আমাদের প্রায় সবারই vfx নিয়ে আগ্রহ অনেক। হলিউড মুভিগুলো যখন দেখি আর অবাক হয়ে যাই কিভাবে এই কাজগুলো করা হয়। বাংলাদেশের মুভিতে কেনইবা এমন ইফেক্ট পাওয়া যায় না? অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি বিশেষ কারণ হলো Visual Effects কোন একটি সফটওয়্যার বা বিষয়ে আটকে নেই। অনেকগুলো সফটওয়্যার মিলে তৈরি হয়ে ভিজুয়্যাল ইফেক্টস এর চমৎকার সব কাজ। আর বাংলাদেশে এই সফটওয়্যারগুলোর চর্চা নেই বললেই চলে। যে কারণে আমাদের দেশে এখনো তৈরি হয়নি কোন ভাল Visual Effects সমৃদ্ধ মুভি। যদিও অনন্ত জলিল কিছুটা হলেও চেষ্টা করছে। ? তবে এই কাজগুলোও বাইরের দেশ থেকে করে আনে অনন্ত জলিল। আশা করি আমাদের দেশেই Visual Effects এক্সপার্ট তৈরি হবে।

অনেক কথা হলো। এবার চলে যাই Visual Effects বা সংক্ষেপে vfx কাকে বলে, কাজ কি ইত্যাদি। তার আগে আরো একটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই। অনেকেই এই দুটি বিষয় নিয়ে গুলিয়ে ফেলেন। মুভিতে আমরা সাধারনত দুই ধরণের ইফেক্ট দেখতে পাই।
Special Effects (SFX)
Visual Effects (VFX)
Special Effects (SFX) হলো এমন ধরণের ইফেক্ট যা ক্যামেরার সামনে ঘটে। অর্থাৎ যা হাত দিয়ে ধরা যায়। আরো পরিস্কার করে বললে, ক্যামেরার সামনে যদি পেট্রোলের ড্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় তাহলে যে বিস্ফোরণ ঘটবে সেটাই হবে স্পেশাল ইফেক্ট।
Visual Effects (VFX) হলো এমন ধরণের ইফেক্ট যা পুরোপুরি কম্পিউটারে তৈরি করা হয়। কম্পিউটার গ্রাফিক্স (CG) বা Computer-generated imagery (CGI) ও বলা হয়ে থাকে। VFX ইফেক্ট তৈরি করা হয় পোস্ট প্রোডাকশনে। অর্থাৎ ক্যামেরা দিয়ে শুটিং শেষ করার পর VFX এর কাজ শুরু হয়। যেমন বিমান থেকে মানুষ পড়ে যাচ্ছে কিংবা কোন বড় ধরণের বিস্ফোরণ ঘটছে ইত্যাদি সবই VFX দিয়ে করা হয়। দিন দিন VFX জনপ্রিয় হচ্ছে। কারণ VFX এ তুলনামূলকভাবে খরচ কম এমনকি শুধু একজনই কম্পিউটারের সামনে বসে এই ইফেক্টগুলো তৈরি করতে পারে।
আমরা এই পোস্টে Visual Effects (VFX) নিয়ে বিস্তারিত জানবো।
ভিজুয়্যাল ইফেক্টের জন্য যে সকল পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়ঃ
Bullet Time:
এই ইফেক্টের নাম দেখেই অনেকটা বুঝা যায় কাজ কি। সবচেয়ে ভাল উদাহরণ হচ্ছে, ম্যাট্রিক্স মুভির সেই অসাধারণ বুলেট পাসিং শট। নায়ক যেখানে অনায়াসে বুলেটকে বৃদ্ধা আংগুলি দেখিয়ে নিচের দিকে সরে যায়। ?
