কথাই নেই। রবিন হাসতে হাসতে চামচ, সুটকেস, ফুলের টব এগিয়ে দেয়। এই হল ডিউকের সৃষ্টি তৃতীয় শ্রেণির রোবট রবিনের অবস্থা। তবে রাগ করে যদি এক দুবার ধমক দেয়া যায় তখন ঠিকই কাজ করে রবিন। সেই সাথে ভুলের জন্য সরিও বলে।
নেলি
ডিউকের বান্ধবী নেলি । সে দেখতে অত্যন্ত সুদর্শনা, মেধাবী এবং সিরিয়াস। তাই সব ক্ষেত্রেই তার সফলতা দৃশ্যমান। খুব জেদী মেয়ে। কি পড়াশোনা, কি চাকরিবাকরি অথবা সম্পর্কের। নেলি একটি রিসার্চ সেন্টারে মানব দেহের ত্বক নিয়ে গবেষণার সহযোগী হিসেবে কাজ করে। নেলির কতগুলো বিশেষ ভালো দিক আছে। সে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় সিরিয়াস। যেমন, কাজ না থাকলে বন্ধুদের সময় দেয়া, নিকটজনদের খোঁজ নেয়া, সর্বোপরি তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডিউকের সাথে সময় কাটানোর সবই তার ক্যারেক্টারের কিছু ভাল দিক নির্দেশ করে। তাই তাকে জীবনসঙ্গিনী করার কথা ও ভেবেছে ডিউক । অল্প কিছুদিনের মধ্যে তাকে বিয়ের করার চিন্তা ও করে সে।
কিন্তু আজ নেলির আফসোস হচ্ছে। ভীষণ আফসোস । তার সবচেয়ে ভাল বন্ধুটা আগামী এক মাস পর এ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। তাও নিজের সিদ্ধান্তে নয়। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান কিছু মানুষের সিদ্ধান্তে। হতে পারে সেটা পরিপক্ব সিদ্ধান্ত। তবে তাতে কি? প্রিয় বন্ধুকে তার চিরদিনের জন্য হারাতে হচ্ছে। নেলির একটা স্বপ্ন ছিল। এ ধরনের স্বপ্ন সব নারীর মনেই থাকে। অর্থাৎ অতি অল্প সময়ের মধ্যেই প্রিয় বন্ধুর সাথে এক ছাদের নিচে থাকার বাসনা ছিল তার। সে আশা ভেঙে যাচ্ছে কোথা থেকে কার সিদ্ধান্তে। নেলি প্রচণ্ড হতাশা নিয়ে নিজস্ব ফ্ল্যাটের বিছানায় শুয়ে কথাগুলো ভাবছে। ব্যাপারটা এতটা হতাশাজনক যে, জীবন তাদের অথচ জীবনের যাবতীয় হিসেব-নিকেশ উল্টে দিয়েছে নাসা কর্তৃপক্ষ। যারা বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চাভিলাসী এক প্রতিষ্ঠান। এটা কোনো কথা হলো! এক পক্ষের ভাবনা বা আকাঙ্ক্ষা অন্য পক্ষের জীবন নাশ । নেলি ডিউককে অনেক বেশি পছন্দ করে। ফলে ডিউকবিহীন বাকি জীবন কোনভাবেই ভাবতে পারে না সে। এখন তার কী হবে! এ কথা কী কখনো ভেবেছে…
রবিনের আজ সময় কাটছে না। সারাক্ষণ ফ্লাটের এমাথা ওমাথা ঘুরে বেড়াতে ভালও লাগছে না। মন খারাপ হচ্ছে। ইদানীং একা থাকতে ভাল লাগে না তার। সারাক্ষণ অন্য কারোর সঙ্গ পেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু চাইলেই তো সব পাওয়া যায় না। তাই ডিউকের স্ব-হস্তে তৈরি রোবট অনেকটা মন খারাপ করে ফ্লাটের অভ্যন্তরে ঘুরাঘুরি করে । রবিনের সময়টা বেশ ভাল কাটে বস ডিউক কাছে থাকলে। সারাক্ষণ মালিকের জন্য ব্যস্ত থাকতে হয়। বিছানা গুছানো, ফ্লাটের ভেতরের আসবাবপত্র ও অন্যান্য মালামাল গুছিয়ে রাখা। রান্না করা, ওয়াশিং মেশিনে কাপড় কাচা, ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করা এবং কর্তার সাথে কথা বলেও সময় বেশ ভাল কেটে যায়। কিন্তু মালিক কাছে না থাকলেই যত বিপত্তি। কোন কাজই থাকে না। অলস সমর পার করতে হয়। কিন্তু একজন কাজ করা রোবটের কর্ম ছাড়া সময় কাটানো দুরহ কাজ। রবিন তার নিজের কর্ম নিয়ে অনেকটা সন্তুষ্ট । তার জন্য প্রধান কাজই হচ্ছে বসকে সন্তুষ্ট রাখা। এজন্যই তাকে তৈরি করা হয়েছে এবং রবিন আজ পর্যন্ত খুশি যে বস তার কাজে অখুশি নয়। সে হিসেবেই রবিন কখনও কখনও গান গায়, গল্প করে বসকে হ্যাপি রাখার কাজে তৎপর হয়। আবার রবিনের কিছু দুঃখও আছে। রবিন দেখতে অসুন্দর কম স্বাস্থ্যওয়ালা তৃতীয় শ্রেণির রোবট । এজন্য বসের প্রতি তার কোনো কোনো সময় রাগও চলে। অথচ প্রথম শ্রেণির রোবটগুলোকে মানুষের মতোই স্বাচ্ছন্দে চলাফেরা ও কাজ করে যাচ্ছে এবং কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে ।
