মেডিকেলে ফেলা দেয়া হাজারো বেওয়ারিশ শিশু, এই শিশুগুলোর কেউ খোঁজ-খবর নেয় না।
কোনো এক সংস্থা আছে যে সংস্থাটি শিশুগুলিকে দত্তক নেয়। কিন্তু একটা সময় পর সে শিশুগুলোর আর কোনো হদিস পাওয়া যায় না। কেউ নেই যে ওদের খোঁজ খবর নেবে।
‘ডাইনা মারিও’ একজন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম কর্মী এবং দুঃসাহসী ‘স্টাফ রিপোর্টার’।
ডাইনা লেগে যায় সে ঘটনার সত্যতার পেছনে।
এক সময় সে জানতে পারে, যে শিশুগুলিকে ওরা দত্তক নেয়, তার কোনো রেজিস্ট্রার হয় না। কেন?
শুরু হলো তাদের সম্পর্কে তথ্য জোগাড়। তারা কোথায় যায়, কী করে শিশুগুলোকে?
মৃত্যু অবধারিত জেনেও ঢুকে পড়ে তাদের অন্দরমহলে। তুলে নেয় এক একটা নৃশংসতার ছবি।
হঠাৎ কীসের সাথে যেন ধাক্কা খেল, হাত থেকে পড়ে গেল তার ক্যামরাটি।
ভিলেইনরা সজাগ হয়ে গেল, এখানে বাইরের কেউ আছে, খুঁজো তাকে।
ডাইনা পালাতে গিয়ে তাদের চোখে ধরা পড়ে। ফায়ারিং শুরু হলো তার দিকে।
পালাতে থাকে ডাইনা, যেদিকে দুচোখ যায়। পরিত্যক্ত ঘর-বাড়ি, হাজারো অলিগলি, যেন এক কঠিন গোলকধাঁধা। শতবার আসলেও যে কেউ পথ হারাবে নিশ্চিত।
পেছনে ধাওয়া করছে বিশ্বের টপ স্পাই ক্রিমিনালরা, যাদের প্রত্যেকের হাতে আছে অত্যাধুনিক অটোমেটিক রাইফেল গান ঢাক-ঢাক-ঢাক অনবরত গুলি বোঁ বোঁ করে তার দিকে ছুটে আসছে পয়েন্ট. ৫.৫৬×৪৫ এমএম ক্যালিভারের বুলেট।
এত ভারি আগ্নেয়াস্ত্রের ধাওয়া খেতে হবে ডাইনা হয়তো কল্পনাও করেনি।
সামনে থরে থরে ঘরবাড়ি, মাঝে মাঝে পর্দার নড়াচড়া দেখা যায়। মনে হবে কেউ যেন উঁকি মেরে দেখছে জানালাগুলো দিয়ে। জানালাগুলো বন্ধ, বাড়িগুলো নয়া-পুরানো মিশ্রিত। চারপাশে আছে মোটা-মোটা বেশকিছু সিকনিফিকেন্স, হ্যারিট্যাগ আর সরু মাঝারি গড়নের মেটাল গাছ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, যেন কোনো আবাসিক এলাকা। কিন্তু কেউ আদৌ কি বসবাস করে এখানে?……
#
সেদিন ছিল হ্যানসান এবং ক্যাসিওর বিয়ে। শত জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ওরা একটি বন্ধনে আবদ্ধ হলো। বিয়ের দিন রাতে ছিল পার্টি, হালকা মিউজিক পরিবেশটাকে আরও রোমাঞ্চকর করে তুলেছে। হ্যানসান আর ক্যাসিও দুজন একসাথে নাচছিল।
‘যেন আজ বসন্তের আগমনী,
দূরীভূত হলো শত কালো মেঘ,
শত ফুলের আবেশে দূর হলো কালো সময়।
স্বামীর স্পর্শে হ্যানসানের শরীরে আজ নতুন শিহরন । ক্যাসিওর ফোনটা আকস্মিক বেজে উঠল।
মধ্যেরাত, কনকনে শীতের মাস। কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেল ক্যাসিও। ঘরে সদ্য বিয়ে করা বউ। ইসরায়েলি মাফিয়াদের একটি গোপন বৈঠকের খবর এসেছে বিশ্বের বড় বড় টপ টেরর’রা সেখানে আসবে । তাকে যথাসময়ে পৌঁছাতে হবে সেখানে। তার কাছে ফোন এসেছে।
‘ডো-রেডো’ নামের এক ছোট্ট জনমানবহীন শহর। অবশ্য এ নাম আগে কখনো শুনেনি ক্যাসিও। তার সাথে আছে তার পোষা বিড়ালটি প্রায় সময় তার সাথেই থাকে। আছে একটি রিভলবার।
ক্যাসিও তার হিলাক্স এস.আর.ফাইভ গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।
ডো-রেডোর রাস্তাগুলো এবড়ো-খেবড়ো। শুধু গাড়ি নয়, মানুষের হাঁটার অনুপযুক্ত, সে জন্য গাড়ির ফোর্স বেশি লাগছিল। যার ফলে শব্দটাও বেশি হচ্ছে। রাতে সে শব্দটা আরও বিকট হয়। চারিদিকে উঁচুনিচু ঢালু পাহাড়। পাহাড়ের গা ঘেঁসে শব্দটা কেমন কম্পিত হচ্ছে।

ঘুটঘুটে অন্ধকার ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের শব্দ, মাঝে মাঝে মাঝে অদ্ভুত কিছু শব্দ ভেসে আসছে। এছাড়া দূর থেকে দূর আর কোনো শব্দ নেই।
