বিশ শতকের গোড়ার (আনুমানিক ১৯১২ সাল) দিকে নিউ ইয়র্ক থেকে রোমের ভিলা মন্দ্রাগনির কাছে এসে থামলেন এক পোলিশ এ্যান্টিক সামগ্রীর ডিলার। তিনি কিছু প্রাচীন মূল্যবান বই খুঁজছিলেন। এই আমেরিকান ডিলারের নাম মিস্টার উইলফ্রিড ভয়েনিচ। কোনো এক জেসুইট স্কুলের অনেক ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ, পান্ডুলিপি ভিলা মন্দ্রাগনিতে সংরক্ষিত ছিল। ভয়েনিচ যে ট্রাংকটা খতিয়ে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন, সেটা এসেছিল ১৭ শতকের অন্যতম একজন জ্ঞানী ব্যক্তি এ্যাথেনেসিয়াস কার্চার এর কাছ থেকে।সেই ট্রাংকে অনেকগুলো পান্ডুলিপির মধ্যে কিছুটা আলাদা, অস্বাভাবিক ধরনের একটা পান্ডুলিপি ছিল। ভয়েনিচ সেই পান্ডুলিপিটাই কিনে নিলেন। তাঁর নামানুসারেই পান্ডুলিপিটির নাম হয়ে গেছে, ভয়েনিচের পান্ডুলিপি ।
ভয়েনিচ পান্ডিডুলিপিটা ডিসাইফার করার চেষ্টা করলেন। বাকী জীবন তিনি কেবল এই একটা কাজই করে গেলেন। কিন্তু সমাধানের কোনরূপ কুল-কিনারা করার আগেই ভয়েনিচের জীবনাবসান ঘটল। ভয়েনিচের মৃত্যুর পর এই পান্ডুলিপির স্থান হলো ইউনিভার্সিটি অব ইয়েলের দুষ্প্রাপ্য পুরনো বইয়ের গ্রন্থাগার এবং সংগ্রহশালায়। ইয়েলের এই গ্রন্থাগারটি বইপোকাদের জন্য এক রত্নের আকর, কিন্তু ভয়েনিচের পান্ডুলিপির মতো আর কোনো পান্ডুলিপিই এত বিখ্যাত নয় সম্ভবত।
তারপরে অনেক জল গড়াল ডিসাইফার এবং কোডিং এর জগতে। অনেক চেষ্টা চলল। ভয়েনিচের পান্ডুলিপির অর্থ উদ্ধার করা সম্ভব হলো না। যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের সার্ভিস ডিরেক্টর উইলিয়াম ফ্রেডরিক ফ্রেইডম্যানের মতো বিশ্বখ্যাত ক্রিপটোগ্রাফার পর্যন্ত ব্যর্থ হলেন এই পান্ডুলিপির অজানা অক্ষরের অর্থ উদ্ধারে (যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স জাপানের ভার্বাল কোডের অর্থ উদ্ধারে সফল হয়েছিল)। শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে হাল ছেড়ে দিল ইউএস মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স, যারা কিনা কোড এ্যান্ড সাইফারের কেইসে একের পর এক সাফল্য দেখিয়েছিল।
কী লুকিয়ে আছে ২৫০ পৃষ্ঠার এই পান্ডুলিপির এইসব অজানা অক্ষর কিংবা সংকেতের জটাজালে?
