বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্যারিয়ার কার্নিভালের ক্যারিয়ার ক্যাফেতে নিজের অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল এজেন্সি Analyzen Bangladesh এর The Man of Steel মুহম্মদ রিসালাত সিদ্দীক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে।আলোচনায় তুলে এনেছিলেন ডিজিটাল মার্কেটিং এর বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ।
ডিজিটাল মার্কেটিং কী?
সর্বপ্রথমে আমাদের ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে জানতে হবে। অল্প কথায়, ডিজিটাল মার্কেটিং হলো ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে ব্যবহার করে ইন্টারনেট দুনিয়ায় পণ্য, প্রতিষ্ঠান বা ব্র্যান্ডের প্রচারণা বা অ্যাডভার্টাইজ করা। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর মাধ্যমে একাজ করার হার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। অর্থাৎ, ডিজিটাল মার্কেটিং একটা হাইব্রিড ইন্ডাস্ট্রি।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোন ধরা-বাঁধা নিয়ম নেই। এটি মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হরহামেশাই পরিবর্তন হচ্ছে। এই ডিজিটাল মার্কেটিং দুইভাবে আলাদা হতে পারে। মুহম্মদ রিসালাত সিদ্দীকের মতে,
প্রথমত, আগে কোনো বিজ্ঞাপন বানালে তা কাস্টমার পছন্দ করছে কিনা তা জানতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ, এক মাস সময় লেগে যেত। অর্থাৎ তৎক্ষণাৎ ফিডব্যাক পাওয়া যেত না। কিন্তু বর্তমানে কাস্টমারের ফিডব্যাক একদম সাথে সাথেই পাওয়া যাচ্ছে। এর ফলে, কাস্টমার যদি বিজ্ঞাপনের ইতিবাচক সাড়া না দেয়, তবে তা তৎক্ষণাৎ পাল্টে ফেলার সুযোগ থাকছে।
দ্বিতীয়ত, মনে রাখতে হবে, ব্যবসার ক্ষেত্রে কাস্টমারকে মাথায় রেখে ব্যবসা করতে হবে। কাস্টমারের কাছে কোন প্রোডাক্টের চাহিদা বেশি, কোন আইডিয়া তারা ভালোভাবে গ্রহণ করছে, কোন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন দিলে তাদের কাছে তা বেশি পৌঁছাবে – মোট কথা, কাস্টমার কিসে সুবিধা পাবে, লাভবান হবে, তা মাথায় রেখে স্ট্র্যাটেজি সাজাতে হবে। কাস্টমারের চাহিদা কিসে বেশি কিংবা কোন প্রোডাক্টের উপর তার আগ্রহ রয়েছে এইসব বোঝার জন্য বিভিন্ন ধরণের অ্যাপ রয়েছে, যা কাস্টমারের সার্চ হিস্ট্রি ঘেঁটে তার পছন্দের জায়গাটি তুলে ধরে। এসব অ্যাপস ব্যবহার করে সহজেই বেশি সংখ্যক কাস্টমারের সাথে ইন্টারএ্যাক্ট করা সম্ভব হচ্ছে।
এর একটা সহজ স্ট্র্যাটেজি আছে। Catch, Connect, Close, Continue। Catch হল কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী তার সামনে প্রোডাক্টের অ্যাডভার্টাইজ করা। এর ফলে কাস্টমার প্রোডাক্ট সম্পর্কে যে আগ্রহ দেখায় তা হল Connect। এই আগ্রহের ফলেই কাস্টমার যখন প্রোডাক্টটি কিনবে তা হল Close। একবার প্রোডাক্ট কিনার পরে যখন সে এর মধ্যে তার আস্থা খুঁজে পাবে, তখন সে বারবার তা কিনবে, যা হচ্ছে Continue। এইটা মার্কেটিং এর ননস্টপ পন্থা।
ডিজিটাল মার্কেটিং–এ প্রতিবন্ধকতা
বর্তমানে এর ব্যাপক চাহিদার জন্য এই পথে যে প্রতিযোগিতাও ব্যাপক হবে তা তো ধারনা করাই যায়। এখানে ৪০% খরচ যদি হয় মার্কেটিং এর উপর, তবে ৬০% খরচ হয় মার্কেটিং এর ক্রিয়েটিভিটির উপর। ফেসবুকে বা যে কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপনকে যদি ক্রিয়েটিভ ভাবে উপস্থাপন না করা যায়, তবে তা টার্গেট দর্শকের কাছে পৌঁছাবে না। মনে রাখতে হবে, অ্যাডভার্টাইজের কোয়ালিটির উপর এর ক্রিয়েটিভিটি অনেকাংশে নির্ভর করে। এসব প্রতিবন্ধকতা থাকার পরও এটি মার্কেটে একটা গণতন্ত্র এনেছে।
ডিজিটাল মার্কেটিং-এ যে ভুলগুলো হয়ে থাকে
