বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা কিংবা টিকে থাকার জন্য দরকার সঠিক পরিকল্পনা, পাঠ ও সময় ব্যবস্থাপনা। গোটা বই বা বিশাল সিলেবাস দেখে মাথা খারাপ না করে নিজের লক্ষ্য ঠিক করে তুলনামূলক কম পড়েও প্রিলিতে পাস করা যায়। এই সাজেশনটি তাদের জন্য, যারা মূলত অল্প সময়ে প্রস্তুতি গ্রহণের ক্ষেত্রে হিমশিম খান।
বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বিষয়ভিত্তিক পাঠ্য পরামর্শ
★ বাংলা ★
লাল নীল দীপাবলী — হুমায়ুন আজাদ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য জিজ্ঞাসা — সৌমিত্র শেখর
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ — নবম-দশম শ্রেণির বোর্ড বই
★ ইংরেজি ★
English Lit 101— Brian Boone (ইন্টারনেটে ফ্রি পাবেন)
A Passage to English Language — SM Zakir Hussain
English Grammar in Use — Raymond Murphy
★ ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ★
ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা — জয়কলি সম্পাদনা পরিষদ
জয়কলি ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
★ সাধারণ বিজ্ঞান ★
বিজ্ঞান — নবম দশম শ্রেণীর বোর্ড বই
পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান — বোর্ড বই (শুধু প্রথম অধ্যায়)
★ কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি ★
ইজি কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি — ড. মোঃ শাহনেওয়াজ হোসেন
কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি — প্রফেসর্স
ওরাকল বিসিএস বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
★ গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা ★
বিসিএস প্রিলিমিনারি গাণিতিক যুক্তি — ওরাকল
অ্যাসিওরেন্স ম্যাথ এমসিকিউ
বিসিএস প্রিলি আই কিউ (মানসিক দক্ষতা) – জয়কলি
★ নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন ★
অ্যাসিওরেন্স ভূগোল, পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
জয়কলি — নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন
গুগলে Ethics, Values, Good Governance লিখে আলাদা আলাদা সার্চ দিবেন। UNDP, World Bank, UN ইত্যাদি ওয়েবসাইটে এগুলো নিয়ে আর্টিকেল আর সংজ্ঞা পড়বেন।
★ বাংলাদেশ বিষয়াবলি ★
সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সংবিধান — আরিফ খান
সাধারণ জ্ঞান (বাংলাদেশ অংশ) — দুর্মর সিরিজ পাবলিকেশন
বেসিক ভিউ ( প্রিলিমিনারি )
তথ্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশের মানচিত্র
★ আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ★
বেসিক ভিউ ( প্রিলিমিনারি )
সাধারণ জ্ঞান (আন্তর্জাতিক অংশ) — দুর্মর সিরিজ পাবলিকেশন
অন্যান্য
১। যে কোনো এক সেট বিসিএস প্রিলি গাইড কিনে নিন।
২। যে কোনো একটা জব সলিউশন কিনে বিগত কয়েক বছরের সরকারি চাকুরিগুলোর প্রশ্ন সলভ করবেন।
আরও পড়ুন- ‘বিসিএস’ ভালো করতে জানতে হবে যে সকল উপায়
প্রিলির আগে কেমন রুটিন ও পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিলে পরীক্ষায় ভালো করা যাবে দেখে নিই —