এটা কি কোনো প্রেমের পত্রাবলির পান্ডুলিপি? কোনো মিলিটারি যোগাযোগের উপায়? নাকি কোনো গোপন, নিষিদ্ধ জ্ঞানের খনি? কয়েকশ’ বছর ধরে এমন সব প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল সবার মনে।
কেমন এই রহস্যময় পান্ডুলিপিটির চেহারা? একটা শাদামাটা এক রঙা বাদামী কভারে মোড়া, ওপরে কোনো শিরোনাম নেই, নেই কোনো লেখকের নামও। ভেতরে একটি চিঠি রয়েছে, যার খামের ওপর এথেল ভয়েনিচের (ভয়েনিচের স্ত্রী) নাম সই করা। চিঠিতে বলা আছে, এথেলের মৃত্যুর আগে কেউ যেন এর সাংকেতিক অর্থ উদ্ধারের কোনো চেষ্টা না করে। এমনকি মৃত্যুর পরেও যেন সেটা কেবল তাঁর মনোনীত ব্যক্তির ( এ এম নীল) হাতে দেয়া হয় কিংবা সেই মনোনীত ব্যক্তির অবর্তমানে তারই বিশ্বস্ত কাউকে।

প্রথম দর্শনে পান্ডুলিপিটিকে অগুরত্বপূর্ণ কিছু বলেই মনে হয়। বয়স এর অবস্থাকে করেছে আরও খারাপ। ওপরের কভারের বাদামী রঙ মলিন হতে হতে প্রায় হারিয়ে গেছে। মুচড়ে গেছে। পাতাগুলোর মাঝে মাঝে গর্ত করেছে বইখেকো পোকা। কিন্তু এর বাহ্যিক জীর্ণ চেহারার পরও পান্ডুলিপিটি এখনো অভিনব। এর ভেতরে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা জুড়ে নিখুঁতভাবে আঁকা রয়েছে প্রায় কোনো এক অজানা ভাষার ১৭০০০০ অক্ষর, প্রতিটি আলাদাভাবে। আঁকা রয়েছে এমন অনেক অদ্ভুত ছবি, যা দেখে ঠিক আঁচ করা যায় না কিসের ছবি।

ছবিগুলো আঁকা হয়েছে লাল, সবুজ, নীল এবং হলুদ রঙে। কখনো কখনো তুলির আঁচড়ে কোনো যত্নের তোয়াক্কা করা হয়নি। রয়েছে নাম না জানা উদ্ভিদ আর ফুলের ছবিও। অদ্ভুত দর্শন কিছু নগ্ন গর্ভবতী মহিলার ছোট ছোট জলাধারে স্নান করার দৃশ্য রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে টিউবের মতো, আবার কোথাও কোথাও স্লাইডের মতো কিছু জুড়ে দেয়া।

ছবি অনুসারে মোট চারটি পর্যায়ে পান্ডুলিপিটি ভাগ করা বলে মনে হয়। নানান রকমের ধারণা করা যায় এটা সম্পর্কে, এবং অদ্ভুতভাবে প্রায় সবকটিই কোনো না কোনোভাবে খাপ খেয়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়। কোনো কোনো গবেষক বলেছেন, এটা অবশ্যই কোনো উদ্ভিদ বিজ্ঞানের এবং বনজ ওষুধবিদ্যার বই। বইয়ে আঁকা ফুল, উদ্ভিদ আর উদ্ভিদের মূল দেখে তাই মনে হয় অন্তত। আবার, নক্ষত্রের তালিকা এবং অনুপুঙ্খ ছবি দেখে কেউ কেউ এটাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বই বলেও ভেবেছেন। আবার কিছু কিছু পৃষ্ঠায় দৃষ্টি সম্পর্কীয় ঘটনার ছবি আঁকা রয়েছে। আরও অবাক কান্ড হলো, ছবিগুলোকে যদি পর্যায়ক্রমে সাজিয়ে গতি দেয়া হয়, মানে দ্রুত পৃষ্ঠা উল্টানো হয়, সেগুলোকে জীবন্ত বলে মনে হয়।

কিন্তু এইসব উদ্ভিদ, জ্যোতিষ্ক, দৃষ্টি সম্পর্কীয় ছবির সমন্বয়ের মানে কী আদতে? আর ছোট ছোট জলাধারে নগ্ন মহিলাদের স্নানের দৃশ্য দিয়েই বা আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? এটা কি কোনো রোগ প্রতিরোধী ওষুধি স্নানের রেসিপি, নাকি যৌবন প্রাপ্তির উপায় বর্ণিত হয়েছে এতে? কেনইবা সাংকেতিক ভাষায় লেখা হলো এমন একটি জ্ঞানমূলক বই? কোনো প্রতিভাবান ডাক্তার কি তাঁর সমসাময়িক ডাক্তারদের কাছ থেকে তাঁর উদ্ভাবন আর আবিষ্কারকে লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন? নাকি এমন কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীর কাছ থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন, যারা জ্ঞানের নানান শাখার মুলোৎপাটন করতে চেয়েছিল সেই সময়?
কে এই পান্ডুলিপিটির লেখক? এর জন্মের উৎস কোথায়?
