“সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার মতাে সময় আমার নেই।” –এরকমই একটা কথা বলেছিলেন ক্যারিয়ারে সফল একজন ব্যক্তি। আপনি সফল হোন কিংবা ব্যর্থ, সময় নিয়ে আপনার টানাটানি লাগবেই। এটা করতে গেলে মনে হবে, ওটা করতে পারবেন না। আবার ওটা করতে গেলে মনে হবে, আরেহ! এটাই তো করা হলো না। সময় নিয়ে এই বিশাল মারামারির ইতি ঘটানোর লক্ষে দ্য মিরাকল মর্নিং বইতে হ্যাল এলরড দিয়েছেন ছয় মিনিটের সমাধান। কী রকম?
খুব ব্যস্ত আপনি? ওয়াও! আমি ভাবতাম, আমি একাই ব্যস্ত।
সর্বোচ্চ সাফল্য পেতে আমাদের সীমিত আত্ম-উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে কীভাবে অসীম পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায় সেটাই ছিল আমার প্রথম দিকের একমাত্র চিন্তার বিষয়। এই সমস্যার খুব উপযােগী সমাধান পেয়েছি এবং এটা প্রতিনিয়ত আরও লক্ষ্যভেদী করার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছি।
The Miracle Morning প্যাকেজ নিয়ে যখন থেকে পেশাগতভাবে পরিকল্পনা করা শুরু করেছি তখন থেকেই আমার মূল লক্ষ্য ছিল, কীভাবে এই প্যাকেজটির অল্প সময়ের চর্চা থেকে অধিক কার্যকরী ফল বের করা যায়। সেই চেষ্টারই ফলশ্রুতি ৬ মিনিটের Miracle Morning। এই ৬ মিনিটের প্রক্রিয়াটা সেই সব মানুষের জন্যে, যাদের সময়ের সত্যি খুব টানাপােড়েন এবং জীবনযুদ্ধে পর্যদুস্ত সেইসব মানুষের জন্যে, যারা নতুন করে একটি ঝামেলা (!) নিতে ইচ্ছুক নন।
যে সুখ ও সাফল্য আপনার কাম্য আর প্রাপ্য তার জন্যে প্রতি সকালের মাত্র ৬ মিনিট খরচ করা শুধুমাত্র সম্ভবই না বরং এটা অবশ্য কর্তব্য, এমনকি আপনি যখন বাস্তবতার নিষ্পেষণে জর্জরিত। আগামী কয়েক মিনিটে আপনার জন্যে রয়েছে সারপ্রাইজ। আপনি অবাক হয়ে যাবেন, সামান্য ৬টা মিনিট কীভাবে এত উপভােগ্য ও জীবনের মােড় পরিবর্তনকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়, তা ভেবে। এবং অবশ্যই ভাবুন যে, এরপর থেকে জীবনের প্রতিটি সকালই এমন উপভােগ্য ও ইতিবাচক হবে।

BUY NOW
প্রথম মিনিট – নিজেকে চাপমুক্ত করুন
কল্পনা করুন, হাজারাে দুশ্চিন্তা, চাপ, ব্যস্ততা ছাড়া দিনের শুরু করছেন, মানসিক প্রশান্তি আর শারীরিক ক্লান্তিহীনতা নিয়ে। আপনার দিনের প্রথম মিনিটটি উপভোগ করুন উদ্দেশ্যপূর্ণ নীরবতার সঙ্গে। বসুন; মনকে শান্ত করুন, কেন্দ্রীভূত করুন; গভীর শ্বাস নিন, ধীরে, শ্বাস ছাড়ুন। শুধুমাত্র এই শান্ত, ঝামেলাহীন সুন্দর মিনিটের জন্যে পরম শক্তিমানের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে পারেন, ভবিষ্যতের সাফল্যের পথের দিশার জন্যে তার কাছে প্রার্থনা করতে পারেন, মেডিটেশন করতে পারেন। যাই করুন উদ্দেশ্য থাকবে একটাই, মনকে শান্ত করা, শরীরকে শিথিল করা, সকল ধরনের চাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা। এই মুহূর্তটাকে যত বেশি উপভােগ করবেন, শান্তি, লক্ষ্য আর পথ সম্পর্কে আপনার ধারণা তত স্বচ্ছ হতে থাকবে।
দ্বিতীয় মিনিট – নিজের লক্ষ্য মনে করিয়ে দিন নিজেকে
এবার আপনি আত্ম-কথন লিখে রাখা কাগজটা বের করুন, যেটাতে আপনি লিখেছিলেন আপনার সামর্থ্য আর লক্ষ্য সম্পর্কে। আগাগােড়া পড়ুন, জোরে, স্পষ্ট করে, নিজেকে শুনিয়ে। যখন আপনি আপনার লক্ষ্যগুলাে পড়বেন তখন আপনার ভেতর থেকে ওই লক্ষ্য পূরণের অনুপ্রেরণা আসবে। লক্ষ্যগুলােতে যত বেশি বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবেন, অনুপ্রেরণা তত জোরালাে হবে। যখন সামথ্যগুলাে পড়বেন আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে। মনােযােগ দিন আপনি কোন কোন বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তার ওপর, আপনার লক্ষ্যের প্রতি। মনােযােগ দিন যে জীবন আপনি চান, যা আপনার প্রাপ্য, যা অর্জন করা সম্ভব তার ওপর। মনে করুন, আপনি কী বিশ্বাস করেন, সেই সব অর্জনের পথে চলতে কী কী জিনিস আপনার দরকার এবং তা অর্জন করতে আপনি কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
