হঠাৎ বাবার পঁচিশ পাতায় ! জহির রায়হানের চিঠিগুলো উদ্ধার হয়েছিলো ৫০ বছর পর । পিতা বেঁচেছিলেন মাত্র ৩৭ বছর। সন্তান ছেচল্লিশে এখনো চলমান। পিতা-পুত্রের শেষ সাক্ষাৎ, সেও ৪৫ বছর আগের অতীত। এসব কারণেই চিঠিপ্রাপ্তির মুহূর্তটা পুত্রের কাছে হয়ে উঠেছে ‘ম্যাজিক মোমেন্ট’।
তবে এ লেখার মৌলিকত্ব অন্যত্র, মধ্যবয়সী যুবকের ঠিক যে সময়ে পিতার সাহচার্য প্রয়োজন ছিল, চিঠির আবির্ভাব তখনই। অর্ধশতক আগে লেখা পিতার চিঠির বিষয় আর পুত্রের বহমান ২০১৪ সাল যেন একই বর্তমানের দুই মেরু। লেখাটার মূল বিষয় হলো একটি দীর্ঘ চিঠির মধ্য দিয়ে পিতাকে বোঝার নতুন সূত্র আবিষ্কার। আর এ আবিষ্কার এমন একজন পিতাকে কেন্দ্র করে যিনি দেশবিখ্যাত। পিতার রাজনৈতিক আদর্শ আর চেতনাগত অবস্থান সন্থানের কাছেও পাথেও। কিন্তু ব্যক্তিমানুষ ও পিতাকে ঘিরে সন্তানের ছিল অভিমান। ৪৬ বছর বয়সে এসে এই চিঠি যেন সমূলে বদলে দিল সন্তানের পিতাভাবনা। এবার পূর্ণ অবয়বে দাঁড়িয়ে গেলেন পিতা।
৫০ বছর পর শহীদ জহির রায়হানের ২৫ পাতার দীর্ঘ একটি চিঠি উদ্ধার করলেন ওঁরই সন্তান অনল রায়হান। আর লিখলেন এই ভিন্ন ধরনের রচনা।
রকমারি ডট কম-এ দেখুনঃ অনল রায়হানের বই “হঠাৎ বাবার পঁচিশ পাতায় (হার্ডকভার)”
অনল রায়হান। কিছু বুঝতে পারার আগেই বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিল। বাবাকে খুঁজে বেরিয়েছে। মায়ের ছিল দৃঢ় বিশ্বাস, জহির রায়হান মারা যায় নি। সাংবাদিকের দায়িত্ব পালন করছিল অনল। সহকর্মীর ডাক, একটা নতুন গণকবর পাওয়া গিয়েছে, ওখানে চলে যাও। জানো তো, জহির রায়হান মিরপুরেই নিখোঁজ হয়েছিলেন?
পাঠকের রিভিউ থেকে
রাশিক নামে একজন পাঠক লিখেছেনঃ
“বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে লেখা বই-টই আমি সাধারণত পড়ি না। ব্যক্তিগত একটা বিরক্তি কাজ করে। শুধু জহির রায়হানের প্রতি আগ্রহ এবং সত্যি বলতে লেখকের নামটাই কারণেই বেশি আকৃষ্ট হলাম। দেখলাম, পড়লাম এবং অনুধাবণ করলাম লেখকের নাম যদি কছির উদ্দিন টাইপ হত আর আমি যদি এড়িয়ে যেতাম কী ভুলটাই না হত! অনেকদিন পর একটা ভাল লাগা আমার পুরো সময় জুড়ে থাকল।
পুরো সময় কি? হয়ত ভুল বললাম। শুরুতে বেশ বিরক্তিই লেগেছে আমার। জহির রায়হানের চিঠি পড়তে এসেছি এগুলা কি আলতু-ফালতু ব্যক্তিগত বিষয় লিখেছে লেখক? কিন্তু যতই পড়লাম আমার ভুল ভাঙ্গল। এক অন্যরকম রচনা! অন্যরকম এবং স্মৃতিচারণ টাইপ লেখার জন্য বেষ্ট। যদি কেউ কাউকে নিয়ে লিখতে চায় তাহলে নিছক বানিয়ে বানিয়ে লেখার চেয়ে এভাবে মনের গহীন থেকে লেখা উচিৎ।