কি হততাগ্য মানুষ। যার আগামীদিনের ঠিকানা ব্ল্যাকহোল । মহানিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় স্থান ব্ল্যাকহোল । আফসোস, বড়ই আফসোস। রবিন বেশ চিন্তিত নিজের ভবিষ্যত নিয়ে । মহামান্য ডিউক যদি সত্যিই পৃথিবী ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে যান সেক্ষেত্রে তার কী হবে? বসের পরিণতির পাশাপাশি নিজের পরিশতি নিয়েও যথেষ্ট টেনশন তার। রবিনের ভাবনার মূল কারণ সে দেখতে একেবারেই বাজে, বেমানান। ফলে কেউ তাকে গ্রহণ করবে না। আসলে বর্তমান যুগের আধুনিক সব রোবট যেখানে পৃথিবীর সর্বত্র ধাপিয়ে বেড়ায় সেথায় অদ্ভুত দেখতে এবং কিছুটা বিরক্তিকর শব্দ সৃষ্টি করা রোবটকে কে-ই বা পছন্দ করবে? রবিন বুঝে যায় তার অবস্থান কারও বাড়ির অন্দেরমহলে হবে না। হবে ময়লা আবর্জনার স্তূপে বা ডাস্টবিনে। এজন্য রবিনের কষ্টের শেষ নেই।

এদিকে নাসার অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের মাননীয় পরিচালক মারবান ইভান সর্বোচ্চ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে বসেছেন। উদ্দেশ্য অভিযানের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা এবং অভিযানের খুঁটিনাটি কাউন্সিলের প্রত্যেককে জানানো । এর সামনের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে কাউন্সিলের সদস্যদের মতামত নিয়ে ভবিষযত কাজ এগিয়ে নেয়া। যে মানুষগুলোকে নিয়ে মারবান বসেছেন এরা বর্তমান পৃথিবীর সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যাক্তি । তাদের মেধা, শ্রম, আধুনিক বিজ্ঞানের নানাবিধ উন্নত টেকনোলোজি প্রয়োগের ক্ষমতা ও অগ্রগামী চিন্তার মাধ্যমে পৃথিবী নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদের হাতে নিয়ে নেয়।
নাসার শক্তিশালী বিচক্ষণ অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ত্রিশ। এরা নানাবিধ কারণে পৃথিবীর অপরাপর মানুষ থেকে ব্যতিক্রম ও আধুনিক মহামানব। তারা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কিছু ফর্মুলা প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের জীবনকাল বাড়িয়ে নিয়েছেন। অন্য সাধারণ মানুষ যেথায় ষাট সত্তর কিংবা একশ বছর বাঁচতে পারে সেখানে এ মানুষগুলো শতশত বছর বেঁচে থাকবে। এরা যে কাউকে পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে তুলে এনে তাদের নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে পারে। এরা চাইলে ভাল কি মন্দ উভয় কাজই করতে পারে অনায়াসে। তবে তারা বিজ্ঞানের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে পৃথিবীকে আধুনিক থেকে অতি আধুনিক করায় ব্যস্ত। তারা যেমন নিরাপত্তায় নিয়োজিত রোবটদের তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তেমনি অসম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দেশে দেশে যে পরিমাণ মারণাস্ত্র জমা হয় তার প্রতিটির নিয়ন্ত্রণও এখন অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের হাতেই । ফলে পৃথিবীর যাবতীয় ক্ষমতা সঙ্গত কারণেই এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হয়েছে। এতে অবশ্য আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। আধুনিক এ মানুষগুলো চায় পৃথিবীর বাইরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অজানাকে এ সভ্যতার মানুষদের পারিচয় সরয়ে দিতে। অর্থাৎ অবস্থান যত উপরে আকাঙ্ক্ষা তত বেশি এবং সে একাডেমী থেকে নাসার অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের সদস্যদের আবেগীয় ইচ্ছায় এমন অভ্ভুত কার্যক্রম হাতে নেয় কর্তৃপক্ষ। পৃথিবীর একশ পঞ্চাশ জন বিশেষ গুণাবলি সম্পন্ন সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে সিলেক্ট করে তাদেরকে একটি অতি আধুনিক মহাকাশযানে করে।

ডিউক ভাবছে যে তাকে এই পৃথিবীর সব মায়া ত্যাগ করে চিরদিনের জন্য চলে যেতে হবে ব্ল্যাকহোলের উদ্দেশ্য। একদিকে তার প্রিয় ভালবাসার মানুষ নেলি যার সাথে সারাটা জীবন সে থাকতে চেয়েছিল , নিজের তৈরি রোবট রবিন কে ছেড়ে। রবিন রোবট হলেও ডিউক তার সৃষ্টি কে খুব পছন্দ করত। অন্যদিকে পৃথিবীর এক বিশাল অর্জনের নায়ক হিসেবে ব্ল্যাকহোল অভিযানের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা। কি করবে ডিউক? কি আছে ডিউকের ভাগ্যে? শেষ পর্যন্ত কি সে এই অভিযানে যায়? নাসার এই অভিযান সফল হয়? নাকি …? এর পরেরটুকু না হয় বইটি পড়েই জেনে নিন ‘অপারেশন ব্ল্যাকহোল’ ।
বদরুল আলম এর বই সমূহ