তৃতীয় মিনিট – কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের মুহূর্তটিকে অনুভব করার চেষ্টা করুন
চোখ বন্ধ করুন; কল্পনা করুন আপনার ভিজুয়াল বাের্ডটিকে। কল্পনা করুন বোর্ডের বিষয়বস্তু। কল্পনা করুন যখন আপনি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভ করবেন তখনকার আশপাশের পরিবেশ, লােকজন কেমন হবে; অনুভব করুন কীভাবে আপনি সেই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলবেন। কল্পনা করুন একটা সর্বাঙ্গসুন্দর দিন, যে দিনে সবকিছু আপনার চাহিদা মতাে ঘটছে; কল্পনা করুন উপভােগ করছেন আপনার দৈনিন্দিন কাজগুলাে; কল্পনা করুন পরিবার কিংবা বিশেষ কারাে সঙ্গে হাসছেন, পার্টি করছেন; কল্পনা করুন দিনটা পার করার জন্যে যা যা প্রয়ােজন, তা আপনি খুব সহজেই পেয়ে যাচ্ছেন। আপনার মূল লক্ষ্য হচ্ছে- সাফল্যকে দেখা, সেটা অনুভব করা, সাফল্যের ভেতরে থেকে খুশি অনুভব করা; যে খুশির সময়, পরিবেশ ও মুহূর্ত তৈরি করার জন্যে আপনার এত চেষ্টা!
চতুর্থ মিনিট – নিজের ভেতর কী কী পরিবর্তন আনতে চান, লিখে রাখুন
এবার একটা মিনিট সময় বের করুন কিছু লেখার জন্যে। লিখুন আপনি কৃতজ্ঞ, কেন আপনি গর্বিত এবং ঠিক কী কী পরিবর্তন আপনি নিজের ভেতর আনতে চাচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনের জন্যে। এবং এই কাজটা করতে করতেই আপনি মনের কোণে একজন শক্তিশালী, অনুপ্রাণিত ও আত্মবিশ্বাসী “আপনি” সৃষ্টি করতে পারবেন।
পঞ্চম মিনিট – আত্মোন্নয়নমূলক বই থেকে এক মিনিট কিছু পড়ুন
এবার আপনি পড়বেন। পছন্দের আত্ম-উন্নয়নমূলক বইটি নিন। ঠিক এক মিনিট পড়ুন; এক পৃষ্ঠা, দুই পৃষ্ঠা। যতটুকু সম্ভব । আপনি কিছু নতুন ধারণা পাবেন, যা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণের রুটিনে যােগ করতে চাইবেন। এরকম কিছু ধারণা পাবেন, যা পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নে আপনাকে সাহায্য করবে। কিছু ধারণা পাবেন, যা আরও পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করবে; যা আপনার মন প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করবে; বেঁচে থাকাকে করবে সহজ।
ষষ্ঠ মিনিট – আলসেমি দূর করতে ব্যায়াম করুন
সব শেষে, উঠে দাঁড়ান। শেষ ষাট সেকেন্ডে আপনার কাজ হবে শরীরের আলসেমি দূর করা। খুব ছােট ও সহজ কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলাের জন্যে খুব বেশি সময়, জায়গা কিংবা চেষ্টা লাগে না। আপনি পুশ-আপস, (push-ups) সিট-আপস (sit-ups) কিংবা জাম্পিং জ্যাক jumping-jacks) করতে পারেন। লক্ষ্যটা হচ্ছে হৃদয়ে গতি সঞ্চার করা, শক্তি বৃদ্ধি করা এবং আপনার সক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থা নিশ্চিত করা, যা আপনাকে মনােযােগ ধরে রাখতে এবং কাজ করতে সাহায্য করবে। এভাবে, এই ৬ মিনিট দিয়ে যদি আপনি প্রতিদিনের শুরুটা করতে পারেন, কী মনে হয়, দিনটা কি সফল হবে? যুদ্ধটা কি একটু আপনার পক্ষে আসবে?
আপনি দিনের শুরুটা মাত্র ৬ মিনিটেই সীমাবদ্ধ রাখেন এমনটা আমি বলছি না, চাইও না। শুধু বলতে চাচ্ছি, শুরুতে আপনি ছয় মিনিটে অভ্যস্থ হন, ধীরে ধীরে আপনার সুবিধামত ৬ মিনিটকে ১২, ১৮ কিংবা যতটা আপনি চান, তাতেই স্থির হােন। আর কিছু কিছু দিন আসবে, যেদিন খুব তাড়ায় থাকবেন, সেদিনের জন্যে ৬ মিনিটের ব্যবস্থাপত্র তাে রয়েছেই। শুভ দিন!
আরও পড়ুন- করপোরেট কমিউনিকেশন কী? কেন শেখা প্রয়োজন?
জনপ্রিয় আত্মোন্নয়নমূলক বইগুলো দেখুন