১। সবার আগে বিসিএস প্রিলিমিনারির সিলেবাসটি খেয়াল করে দেখুন। কোন কোন টপিকে আপনার দুর্বলতা আছে—নোট করুন। প্রত্যেক বিষয়ের যে যে টপিক একেবারেই বোধগম্য নয় বা অল্প সময়ে আয়ত্ত করা সম্ভব হবে না বলে মনে হবে, সেগুলো বাদ দিন (তবে তাই বলে কোনো বিষয় সম্পূর্ণ বাদ দেবেন না)। ২০০ নম্বরের মধ্যে এভাবে ৪০-৪৫ নম্বর বাদ দিয়ে তুলনামূলক সহজ ১৫৫-১৬০ নম্বরের ওপর জোর প্রস্তুতি শুরু করুন। জটিল টপিক বা বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করতে গিয়ে অযথা নষ্ট করার মতো সময় এখন নেই। প্রিলিতে পাস করতে হলে সাধারণত ২০০ নম্বরের মধ্যে ১৩০ নম্বর পেলেই চলে। তার মানে, প্রশ্নপত্রের ৭০ নম্বর বাদ গেলেও সমস্যা নেই। এ কথাটি মাথায় রেখে প্রস্তুতির ছক সাজাবেন।
২। দিন-রাত মিলে ১০-১২ ঘণ্টা সময় (নিজের সুবিধামতো) ধরে একটি রুটিন তৈরি করুন। পাঠ-পরিকল্পনার সঙ্গে রুটিন ভারসাম্যপূর্ণ হলে এবং নিয়মিত অনুসরণ করলে তিন মাসেই প্রিলি পাস করার মতো প্রস্তুতি হয়ে যাবে। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ বিষয়াবলী ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর মতো বড় বিষয়গুলোর জন্য এক স্লটে এক থেকে দেড় ঘণ্টা করে সময় নির্ধারণ করুন। প্রতি ৪৫ মিনিট বা ১ ঘণ্টা পরপর ৫-১০ মিনিটের হালকা ব্রেক নিন। পড়ার সময় অকারণে ঘন ঘন টেবিল ছেড়ে উঠবেন না, মনোযোগ নষ্ট হবে। জব সলিউশন (বই) থেকে প্রতিদিন দু-একটি করে প্রিলির প্রশ্নপত্র সমাধান (উত্তরের ব্যাখ্যাসহ) করুন।
প্রশ্নের উত্তরের ব্যাখ্যা অংশের সূত্র ধরে মূল বই থেকে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নোট করে রাখুন। এ পদ্ধতি খুবই কার্যকর। এভাবে ২০-২৫ দিনে ৩০টি প্রশ্নপত্র শেষ হয়ে গেলে পিএসসিসহ অন্যান্য নন-ক্যাডারের পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধানের চেষ্টা করুন। একই সঙ্গে ভালো মানের একটি মডেল টেস্ট বই থেকে ঘড়ি ধরে প্রতিদিন অন্তত একটি মডেল টেস্ট দিন। এরপর নিজেই নিজের উত্তর মূল্যায়ন করুন এবং না পারা প্রশ্নগুলো সমাধান করুন। প্রিলি পরীক্ষার আগের দিন পর্যন্ত মডেল টেস্ট চালিয়ে যান। কষ্ট করে হলেও অন্তত দুই মাস রুটিনমাফিক প্রস্তুতি নিন। দেখবেন আপনার সিলেবাসের বড় অংশই শেষ হয়ে গেছে।
৩। খুব ভোরে উঠে পড়ার অভ্যাস করুন। এ সময়ে মস্তিষ্কের গ্রহণ ও ধারণক্ষমতা সর্বোচ্চ থাকে; চারপাশটাও কোলাহলমুক্ত থাকে, তাই পড়ায় মন দেওয়া যায়। খুব ভোরে ওঠা যাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়, তাঁরা তাঁদের সুবিধামতো সময় ঠিক করেই রুটিন তৈরি করুন। রুটিনের জন্য হঠাৎ করে এমন কোনো অভ্যাস পরিবর্তনের দরকার নেই, যার জন্য শারীরিক বা মানসিক সমস্যা হতে পারে; বরং দৈনন্দিনের সব কিছুর সঙ্গে ভারসাম্য রেখেই রুটিন সাজাতে হবে।
৪। গণিতের যে সমস্যাগুলো সমাধান করতে সাধারণভাবে এক-দেড় পৃষ্ঠা খরচ হয়, সেসব সমস্যা প্রিলি পরীক্ষায় সমাধান করতে হবে ২-৩ সেকেন্ডে। এ ক্ষেত্রে গণিতের শর্টকাট পদ্ধতি ব্যবহার করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ব্যাপক চর্চা ছাড়া নিজস্ব শর্টকাট পদ্ধতি তৈরি করা সহজ নয়। রুটিনে গণিত চর্চার জন্য বাড়তি সময় বরাদ্দ রাখবেন। বাজারে গণিত শর্টকাটের বই পাওয়া যায়, সেগুলোও ফলো করতে পারেন। গণিতের প্রয়োজনীয় সব সূত্র একত্র করে নোট করে রাখুন।
৫। বিগত ছয় মাসের চাকরির প্রস্তুতিসংক্রান্ত মাসিক ম্যাগাজিন সংগ্রহ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ খবর ও তথ্যগুলো লাল কালিতে দাগিয়ে রাখুন বা নোট করুন। দৈনিক পত্রিকা লম্বা সময় নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার দরকার নেই, এটা প্রিলির জন্য তেমন কাজে আসবে না; বরং অল্প সময়ে চোখ বুলিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য চোখে পড়লে নোট করে রাখুন।