সেই উত্তর খোঁজার চেষ্টায় সবচে’ এগিয়ে ছিলেন ভয়েনিচ নিজেই। তিনি মূল পান্ডুলিপিটির একটি কপি তৈরি করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে দুর্ঘটনাক্রমে একটি লেখা ভেসে ওঠে পান্ডুলিপির প্রথম পৃষ্ঠায়। আধুনিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে অতি বেগুনী রশ্মি প্রয়োগ করে দেখা গেছে, সেই গোপন লেখাটি আসলে একটি নাম-‘ইয়াকুবা’। তাহলে কি এর লেখক ইয়াকুবা? নাকি ইয়াকুবা প্রথম চেষ্টা করেছিলেন এর অর্থ উদ্ধারের?
ইয়াকুবা ছিলেন সতের শতকের একজন ভ্রমচারী ডাক্তার, যিনি কিনা ওষুধি গাছের ব্যাপারেও অভিজ্ঞ ছিলেন। তাঁর খ্যাতি দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল সে সময়। ১৬০৮ সালে তাঁর ডাক পড়ে প্রাগের রাজা দ্বিতীয় রুডফ-এর দরবারে। দ্বিতীয় রুডফ ছিলেন বিষন্নতার রোগী। প্রায়ই তিনি রাজকার্য ফেলে মন খারাপ করে বসে থাকতেন। ‘টেপেন ইচেস’ নামক বনজ ওষুধ ব্যবহার করে ইয়াকুবা রাজার বিষণ্ণতা সারানোর চেষ্টা করেন। এই ওষুধ রাজার বিষণ্ণতা রোগ সারাতে সক্ষম হয়। কৃতজ্ঞতার মূল্য স্বরূপ রাজা দ্বিতীয় রুডফ ইয়াকুবাকে রাজ বৈদ্য ঘোষণা করেন। কিন্তু একজন ডাক্তার কেন তাঁর ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়াকে এরকম সাংকেতিক ভাষায় লিখে যাবেন?
পান্ডুলিপিতে আঁকা উদ্ভিদের ছবিগুলোর রিয়েল লাইফের সঙ্গে সাদৃশ্য অনেক কম। দেখে মনে হয়, ছবিগুলো যেন কিছুটা প্রতীকী ধরনের। এমনকি মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের অনুপাতও ঠিক নেই নারী দেহের ছবিগুলোতে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়েনিকে লাইব্রেরির (১৯৬৯ সাল থেকে পান্ডুলিপিটি এখানেই সংরক্ষিত আছে) কিউরেটর কেভিন র্যাপ মনে করেন, ষোল-সতের শতকের পূর্বে চিত্রকর্মে ডিটেইল ফুটিয়ে তোলার দিকে অতটা গুরুত্ব দেয়া হত না। বরং কী আঁকা হচ্ছে, কেন আঁকা হচ্ছে, এসব বিষয়কেই মূখ্য মনে করা হত। কিন্তু আপনি যদি সতের শতকের চিত্রকর্ম দেখেন, তাহলে লক্ষ্য করবেন, সেগুলো অনেক ডিটেইল এবং রিয়েলিস্টিক। কোনো উদ্ভিদের ছবি দেখেই বাস্তবের সঙ্গে সহজে মেলাতে পারার মতো।“

যাই হোক, এর মানে হলো, পান্ডুলিপিটি আসলে তারও আগের। তাহলে তা ইয়াকুবার কাছে এলো কী করে? একটা সূত্র আন্দাজ করা যায় পান্ডুলিপির ভেতরে পাওয়া একটি চিঠি থেকে। চিঠিটিতে সময়কাল উল্লেখ করা আছে ১৬৬৫ সাল, এবং এর লেখক হলেন বোহেমিয়ান ডাক্তার জোহানেস মার্কোস মার্সি। আর চিঠিটি লেখা হয়েছিল রোমের সেই প্রাজ্ঞ ব্যক্তি এ্যাথেনেসিয়াস কার্চারের কাছে, যার কথা প্রথমেই বলা হয়েছে। এ্যাথেনেসিয়াসকে একজন বিজ্ঞানী মনে করা হয়, সেই সঙ্গে বহু ভাষাবিদও। এমনকি কেউ কেউ বলে থাকেন, এ্যাথেনেসিয়াসের দুনিয়ার সব ভাষাই জানা ছিল।
