হাসি আর কৌতুক ছাড়া আমাদের জীবনটা কেমন হতো কল্পনা করা যায়? কেমন আবার? দারুণ পানসে অবশ্যই। প্রতিদিন হাসলে নাকি মানুষের আয়ুও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। হাসির কৌতুকে আগ্রহ নেই এমন গোমড়ামুখী মানুষ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। দৈনন্দিন জীবনের যাঁতাকলে যখন জীবনের সব রস নিংড়ে নেয়, তখনই মানুষ একটুখানি স্বস্তির সন্ধানে হাতে তুলে নেয় কৌতুক বা কমিকসের বই। তেমনই একটি দারুণ ব্যাঙ্গ ও রম্যরচনা বই কাওছার মাহমুদ এর ‘প্রবাদের সঙ্গে কৌতুক ফ্রি’।
আমাদের দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একজন কার্টুনিস্ট কাওছার মাহমুদ, যার আঁকা কার্টুন আমরা পত্রিকার পাতায় দেখেছি হরহামেশাই। অতিসম্প্রতি বইমেলার মৌসুমে তাঁর, ‘বুয়ার দুটি বই বের করার কৌতুক’ও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
কাওdbছার মাহমুদের জন্ম ১৯৭৫ সালে পাবনায়। তাঁর পৈতৃক নিবাস নাটোরে। পড়াশোনার যাত্রা শুরু আরএম একাডেমি স্কুল থেকে। ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে কলকাতার কুলু ক্রিয়েটিভ সোসাইটিতে ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিংয়ে অধ্যয়নরত আছেন। কার্টুন আঁকাআঁকির শুরুটা হয়েছিলো দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার মাধ্যমে। এরপর দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সমকালসহ বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় পত্রিকাতেও কাজ করেছেন কার্টুনিস্ট হিসেবেই। কখনো নিজস্ব কার্টুন-কমিকস বা কখনো সংবাদ বা কলামের প্রয়োজনে। বর্তমানে তিনি দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সিনিয়র কার্টুনিস্ট হিসেবে কর্মরত।
কার্টুনিস্ট হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি কাওছার মাহমুদ নিজের আঁকা কার্টুন, কমিকসের বইও বের করেছেন বইমেলায়। সম্পাদনা করেছেন মজার সব ছোটদের গল্প এবং কার্টুনের বই। তিনি হাসিকে দেখেন সবচেয়ে সস্তা ওষুধ হিসেবে। আমাদের চারপাশেই রয়েছে হাসির নানা উপকরণ, আমাদের দৈনন্দিন জীবনেই। জটিল সব বিষয়ের মাঝে সরল বিনোদন, হাস্যরস আর কৌতুকের বিষয়টি দেখতে পাই না বলেই আমরা রোজকার জীবনে হাসতে ভুলে যাই।

কাওছার মাহমুদের কার্টুনে সবসময়েই স্থান পেয়েছে সমসাময়িক রাজনৈতিক, সামাজিক, নাগরিক জীবনের নানা অসঙ্গতি। তার কার্টুনের বইগুলোও এর ব্যতিক্রম নয়। কখনো তিনি ব্যাঙ্গ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অদ্ভুত সব ব্যবহার ও আচার-আচরণকে এবং বদলে যাওয়া সামাজিক আচরণকেও। নানারকম সম্পর্ক ও সেসবের ঝুট ঝামেলাও স্থান পায় তার কার্টুনে। যেমন- পাশের বাড়ির ঝগড়া, প্রেমের সম্পর্ক, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া, অফিসের বসের সাথে সম্পর্ক সবই উঠে আসে তার কার্টুনে। এছাড়া বর্তমান সময়ে সামাজিক নানা চাহিদা ও চর্চার অসঙ্গতির প্রতি ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন তো আছেই।
কাওছার মাহমুদ একুশে বইমেলা ২০২০ এ প্রকাশিত তার রম্য বইটির নাম দিয়েছেন, ‘প্রবাদের সঙ্গে কৌতুক ফ্রি’। বইটি প্রকাশিত হয়েছে কথাপ্রকাশ থেকে। নাম শুনে মনে হতে পারে, সেই পুরোনো সব বাংলা প্রচলিত প্রবাদ নিয়েই বুঝি কৌতুক করেছেন কাওছার মাহমুদ। আসলে তা নয়। তিনি সমসাময়িক সামাজিক অসঙ্গতি, সমস্যা, যেগুলোকে আমরা খুব স্বাভাবিক ভেবে আপোষ করে নিয়েছি, সেগুলোকে নিয়েই তৈরি করেছেন ব্যাঙ্গাত্মক প্রবাদ। আধুনিক প্রবাদই বলা চলে সেগুলোকে। যেমন- পড়াশোনা করেই যদি মুখ উজ্জ্বল করতে হয় তবে ফেসওয়াশের কাজ কী, কেউ বাঁশ দিলে সেটা দিয়ে মই বানিয়ে উপরে উঠে যান, ভালোবাসলেই যদি ঘর বাঁধা যেত তাহলে কি আর ইট-বালি-সিমেন্টের দরকার হতো! মায়ের নিঃস্বার্থ শ্রম কিংবা ফেসবুকের বেশি বেশি ব্যবহারের কুফল নিয়েও কার্টুন-প্রবাদ পাওয়া যায় কাওছার মাহমুদের বইটিতে। তার কৌতুক তাই কেবল কৌতুক নয়, বরং সামাজিক অসঙ্গতিগুলোর প্রতি কটাক্ষও বটে।
বইটি সব বয়সের পাঠকের জন্যই উপযোগী বলা চলে। তবে একেবারে শিশুদের জন্য উপযোগী নয়। কারণ কাওছার মাহমুদের কার্টুনের নিহিত অর্থ বোঝা এবং বলার চাল একটু বড় পাঠকদের উদ্দেশ্য করেই গড়ে উঠেছে। কিশোর থেকে শুরু করে যেকোনো বয়েসী পাঠকের জন্যই ১৮০ পৃষ্ঠার এই রম্য বইটি হতে পারে হালকা পাঠের দারুণ একটি বই।
‘প্রবাদের সঙ্গে কৌতুক ফ্রি’ বই এর ফ্ল্যাপে লেখক লিখেছেন, একটি নির্মল হাসির বই এবং গভীর একটি ঘুম, এই দুই মহৌষধ যেকোনো রোগ সারাতে পারে। এই রোগে শোকে জর্জরিত পৃথিবীর চারপাশেই যে হাসির খোরাক ছড়িয়ে আছে পাঠক যেন তা খুঁজে নিতে পারেন সেই প্রত্যাশাই রেখেছেন তিনি। সেই সাথে তার কার্টুন ব্যাঙ্গ করার ছলে পাঠককে প্রতিবাদ ও শিক্ষণীয় বিষয় সম্পর্কেও জানায়। সবচেয়ে সস্তা ওষুধ হাসিকে খুঁজে নিতে কৌতুকপ্রিয় পাঠকদের সংগ্রহে রাখার মতো একটি বই ‘প্রবাদের সঙ্গে কৌতুক ফ্রি’।
এই ব্লগটি লিখেছেন ফারিয়া আবদুল্লাহ