CGI ইফেক্টঃ
মুভিতে এই ইফেক্ট অহ রহ ব্যবহার হচ্ছে।
Digital compositing:
কম্পিউটারে যে ভিজুয়্যাল ইফেক্টটি তৈরি করা হয় সেটা বাস্তব চিত্রের সাথে যে পদ্ধতিতে নিখুতভাবে যুক্ত করা হয় সেটাই হলো ডিজিটাল কম্পোজিটিং। উপরের সবগুলো ছবিই এটার উদাহরণ।
জনপ্রিয় একটি বিষয় হচ্ছে গ্রিন স্ক্রিন/ ব্লু স্ক্রিনের ব্যবহার। এটাকে ক্রোমা শটও বলা হয়ে থাকে। এটা প্রি প্রোডাকশনে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আরো নিখুতভাবে কাজ করার জন্য এখন ট্র্যাকিং পয়েন্টও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
Practical Effect:
অনেক সময় বাস্তব কিছু সেটও তৈরি করা হয়ে থাকে। ফলে পরবর্তিতে সহজেই ভিজুয়্যাল ইফেক্টস যোগ করে অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করা যায়।
Prosthetic Makeup Effect:
এটাও বাস্তবে তৈরি করা হয়। ফলে কাজ করতে সুবিধা হয়। পরবর্তিতে এর সাথে ভিজুয়্যাল ইফেক্টের কাজ করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ের এই মুভির মেকয়াপ কিন্তু বাস্তব!
Miniature Effect:
হলিউডে এই ধরণের মিনি শহর অনেক রয়েছে। যেখানে ছোট ছোট গাড়ি , ট্রেন সব কিছুই রয়েছে। বাস্তব শহরের ছোট ভার্শন হলো এই মিনিচার। পরবর্তিতে এই ছোট খেলনা শহরকে বিশাল শহরে রুপান্তর করা হয়।
Motion Capture:
প্লানেট অব দ্যা অ্যাপ্স এর সেই শিংপাঞ্জির কথা মনে আছে? আসলে সেটা মানুষই ছিল। ? শুধু মাত্র মোশন ক্যাপচার সেন্সর দিয়ে পরবর্তিতে মানুষকে শিংপাঞ্জিতে রুপান্তর করা হয়েছে। শুধু তাই নয় অবতার মুভিতেও এই মোশন ক্যাপচার পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়েছে।
Matte Painting:
হ্যা এই আধুনিক যুগেও সেই আদিম পেইন্টিং এর প্রয়োজন হয় তবে সেটা আধুনিক পদ্ধতিতে। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে অবশ্যই গুগলের সাহায্য নিন।
ম্যাট পেইন্টিং করার পরের অবস্থা।
Wire Management:
সুপার ম্যানের কথা মনে আছে? কত সুন্দর করে উড়ে বেড়ায়! তাহলে রহস্য জেনে নিন এখনই। ?
এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ধরণের ইফেক্ট রয়েছে যা গুগলের সাহায্যে জেনে নিতে পারেন।
ভিজুয়্যাল ইফেক্টের জন্য পোস্ট প্রোডাকশন স্টেপঃ
কয়েকটি ধাপে ভিজুয়্যাল ইফেক্টের কাজ সমাপ্ত করা হয়।
প্রথম ধাপে র ফুটেজগুলো এডিট করা হয়।
দ্বিতীয় ধাপে 3D ক্যারেকটারের সেটগুলো ডেভোলপ করা হয়।
তৃতীয় ধাপে ট্র্যাকিং করা হয়।
চতুর্থ ধাপে কম্পোজটিং করা হয়।
পঞ্চম ধাপে কালার গ্রেড বা কালার কারেকশন করা হয়।
ষষ্ঠ ধাপে সাউন্ড এডিট করা হয়।
শেষ ধাপে ফাইনাল রেন্ডার দিয়ে আউটপুট বের করা হয়।
3D মডেলিং এর জন্য ধাপঃ
৩ডি মডেলিং এর জন্য অনেকগুলো ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। একনজরে দেখে নিন।
অ্যানিমেশন সফটওয়্যারঃ
হলিউড মুভিগুলোতে সব চেয়ে বেশি যে সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে অটোডেস্ক মায়া। এছাড়াও যেগুলো রয়েছে তা হলোঃ
Autodesk Maya
LightWave 3D
Modo
Side Effects Houdini
Autodesk 3Ds Max
