মনে করুন কোন কোম্পানি তাদের প্রত্যাশা মাফিক দাড়াতে বা ফলাফল করতে পারছে না, তাদের সেই ব্যর্থতার কারন অনুসন্ধানের দায়িত্ব আপনাকে দেয়া হলো। তাহলে ঠিক কোন জায়গা থেকে আপনি অনুসন্ধান শুরু করবেন?
আপনার যদি উত্তর জানা না থাকে তবে বিশেষজ্ঞদের মতামতের উপর নির্ভর করতে পারেন। দীর্ঘ সময়ের গবেষনা থেকে তারা যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন সেটা এক ঝলকে দেখে নিন। আর জেনে নিন একজন দক্ষ নেতার কোন গুনাবলী গুলো থাকে? আর মিলিয়ে নিন একজন ব্যবসায় নেতা হিসেবে আপনি ঠিক কতটুকু যোগ্য।
পূর্বের কথায় আসি, যদি আপনি সত্যিই জানতে চান যে কোম্পানিগুলো কেন কাঙ্ক্ষিত ফলাফল করতে পারছে না, তাহলে আর কোন কিছুর দিকে তাকানোর দরকার নেই, শুধু আপনি শুধু ঐ কোম্পানির লিডারশীপ টিমের দিকে তাকান তাহলে আপনি আপনার প্রশ্নেগুলোর উত্তর পেয়ে যাবেন।
২ টা উদাহরন দেই, যেখানে অদক্ষ নেতৃত্বের কারনে পুরো কোম্পানিই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও অসংখ্য উদাহরন দেয়া যায়, তবুও এই ২ টা উদাহরন থেকে অনেকেই নিজেদের করনীয় সম্পর্কে যথেষ্ট ধারনা পাবেন। সেই সাথে ধারনা পাবেন নেতৃত্বের যোগ্যতা সম্পর্কে।
১। Enron ( ২০০১ সালের শুরুতে যাদের ছিলো ২৯ হাজার কর্মচারী এবং ১০০ বিলিয়ন ডলারের মত রেভিনিউ। যাদের পতনকে বিবেচনা করা হয় যুক্তরাষ্ট্র তথা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত জালিয়াতি হিসেবে । এই পতনের প্রধান কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় দুর্বল নেতৃত্ব এবং অদক্ষ পরিচালনা পর্ষদ)
২। Blockbuster ( যাদের ব্যর্থতার কারন হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সময়মত সিদ্ধান্ত না নেবার অযোগ্যতা হিসেবে। ১৯৯০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে তুমুল জনপ্রিয় এক প্রতিষ্ঠানের নাম ব্লকবাস্টার। ঘরোয়াভাবে সিনেমা দেখার নামই ছিল সে সময় ব্লকবাস্টার। এই প্রতিষ্ঠানটি ডিভিডি ভাড়া দিত। তবে দেরী করে জমা দিলে দিতে হতো অতিরিক্ত অর্থ। এতেই বিরক্ত হয়ে শুরু হয় নেটফ্লিক্সের পথচলা। ২০০০ হাজার সালের দিকে নেটফ্লিক্সকে ৫০ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ব্লকবাস্টারকে কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রিড হ্যাস্টিংস। কিন্তু ব্লকবাস্টারের প্রতিষ্ঠাতা জন এন্টিওকো এই প্রস্তাবে কোনো আগ্রহ দেখাননি, এরপর ২০০২ সালের দিক থেকে আস্থা সংকটের কারণে গ্রাহক সংখ্যা হারাতে থাকে ব্লকবাস্টার। আর জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যেতে থাকে নেটফ্লিক্স)
একটি ভালো নেতৃত্ব যেখানে কর্মীদের শুধু পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধি, কর্মে গতিশীলতা আনয়ন করে না বরং তার একটা সঠিক সিদ্ধান্ত কোম্পানিকে নিয়ে যেতে পারে বহুদুর। পরিসংখ্যান বলে একজন পটু কর্মীকে নিয়োগ দেয়ার থেকে একজন অযোগ্য নেতাকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে একটি কোম্পানি অধিক লাভবান হয়ে থাকে।
তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কিভাবে শনাক্ত করবেন একজন অপটু বা অদক্ষ নেতাকে?
