আপনি যদি কিছু কোম্পানির আর্দশ কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারার কারণসমূহ অনুসন্ধান করতে চান কিংবা কেন-ই বা কোম্পানিগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী দাঁড়াতে পারে না তা জানতে চান। যদি বুঝতে চান কেন একটি কোম্পানি রাতারাতি ধ্বসে পড়ে তাহলে আপনাকে আর অন্য কিছু খুঁজতে হবে না, আপনি শুধু ঐ কোম্পানির লিডারশীপ টিমের দিকে তাকান তাহলে আপনি আপনার প্রশ্নেগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন। একটি ভালো নেতৃত্ব যেখানে কর্মীদের পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি, কর্মে গতিশীলতা আনয়ন এবং কোম্পানির সার্বিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে সেখানে একটি যোগত্যাহীন নেতা কর্মক্ষেত্রে বিষবাষ্প ছড়ায় যা কর্মীদের কর্মক্ষমতা এবং কোম্পানির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট। পরিসংখ্যান বলে একজন পটু কর্মীকে নিয়োগ দেয়ার থেকে একজন অযোগ্য নেতাকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে একটি কোম্পানি অধিক লাভবান হয়ে থাকে।
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে শনাক্ত করবেন একজন অপটু নেতাকে?
সাধারণত যোগ্যতাহীন নেতা বলতে ঐ নেতাকে বুঝায় যে তার অধীনস্থ কর্মী, অনুসারী এবং প্রতিষ্ঠানকে দক্ষতার সহিত পরিচালনা করতে ব্যর্থ যার ফলস্বরূপ তার অধীনস্থ লোকজন এবং প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে থাকে। তারা নিজেদের ব্যর্থতা অন্যের উপর বা ভাগ্যের উপর চাপাতে অধিক আগ্রহী হয়ে থাকে।
লেখক অমিত কালান্তরী তার Wealth of Words বইয়ে বলেছেন,
” একজন যোগ্যতাহীন মানুষ তার অক্ষমতা ঢাকার জন্য অধীনস্থদের সাথে রাগান্বিত হয়ে থাকে।” এই কাজটি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত হয় নি:সন্দেহে এটি পুরো কর্মক্ষেত্রকে বিষিয়ে তোলে।
একজন অপটু বা যোগত্যাহীন নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল অজ্ঞতা এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া। অধিকাংশ অযোগ্য নেতা-ই অজ্ঞতায় ডুবে থাকে কিন্তু সর্বোৎকৃষ্ট ফলাফল তখনই পাওয়া যায় যখন আত্মবিশ্বাস (আপনি নিজেকে যতটা ভাল মনে করেন) এর সাথে যোগ্যতার (আপনি আসলে যতটা ভাল) অধিক পরিমাণে মিল পাওয়া যায়। অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কোনও কিছুতে খারাপ হওয়া সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব দক্ষতাগুলিকে তাদের তুলনায় বেশি যোগত্যাসম্পন্ন লোকদের থেকে অধিক মূল্যায়ন করে থাকে।
এটার মানে হল যে মানুষগুলো ক্ষমতায় বা নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে আছেন তাদের যোগ্যতা নিরুপনে আমরা পুরোপুরিভাবে তাদের উপর নির্ভর করতে পারি না।
তাহলে প্রশ্ন হতে পারে নেতৃত্বের যোগত্যা পরিমাপ বা যোগত্যাহীন নেতাকে শনাক্তকারণের প্রক্রিয়াটা কিভাবে সম্পন্ন হবে?
ভাল খবর হল বিজ্ঞান এই সমস্যাটা সমাধানের একটি উপায় বের করছে যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির নেতৃত্বের পরিমাপক এবং নেতার যোগ্যতাহীনতা খুঁজে পাওয়া সম্ভবপর হয়েছে। এটি সফল হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হল প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা ব্যক্তিসত্তা। একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস এবং তার যোগত্যার মধ্যে যে পার্থক্য থাকে তার উপর ভিত্তি করে অতি সহজেই ঐ ব্যক্তির যোগ্যতা নিরুপণ করা যায়। আপনি যখন একটি প্রশ্নমালা প্রণয়ণ করার মধ্য দিয়ে হাজারখানেক মানুষের প্রতিক্রিয়া রের্কড করবেন এবং তাদের প্রতিক্রিয়ার সাথে কর্মক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া, কর্মদক্ষতা, এবং কার্যকারিতার সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করবেন তখন খুব সহজেই যোগ্য নেতৃত্ব এবং অযোগ্য নেতৃত্বের পার্থক্য দৃশ্যমান হবে।
আত্মউন্নয়ন বিষয়ক বইগুলো পড়ে গড়ে নিতে পারেন নিজেকে
এখন নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো লক্ষ্য করুন:
১. নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কি আপনার কি অসাধারণ দক্ষতা আছে?
২. বেশিরভাগ মানুষ কি আপনার মতো হতে চায়?
৩. আপনি কি খুবই কম কাজে ভুল করে থাকেন?
৪. আপনি কি প্রাকৃতিকভাবে সম্মোহনী ক্ষমতার মালিক?
৫. আপনার মন চাইলে কি আপনি যেকোনো কিছু অর্জন করতে সক্ষম হন?
৬. অফিস রাজনীতি সামাল দেয়ার জন্য আপনার কাছে কি বিশেষ দক্ষতা রয়েছে?
৭. আপনার জন্ম-ই কি হয়েছে সফল হওয়ার জন্য?
৮. আপনার জন্য কি লোকেদের বোকা বানানো সহজ নাকি আপনাকে বোকা বানানো লোকেদের জন্য সহজ?
৯. আপনি কি ভুয়া নম্রতা দেখাতে পটু?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলো শতাধিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে যার মাধ্যমে একজন যোগত্যাহীন নেতাকে খুঁজে নেয়া যায়। এই প্রক্রিয়াটা সফল হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হল মানুষদের অতিরিক্ত অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। গবেষণা বলে যোগত্যাহীন ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের নম্রভাবে প্রকাশ করতে উৎসাহিত নন বরং তাদের এইসব প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং অজ্ঞতার প্রকাশ পেয়ে থাকে। আশ্চর্যজনকভাবে তারা নিজেদের এইভাবে প্রকাশ করতে ভালবাসে। তাদের অজ্ঞাতা এবং অতিরিক্ত অহংকারের ফলে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে আদতে তারা যোগত্যাহীন। এই বিষয়টি আরও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যখন তাদের প্রতিক্রিয়ার (তারা নিজেদের যতটা ভাল মনে করে) সাথে তাদের যোগ্যতার(আসলে তারা যতটা ভাল) এক বিশাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে একজন যোগ নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি পুরেপুরি উল্টে যায়, দক্ষ ব্যক্তিদের আত্নবিশ্বাস ও যোগ্যতার মাঝে পার্থক্য খুবই কম পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তারা নিজেদের নম্রভাবে উপস্থাপনে অধিক আগ্রহী এবং নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যের উপর চাপানোতে বিশ্বাসী নয়। সর্বপরি তারা নিজের প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ লোকদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়ে থাকেন যা একজন অযোগ্য নেতার পক্ষে সম্ভবপর নয়।
তাই আর বিলম্ব না করে আজ-ই যাচাই করুন নিজেকে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বস্থানীয় লোকদের যেন যোগ্য নেতা-ই বস হয়, অযোগ্যের হাতে না যেন কোম্পানির ধ্বংস হয়।
আরোও দেখুনঃ
বিশ্ববিখ্যাত কোটিপতিরা উদ্যোক্তা এবং দক্ষ কর্মীদের যে ১০ টি বই পড়তে বলেন