গাড়ির ইঞ্জিনটি এবার বন্ধ করে ক্যাসিও। গাড়ি নিয়ে সামনে এগোনো আর সম্ভব নয়, তাই পায়ে হেঁটেই যেতে হবে। নাইটভিশন চশমাটা চোখে দেয় সে। টর্চ জ্বালানো যাবে না। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, চাঁদনী রাত নেই। কোনো এক অজানা ভয়ে আকাশের তারাগুলো মেঘের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। অন্যদিকে হালকা তুষার বেশ অসুবিধে করে তুলেছে তার কাজটাকে। ক্যাসিও ঠিক জানে না তাকে কোথায় যেতে হবে। ক্যাসিওকে যা বলা হয়েছে তা শুধু জায়গাটার নাম। বাকিটা খুঁজে নিতে হবে।
ক্যাসিও চেষ্টা করছে কোনো ক্লু যদি পায়। কিন্তু যেরকম তাকে খবর দেয়া হয়েছে তেমন কিছুই দেখছে না সে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার খেয়াল হলো গাড়ি থেকে অনেক দূর চলে এসেছে। যেখানে সে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে গাড়িটা দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে অন্ধকার হওয়ায় দিক ঠিক রাখাও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আকাশে তারা থাকলে অন্তত এই সমস্যায় পড়তে হতো না।
বেশ ক্লান্ত লাগছে, ইচ্ছে হচ্ছে কোথাও বসতে পরক্ষণে তার মনে হলো দায়িত্ব। বসলে হবে না তাকে চলতে হবে কেননা তার মাথার উপর দায়িত্বের ভার আছে যা সে হেলায় উড়িয়ে দিতে পারে না। তার কাছে আছে একটা ঘড়ি যে ঘড়িটা তাকে মনে করিয়ে দেয় সময়ের কথা। সময় একবার ফুরিয়ে গেলে তাকে আর দৌড়ে ধরা যায় না।
কখনো পথ চলা কিছুটা ধীর, আবার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। সোজা পথ ধরে হাঁটা শুরু করেছিল কত কিলোমিটার পথ হেঁটে এসেছে জানা নেই। পাগুলো অবশ হয়ে আসছে কিন্তু সেদিক দেখার সময় এটা নয়। দ্রুত পৌঁছাতে হবে গন্তব্যে।
হঠাৎ গা ছমছম করে উঠল, মনে হয় আঁধারে ওঁৎপেতে বসে আছে শত্রুরা। মনের মধ্যে আজ একটা পিছুটান অনুভব করছে, যা এর আগে কখনো হয়নি। জীবনে অনেক কঠিন থেকে কঠিন অপারেশন করেছে একাই, কিন্তু তখন সে অবিবাহিত ছিল। ঘরে কেউ ছিল না অপেক্ষা করার। কী করছে সে কে জানে? হাজারো কল্পনা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেয়ে চলছে। তারপরও এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। ক্যাসিও পেশায় ইন্টারপোল অফিসার হলেও টাকার জন্য সে একাজ করে না, পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান সে।
অট্টালিকা সহায়-সম্পদের মালিক তার বাবা উইলিয়াম সার্লস অনেক বড় ব্যবসায়ী। পিতার অমতেই পুলিশের চাকরিতে আসা, পরে বদলি হয় ইন্টারপোলে। আজ প্রায় সাত বছর বাবা একটি কথাও বলেনি। কেন জানি তার কথা খুব মনে পড়ছে। ক্যাসিওর ইচ্ছে দেশের জন্য কিছু করবে তার আত্মার প্রধান খোরাক। প্রত্যেকের মনে যে-কোনো একটা খোরাক থাকে সেটা পূর্ণতা না পেলে অন্তর আত্মা যে তুষ্ট হয় না। শত সফলতার মাঝেও একটা হাহাকার থেকেই যায়।
পৃথিবীতে চলমান ছোটবড় ঘটনাগুলো একটি অন্যটির সাথে জড়িয়ে, এ সবই বিশ্ব কু-রাজনীতির খেলা। এর পেছনে কেউ আছে যারা এসবের পরিচালক। তাদের খুঁজে বের করতে হবে।
ধূসর ফ্যাকাশে রংহীন আলোর মতো কিছু একটা দেখা যায় ঠিক ঠাহর করা যাচ্ছে না। আরও কাছে যেতে হবে। আরেকটু কাছে গেলেই হয়তো দেখা যাবে। কাছে যেতে যেতে আলোর মতো দেখতে জিনিসটা আরও ফ্যাকাশে হয়ে যেতে লাগল। পরক্ষণে বিকট শব্দ। হঠাৎই নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেল চারিদিকে, কিছুই আর দেখা যাচ্ছে না। ঝিঁঝি পোকারাও চুপ হয়ে গেল আর শব্দ করছে না, উদ্ভট ভেসে আসা শব্দাটাও আর শোনা যাচ্ছে না।
#
হ্যালো ৯১১! হাইওয়ে রাস্তার উপর একটি গুলিবিদ্ধ লাশ পড়ে আছে। মনে হয় তার মাথায় গুলি লেগেছে, প্রচুর রক্তক্ষরণ। তার উপর গাড়িও চলছে পুরো তেতলানো শরীর প্রচুর রক্ত। পুরো রাস্তা লাল হয়ে আছে। মাংসপিণ্ড চারিদিকে ছড়ানো ছিটানো।…
#.