কিন্তু এটা কি স্মৃতিচারণমূলক লেখা? অনল রায়হান তার পিতৃস্নেহ পান নি। যখন বুঝতে শিখেছেন দেখেছেন মায়ের জীবন সংগ্রাম। হয়ত একটা সময় বাবার প্রতি তার ক্ষোভ হতাশা ছিল কিন্তু একটা সময় ঠিকই সেখানে শ্রদ্ধা আর ভালবাসা জায়গা করে নিয়েছে। “
ইমতিয়াজ নামে এক পাঠক লিখেছেনঃ
আমি বললাম উপন্যাস।
অন্যদিন পত্রিকা ছাপলো স্মৃতিউপাখ্যান।
আমি বললাম উপন্যাস
প্রকাশক দেখলেন জহির রায়হানের চিঠি।
আমি বললাম উপন্যাস
আমার স্ত্রী বললেন সত্যবয়ান।
আমি বললাম উপন্যাস
পাঠক ভাবুক যেমন ভাবুক।
এটা আসলে সবকিছুই। জহির রায়হানের চিঠি বইয়ের ছোট্ট একটা অংশ জুড়ে। আর বাকীটা? হুঁ, কিছু অসাধারণ কবিতা। নিজের সাথে নিজের কথা। ভালো লাগার, খারাপ লাগার, হাহাকারের গল্প।
সুমিতা দেবী। জহির রায়হানের স্ত্রী। শ্বশুরের কথায় ধর্ম, অভিনয় বিসর্জন দিয়ে বিয়ে করেছিলেন। এতো ত্যাগে পাওয়া জহিরকে ভালোবেসেছিলেন প্রচন্ডভাবে। জহিরের মনে হল শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে গেলেন। তাইতো তাদের আর একসাথে থাকা হলো না। সুমিতা দেবীকে লেখা পঁচিশ পৃষ্ঠার এই চিঠিতে ফুটে উঠেছে আক্ষেপ, হাহাকার, অক্ষমতা।
আমরা ঘর বাঁধতে চেয়েছিলাম।
বেঁধেও ছিলাম।
ভেঙেও দিলাম।
কী সুখে ছিলাম আমরা জানি না।
কী দুঃখে ছিলাম তাও জানা নেই।
শুধু জানি,
আমরা আর একসঙ্গে নেই।
আমার আর কোনদিন একসঙ্গে থাকব না।
স্বপ্ন দেখব না।
ভালোবাসব না।
মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে হঠাৎ কখনো একে অন্যকে কাছে টেনে নেব না।
বৃষ্টির দিনে, আধো অন্ধকার ঘরে বসে দুজনে, নানা কল্পনার আলপনা আঁকব না।
কিংবা, কোন পড়ন্ত বিকেলে হঠাৎ হঠাৎ বাইরে থেকে এসে শুধোব না, আমার রুমালটা কোথায়? শার্টের বোতামটা লাগিয়ে দিতে বলেছিলাম, লাগাও নি যে?
আর বলব বা।
কোন দিনও না।
দেখলে তো, জীবনটা কী নির্মম।
স্ত্রীর সাথে আইনগতভাবে বিচ্ছেদ হয়নি। কিন্তু দুরত্ব তো ছিলোই। আপনি বলা আর সুমিতা না ডেকে মিঠু-বিপুলের মা বলা কি স্বাভাবিক? স্ত্রীর সুখ কামনা করলেন, বিয়ে করার অনুরোধও করলেন, অনুরোধ করলেন বাচ্চাদের তাদের বাবার কথা জানানোর। মনের গহীনে কি তাকে কাছে পাওয়া ইচ্ছেও ছিল?
আমি আর তুমি।
বুড়ো আর বুড়ি।
পাশাপাশি বসে।
দুজন দুজনের দিকে চেয়ে থাকব।
আমরা নীরবে কাঁদব।
শব্দ করে হাসব।
আবার দুজন দুজনকে ভালোবাসব।
চিঠিটা পড়ে আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। মানুষ এতো সুন্দর করে চিঠি লিখতে পারে? যেন কোন গল্প পড়ছিলাম!
বইটির কিছু অংশ পড়তে ভিজিট করুন রকমারি ডট কম।
বইটির লিঙ্কঃ হঠাৎ বাবার পঁচিশ পাতায় (হার্ডকভার)
বইটির গায়ের মূল্যঃ ১৬০ টাকা
কিংবদন্তী জহির রায়হানের আত্মকাহিনী ও একটি অপমৃত্যু !
জাহানারা ইমাম – এক শহীদ জননীর গল্প !