ধারনা করা হয়, মার্সি হয়ত এই পান্ডুলিপি অনূদিত করার উদ্দেশ্যেই কার্চারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। আর কার্চারের কাছ থেকে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে পান্ডুলিপিটিও কিনে নিয়েছিলেন রাজা দ্বিতীয় রুডফ, ওষুদি উদ্ভিদ এবং আলকেমির প্রতি ঝোঁক বশত। এমন ধারনার কারণ হলো- রাজা দ্বিতীয় রুডফ ছিলেন বিজ্ঞান প্রচারের একজন প্রতিভূ। তাঁর সময়ে প্রকৃতি বিজ্ঞান এবং ম্যাজিকের মধ্যে তেমন পার্থক্য টানা হত না। রুডফের প্রাচীন বই-পুস্তক এবং জাদুকরী জিনিসের সংগ্রহও ছিল চমকে দেয়ার মতো। আর ভয়েনিচের ঐ পান্ডুলিপিও ছিল সেসবের মধ্যে। রুডফ তাঁর এই সংগ্রহশালার পেছনে এত ব্যয় করেছিলেন যে, তাঁর মৃত্যুর পর দেখা গেল, তিনি চতুর্দিকে ঋণ করে রেখেছেন। ইয়াকুবা রাজার এই ঋণ শোধের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সেই উদ্দেশ্যে তিনি সেই সংগ্রহশালার সামগ্রী বিক্রি করেন। সম্ভবত এভাবেই ‘ ভয়েনিচের পান্ডুলিপি ‘ ইয়াকুবার মালিকানাধীন হয়।
তবে কার্চারের কাছে লেখা মার্সির সেই চিঠিতে ‘ ডক্টর রজার বেকন’ নামে একজনের উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি মার্সি তাকে পান্ডুলিপির লেখক বলেই উল্লেখ করেন। আবার বলছি, নামটি হলো- রজার বেকন। রজার বেকন ছিলেন ১৩ শতকের একজন ধর্ম যাজক, যাকে তখনকার সময়ে ‘ডক্টর মিরাবিলিস’ নামে ডাকা হত। ‘মিরাবিলিস’ শব্দটি এসেছে ‘মিরাক্যুলাস’ থেকে। প্রকৃতপক্ষেই বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ঘটনা সম্পর্কে রজার বেকনের ইনসাইট ছিল তাঁর সমসাময়িকদের মধ্যে ঈর্ষনীয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণার কারণে চার্চের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধছিল তাঁর। এমনকি বিভিন্ন সময় চার্চের হুকুমে তাঁকে বন্দীও করা হয়।
উল্লেখ করবার মতো বিষয় হলো, রজার বেকন ওরফে ডক্টর মিরাবিলিসের অপটিক্যাল সায়েন্সেও যথেষ্ট আগ্রহ ছিল। তিনি রঙধনু সৃষ্টির ব্যখ্যা খুঁজে পেয়েছিলেন। আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ নিয়েও নিরীক্ষা করেছিলেন তিনি। এমনকি ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়েও। ভয়েনিচের পান্ডুলিপিতে এমন কিছু ছবি আছে, যে্রকমটা সাধারণত অনুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে দেখা যায়। হতে পারে প্রকৃতির ক্ষুদ্র জগতের প্রথম ইনসাইট ধারণ করছে এই পান্ডুলিপি। তাহলে কি চার্চের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াবার উদ্দেশ্যেই এমন সাংকেতিক ভাষার আশ্রয় নিয়েছিলেন রজার বেকন? কিন্তু ক্ষুদ্র জগতের ডিটেইল দেখার মতো অণুবীক্ষণ যন্ত্র তো তখনো আবিষ্কারই হয়নি। তবে? রজার বেকন অবশ্য দৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের নিরীক্ষায় লেন্স ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর সেই লেন্স কি শক্তিশালী ম্যাগফিকেশনে সমর্থ ছিল? আবার, পান্ডুলিপির কিছু কিছু ছবি বৈজ্ঞানিক ঘটনার চেয়েও বরং অবাস্তব আর কাল্পনিক বলেই মনে হয়। ঠিক এই ঘটনাগুলোই একটি সন্দেহের জন্ম দেয়। ভয়েনিচ দ্য এ্যান্টিক ডিলার নিজেই একজন জালিয়াত নয় তো? এমন কি হতে পারে, সে নিজেই কোনো প্রাচীন বই দেখে দেখে একটি কপি তৈরি করেছে? কিংবা বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন ছবিগুলো সে নিজেই এঁকেছে? পান্ডুলিপির প্রতিটি ছবি, প্রতিটি সংকেতও কোনো রকম কাটা-ছেঁড়ার লক্ষণ নেই। ২৫০ পৃষ্ঠার একটা পান্ডুলিপির এতগুলো ছবি, এতগুলো সংকেত কোন রকম ভুল করা ছাড়াই আঁকা হলো? যদি সত্যিই জালিয়াতি হয়ে থাকে, তবে কোনো না কোনো ভুলের চিহ্ন ভয়েনিচের পান্ডুলিপি তে থাকবেই।