আমাদের দেশে 3Ds Max সব চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। নতুনদের জন্য ম্যাক্স টাই সহজ এবং মানানসই।
ভিডিও এডিটিং সফটওয়্যারঃ
ভিডিও এডিটিং এর জন্য আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি এডোবি প্রিমিয়ার প্রো ব্যবহার করা হয়। তবে এছাড়াও আরো যে সফটওয়্যারগুলো রয়েছে তা হচ্ছেঃ
Avid Media Composer
Final Cut Pro
Adobe Premier Pro
ডায়নামিক এবং পার্টিকল এর জন্য সফটওয়্যারঃ
অ্যানিমেশনের টপ লেভেলে যে কাজগুলো করা হয় সেগুলো হচ্ছে ক্যারেকটার অ্যানিমেশন, ফ্লুয়িড ডায়নামিক , বিস্ফোরণ ইত্যাদি। এই কাজগুলো করার জন্য আলাদা বিশেষ সফটওয়্যার রয়েছে। চলুন জেনে নেয়া যাক কি সেই সফটওয়্যার।
Real Flow
Phoenix FD
Ray Fire
Particle Flow
Fume Fx
3D Render সফটওয়্যারঃ
3D রেন্ডারের জন্য আলাদা অনেকগুলো সফটওয়্যার রয়েছে। যা দিয়ে অসাধারণ সব রিয়েলিস্টিক ফলাফল পাওয়া যায়। কিছুদিন আগে পিক্সারের রেন্ডার সফটওয়্যার Render Man সফটওয়্যারটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এছাড়াও যেগুলো রয়েছে চলুন জেনে নেয়া যাক।
ট্র্যাকিং সফটওয়্যার লিস্টঃ
Compositing software লিস্টঃ
আমাদের দেশে এডোবি আফটার ইফেক্ট এই জন্য অনেক ব্যবহৃত হলেও হলিউডে আরো বেশি শক্তিশালী সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়।
কালার গ্রেডিং সফটওয়্যারঃ
কালার কারেকশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমাদের দেশে এই কাজগুলো প্রফেশনালি করা হয়না বললেই চলে। যার কারণে আমাদের দেশের TVC গুলোর কাজ বাইরের দেশ থেকে করে আনা হয়। তবে আমাদের উচিত এই চমৎকার সফটওয়্যারগুলো শিখে নেয়া।
সাউন্ড এডিটিং সফটওয়্যারঃ
সাউন্ড এডিটের জন্য আলাদা সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যদিও অন্যান্য সফটওয়্যারে সাউন্ড এডিট করার সুযোগ থাকে। তবে বিশেষ এই সফটওয়্যারে সাউন্ডের অনেক এডভান্স কাজ করা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম একটি আলোচিত মুভির কিছু VFX কাজ দেখি এবং আইডিয়া নেই।
অনেক অনেক বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অনেক নতুন সফটওয়্যার সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের দেশের পরিপেক্ষিতে এডোবি মাস্টার কালেকশন এবং Autodesk Maya দিয়েই শুরু করা উচিত। একজনে একাধিক বিষয়ে না গিয়ে এক এক বিষয়ে এক্সপার্ট হওয়াই বেশি যুক্তিযুক্ত। আমি স্বপ্ন দেখি উপরে বর্ণিত সকল কাজ আমাদের দেশেই একদিন খুব ভালভাবে সম্পন্ন হবে।
এই পোস্টের তথ্যগুলো আমাদের স্যারদের সাহায্য নিয়ে করা হয়েছে। বিশেষভাবে গোবিন্দ স্যার ধন্যবাদ প্রাপ্য। এছাড়াও গুগলের সাহায্য নিয়ে করা হয়েছে। আপনিও আপনার মতামত জানাতে পারেন।
পরিপূর্ণ গ্রাফিক্স ডিজাইন শিখতে সংগ্রহ করতে পারেন আমার টোটাল ৪টি ডিভিডি। অর্ডার করতে পারেন এখানে।
কম্পিউটার অ্যানিমেশন কী? কেন? কিভাবে? 3D কম্পিউটার অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরি করার বিস্তারিত পদ্ধতি জানুন এবং হারিয়ে যান স্বপ্নের রাজ্যে!!
ধন্যবাদ সবাইকে।