ডিজিটাল মার্কেটিং-এর অনেকগুলো ভাগ আছে। তার মধ্যে প্রধান ভাগগুলো হলঃ ডিজিটাল প্রমোশন, ডিজিটাল অ্যানালাইটিকস, ডিজিটাল টেকনোলজি। আজকাল সবাই ভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং মানে ঘরে বসেই সব কাজ করা। আর যত প্রকার ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধরণ আছে সব একত্রে করা। এখানেই সবাই ভুলটি করে থাকে। কারণ-ছোট কোনো কোম্পানির ক্ষেত্রে সব ভাগের কাজ একসাথে করা সম্ভব না, যেটা যে কোনো বড় কোম্পানির জন্য সহজসাধ্য। তার উপর আছে কাজের মূল্য নির্ধারণ। অনেকেভাবে যেহেতু সে বাসায় বসে কাজ করছে, তাই অন্যদের থেকে কম মূল্যে সে সেবা দিতে পারবে, যা অন্যরা বেশি মূল্যে দিচ্ছে। এইসব ভুলগুলোর কারণেই দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ স্টার্ট আপ কোম্পানি প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই নতুন কোম্পানিগুলোকে তাদের ব্রান্ড ভ্যালু, usp, ইউনিকনেস ধরে রাখতে হবে।
যে সব ব্যাপারে গুরুত্ব বেশি দিতে হবে
৬টি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সবসময় মাথায় রাখতে হবে।
১। কাস্টমারের কথা মাথায় রেখে মার্কেটিং প্ল্যান করতে হবে। তাদের সুযোগ-সুবিধাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
২। কমিটমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। নিজেদের কথার দাম ধরে রাখতে হবে।
৩। কানেকশান সবসময় বজায় রাখতে হবে। মানে কাস্টমার হোক আর অন্য কেউ, সবসময় সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
৪। কোলাবোরেশনের মাধ্যমে নিজেদের এগিয়ে নিতে হবে। এখন আর ডিজিটাল মার্কেটিং-এ প্রতিযোগিতা চলে না। তাই সবার সাথে মিলে নিজেদের এগিয়ে নিতে হবে।
৫। কমিউনিকেশন স্কিল অবশ্যই ভালো হতে হবে, যাতে এর মাধ্যমে কাস্টমারের চাহিদা বুঝে নেয়া যায়।
৬। অবশ্যই নিজেদের বিশিষ্টতা ধরে রাখতে হবে।
কোথায় শেখা যাবে
অনলাইনে অসংখ্য ওয়েবসাইট আছে, যেখান থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত সব কিছু জানা যাবে। ফেসবুকে “ব্লুপ্রিন্ট” নামক একটা সাইট রয়েছে যেখানে সম্পূর্ণ ফ্রি তে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জানা যাবে। এছাড়া গুগল গ্যারাজ, গুগল অ্যাকাডেমি, কোর্সেরা, উদেমির মতো অনলাইন এডুকেশন প্ল্যাটফর্ম থেকে ঘরে বসেই সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন কোর্স করা যায়।
উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য যা জানতে হবে
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য Blue ocean strategy নামক একটা কনসেপ্ট আছে। এই সম্পর্কিত অনেক বইও রয়েছে যেগুলো পড়লে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে।
সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে, Blue ocean বলতে বোঝায়, বাজারে নিজের জন্য এমন একটা জায়গা তৈরি করা বা খুঁজে বের করা, যেখানে নিজের প্রোডাক্টের বিশেষত্ব থাকবে। এইরকম জায়গা খুঁজে বের করতে পারলেই সফল উদ্যোক্তা হওয়া নিয়ে আর চিন্তা করতে হবে না। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত লড়াই করে টিকে থাকার মনোভাব থাকতে হবে। কারণ- লড়াই করার মনোভাব যদি না থাকে, তাহলে প্রতিযোগিতার এই বাজারে নিজের জন্য জায়গা তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়বে। সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তা হলো, নিজের কাজ নিয়ে কোনো শঙ্কা রাখা যাবে না, বরং সবসময় সন্তুষ্ট থেকে ভবিষ্যতে আরো ভালো করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ, ভিশনারি হতে হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং–এর ক্ষেত্রে যে যে বইয়ের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে
মুহম্মদ রিসালাত সিদ্দীক বেশ কয়েকটি বইয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, যেগুলো ডিজিটাল মার্কেটিং এর সহায়ক হতে পারে – Marketing 3.0, Marketing 4.0, এছাড়া Kevin Leu Keller এর ব্র্যান্ড-এর উপর লেখা যে কোনো বই সহায়ক হতে পারে।
ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ক আরও বই পেতে