ডাইনা নিখোঁজ হলো। ডাইনা নিখোঁজ হওয়াতে জনগণের আন্দোলনে সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠলো। সরকার পড়ল বেকায়দায়। ডাইনাকে খুজতে নেমে পড়ে সি,আই,এ এফবিআই এর মতো সিক্রেট সার্ভিসগুলো। সবাই যখন ব্যর্থ তখন কেসটি চলে যায়, স্পেশাল সিক্রেট সার্ভিসের জেনারেল, জেইয়েল এর হাতে।
‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে যেমন সাপ বেরিয়ে আসে তেমনি এখানেও হলো তাই।
জেইয়েল এমন একটি শক্তিশালী পক্ষের সাথে সংঘর্ষে লেগে যায় যাদের নাম শুনলে, আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন,এবং চিনের মতো পরাশক্তিগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরাও ভয়ে থরথর করে কাঁপে। লোকচক্ষুর আড়ালে থাকা অত্যন্ত ভয়ংকর একটি পক্ষ। পৃথিবীতে থেকেও যাদের আছে আরেকটি জগৎ।
শুরু হয় জেইয়েল’র পদচারণা।…..
#
জেইয়েল’ বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত একজন স্পেশাল সিক্রেট ইন্টেলিজেন্ট এজেন্ট। পুরো নাম ‘জেইয়েল আহমেদ’। আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা হিসেবে সে খুবই কুখ্যাত। পনেরোজন সি.আই.এ স্পাইদের একাই সামলাতে পারে সে। নিয়েছে এমন ট্রেনিং ভয়-ডর কিছুই নেই তার। বুদ্ধি এবং কৌশলে তুখোড়, পৃথিবীতে এমন কোনো কাজ নেই, যা সে পারে না। যেখানেই তাকে দেয়া হয় সেখানেই সে ফিট। প্রয়োজনে যা কিছু করতে পারে সে।
জেইয়েল গোয়েন্দা হলেও তার আরও একটি পরিচয় সে একজন ‘সাইকিয়াট্রিস্ট ‘। ফলে তার কর্তব্যকর্মে প্রয়োগ হয় ভিন্নমাত্রা।
কর্তব্যকর্মে তার একটা নিজস্ব স্টাইল আছে। অন্যর বেঁধে দেয়া নিয়মের মধ্যে সে চলে না। সে বিশ্বাস করে নিজেকে। নিজের বুদ্ধি, ট্রেনিং এবং কৌশলে তার প্রবল বিশ্বাস। সচরাচর গোয়েন্দাদের চেয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী একটা সত্তা জেইয়েল, যে পাঠককে গোয়েন্দাগিরির সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাবে।
প্রবল বিবেকবান, আবেগকে মোটেও প্রশ্রয় দেয় না। সে মনে করে, যে আবেগী সে সর্বদা দুর্বল হয়। আবেগী ব্যক্তি সামান্য সুখে সর্বমাত্রায় ফেটে পড়ে, আবার সামান্য দুঃখী হলেও সর্বমাত্রায় ভেঙে পড়ে। আবার অন্যদিকে বিবেকবান ব্যক্তি প্রখর বুদ্ধিমান হয়। কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে তার দেরি হয় না।
সৈয়দ হাসান মাহমুদ এর বই সমূহ পেতে ক্লিক করুন!
কাউকে বিশ্বাস করে না জেইয়েল। সবাই মনে করে জেইয়েল কঠিন হৃদয়ের মানুষ কারও প্রতি সে দয়া দেখায় না। কিন্তু তারও একটা মন আছে। চলুন সে মানুষটার সাথে দূরদর্শী মিশনে বেরিয়ে পড়ি যে মিশনে আছে কঠিন বিপদের হাতছানি আছে জটিলতা। ভয়ংকর লোমহর্ষক ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে চলেছেন আপনি।
লেখক- ড. আতিকুজ্জামান চৌধুরী।
( পিএইচডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)
comments (0)