গবেষকরা খতিয়ে দেখলেন তাও। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পান্ডুলিপির পার্চমেন্টের টেক্সচার, কালি, রঙ সবকিছু নিয়েই তাঁরা গবেষণা করলেন, এবং এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, এই পান্ডুলিপিতে মোটেও কোনো জালিয়াতির চিহ্ন নেই। এটা অবশ্যই মূল পান্ডুলিপি। তাহলে সত্যি ঘটনা কী? কত যে গুজব ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ভয়েনিচের পান্ডুলিপি কে কেন্দ্র করে। কোনো কোনো চিত্র গবেষক তো এমনও মনে করেছেন যে, এটা নিশ্চয়ই লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির শিশুবেলায় আঁকা একটা নোটবুক। কেননা- পান্ডুলিপিটি যদি ষোল সতকের আগের হয়ে থাকে, তবে তো তা ভিঞ্চির শৈশবের সময়ের হওয়াই সম্ভব। আবার কেউ কেউ এই ধারনা উড়িয়ে দিয়েছেন এই মর্মে যে, ‘ ভয়েনিচের পান্ডুলিপি ‘র ছবিগুলো যে ধরনের ছবি, তা কোনো আর্ট প্রডিজির স্বাক্ষর বহন করে না। ভিঞ্চি যে একজন আর্ট প্রডিজি, তাতে তো কারোরই দ্বিমত নেই। তবে একটা বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, যার হাতেই ছবিগুলো আঁকা হোক না কেন, ছবি আঁকায় ভালো দক্ষতা ছিল সেই ব্যক্তির। যে ধরনের রঙ দিয়ে ছবিগুলো আঁকা হয়েছিল, সেরকম রঙ দিয়ে পার্চমেন্টে আঁকা মোটেও কোনো সহজ কাজ নয়।
রহস্যময় ভয়েনিচের পান্ডুলিপির শেষ আপডেট কী? ২০১৯ সালে এসে কয়েক জন এ্যাকাডেমিকস কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি ব্যবহার করে এর অর্থ উদ্ধারে সফল হয়েছেন বলে দাবী করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, এর ২০ ভাগ হিব্রু এবং বাকী ৮০ ভাগ বিশ্বের অন্যান্য নানান ভাষায় লেখা। গুগল ট্রান্সলেটর এ্যালগরিদম ব্যবহার করে এর উদ্ভিদ বিজ্ঞান সম্পর্কিত অধ্যায় থেকে ‘light’, ‘air’, ‘fire’, ‘farmer’ এরকম শব্দ পাওয়া গেছে। তবে গুগল ট্রান্সলেটর এ্যালগরিদমের বৈজ্ঞানিক জটিলতার কারণে তাও খুব একটা নিশ্চিত নয়। আর ভয়েনিচ কম্যুনিটি তো যাচাই-বাছাই করে সমস্ত ফলাফলই বাতিল করে দিয়েছে। ফলে, একটি প্রশ্ন রয়েই গেল, সবচে’ বড় প্রশ্ন—
“কী রয়েছে ‘ ভয়েনিচের পান্ডুলিপি ‘র এসব সংকেতের আড়ালে?”
তথ্যসূত্র-
https://www.youtube.com/watch?v=UZEHBkBlalc
https://www.youtube.com/watch?v=awGN5NApDy4
https://beinecke.library.yale.edu/collections/highlights/voynich-manuscript
https://www.nationalgeographic.com/news/2018/02/voynich-manuscript-cipher-code-hebrew-europe-spd/
https://www.nationalgeographic.com/news/2018/02/voynich-manuscript-cipher-code-hebrew-europe-spd/