৬। পড়ার সময় ফেসবুকসহ সব ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন রাখুন। অপ্রয়োজনীয় গল্প, আড্ডা থেকে দূরে থাকুন। এসবে আপনার সময় ও মনোযোগ দুটিই নষ্ট হবে। পড়ায় মন বসে যাওয়ার পর কোনোভাবে অন্যমনস্ক হলে পড়ায় মনোযোগ ফেরানো সম্ভব না-ও হতে পারে।
৭। যা পড়ছেন, সেগুলো প্রতি সপ্তাহে অন্তত এক দিন রুটিনমাফিক রিভিশন দিন; তা না হলে শেখা বিষয়বস্তুগুলোও ভুলে যাবেন। বারবার পড়লে কিংবা রিভিশন দিলে বিষয়বস্তুগুলোর ওপর ধারণা আরো স্পষ্ট হবে, দীর্ঘদিন মনে থাকবে।
৮। বিসিএসে ভালো প্রস্তুতির জন্য গ্রুপ স্টাডি বা দলীয় পাঠ ও আলোচনা খুব ফলপ্রসূ। দুই ধরনের বিসিএস পরীক্ষার্থী আছে — কেউ বিসিএস ক্যাডার হওয়ার জন্য পরীক্ষা দেন, আর কেউ লোক-দেখানো বা কারো দেখাদেখি পরীক্ষা দেন। তাই পরীক্ষার জন্য সিরিয়াস ও ভালো জানাশোনা প্রার্থীদের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করুন। যে সময়টায় বাসায় পড়তে ইচ্ছা করে না অর্থাৎ বিকেল-সন্ধ্যায় এই সময়টাকে গ্রুপ স্টাডির জন্য বেছে নিন। সহজে মনে থাকে না বা বুঝতে অসুবিধা হয় এমন বিষয়বস্তু নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করুন।
৯। চাকরিজীবী হলে পরীক্ষার আগে কমপক্ষে এক মাস ছুটি নিন। যাঁদের অফিসে কাজের খুব একটা চাপ নেই তাঁরা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে অফিসেই কিছুটা পড়াশোনা করতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ত সময় পার করে সময় বের করে প্রস্তুতি নিয়ে বিসিএসে কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পেয়েছেন, এমন অনেক নজির আছে। আর যদি কেউ মনে করেন, চাকরির জন্য বিসিএস প্রস্তুতি ঠিকঠাক নিতে পারছেন না, আরো ভালোভাবে প্রস্তুতি নিলে অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার পাবেন, এমন আত্মবিশ্বাস থাকলে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকিও নিতে পারেন।
১০। নিজেই নিজের প্রশাসক হোন। পড়াশোনায় অলসতা বা বিরক্তি এলে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বা জোর খাটান। কোনো বিষয়বস্তু নিয়ে পাঠ পরিকল্পনা ঠিক হয়ে যাওয়ার পর দেরি না করে পড়া শুরু করে দিন। নিজেই চিন্তাভাবনা করে যে রুটিন তৈরি করেছেন, সেটা মেনে চলার জন্য নিজেকে বাধ্য করুন। একসময় দেখবেন — এই রুটিনেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।
১১। যারা অযথা বেশি বা অপ্রয়োজনীয় কথা বলেন, তাদের এড়িয়ে চলুন। যারা বিসিএস ক্যাডার পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হননি বা ন্যূনতম ভাইভা পর্যন্ত যেতে পারেননি, বিসিএস প্রস্তুতির বেলায় তাদের থেকে পরামর্শ নিতে গিয়ে নেতিবাচক কথা শুনে মন খারাপ করার দরকার নেই। আপনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানেই পড়ুন, অনার্সের বিষয় যা-ই হোক, গ্রামের হন কিংবা শহরের — ওসব নিয়ে ভেবে মাথা খারাপ করবেন না। নিয়মিত সময় ধরে পরিকল্পিতভাবে প্রস্তুতি নিলে পাস করা খুব একটা কঠিন হবে না।
১২। সবশেষ কথা হলো, কৌশলী হোন, পড়াশোনায় সময়ের পাশাপাশি মানসিক শক্তির সর্বোচ্চটা প্রয়োগ করুন। পরীক্ষার আগের এই কয় মাসের সঠিক সিদ্ধান্ত, সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার, বুদ্ধিমত্তা ও পরিকল্পনাই আপনাকে প্রিলি পাসের জন্য উপযুক্ত করে তুলবে।
এক নজরে দেখে নিই বিসিএস প্রস্তুতির বইসমূহ