সাধারণত যোগ্যতাহীন নেতা বলতে ঐ নেতাকে বুঝায় যে তার অধীনস্থ কর্মী, অনুসারী এবং প্রতিষ্ঠানকে দক্ষতার সহিত পরিচালনা করতে ব্যর্থ যার ফলস্বরূপ তার অধীনস্থ লোকজন এবং প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ক্ষতির মুখোমুখি হয়ে থাকে। তারা নিজেদের ব্যর্থতা অন্যের উপর বা ভাগ্যের উপর চাপাতে অধিক আগ্রহী হয়ে থাকে। লেখক অমিত কালান্তরী তার Wealth of Words বইয়ে বলেছেন,
” একজন যোগ্যতাহীন মানুষ তার অক্ষমতা ঢাকার জন্য অধীনস্থদের সাথে অযথা রাগারাগি করে।” এই কাজটি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সংঘটিত হয় , নি:সন্দেহে তা পুরো কর্মক্ষেত্রকে বিষিয়ে তোলে।
একজন অপটু বা যোগত্যাহীন নেতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল অজ্ঞতা এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া। অধিকাংশ অযোগ্য নেতা-ই অজ্ঞতায় ডুবে থাকে কিন্তু সর্বোৎকৃষ্ট ফলাফল তখনই পাওয়া যায় যখন আত্মবিশ্বাস (আপনি নিজেকে যতটা ভাল মনে করেন) এর সাথে যোগ্যতার (আপনি আসলে যতটা ভাল) অধিক পরিমাণে মিল পাওয়া যায়। অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কোনও কিছুতে খারাপ হওয়া সত্ত্বেও কিছু ব্যক্তিরা তাদের নিজস্ব দক্ষতাগুলিকে তাদের তুলনায় বেশি যোগত্যাসম্পন্ন লোকদের থেকে অধিক মূল্যায়ন করে থাকে।
এটার মানে হল যে মানুষগুলো ক্ষমতায় বা নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে আছেন তাদের যোগ্যতা নিরুপনে আমরা পুরোপুরিভাবে তাদের উপর নির্ভর করতে পারি না। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে নেতৃত্বের যোগ্যতা পরিমাপ বা যোগত্যাহীন নেতাকে শনাক্তকারণের প্রক্রিয়াটা কিভাবে সম্পন্ন হবে?
ভাল খবর হল বিজ্ঞান এই সমস্যাটা সমাধানের একটি উপায় বের করছে যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তির নেতৃত্বের পরিমাপক এবং নেতার যোগ্যতাহীনতা খুঁজে পাওয়া সম্ভবপর হয়েছে। এটি সফল হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হল প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা ব্যক্তিসত্তা। একজন ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস এবং তার যোগত্যার মধ্যে যে পার্থক্য থাকে তার উপর ভিত্তি করে অতি সহজেই ঐ ব্যক্তির যোগ্যতা নিরুপণ করা যায়।

আপনি যখন একটি প্রশ্নমালা প্রণয়ণ করার মধ্য দিয়ে হাজারখানেক মানুষের প্রতিক্রিয়া রের্কড করবেন এবং তাদের প্রতিক্রিয়ার সাথে কর্মক্ষেত্রে তাদের নেতৃত্ব প্রদানের প্রক্রিয়া, কর্মদক্ষতা, এবং কার্যকারিতার সাথে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করবেন তখন খুব সহজেই যোগ্য নেতৃত্ব এবং অযোগ্য নেতৃত্বের পার্থক্য দৃশ্যমান হবে। এখন নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলো লক্ষ্য করুন:
১. নেতৃত্বের ক্ষেত্রে কি আপনার কি অসাধারণ দক্ষতা আছে?
২. বেশিরভাগ মানুষ কি আপনার মতো হতে চায়?
৩. আপনি কি খুবই কম কাজে ভুল করে থাকেন?
৪. আপনি কি প্রাকৃতিকভাবে সম্মোহনী ক্ষমতার মালিক?
৫. আপনার মন চাইলে কি আপনি যেকোনো কিছু অর্জন করতে সক্ষম হন?
৬. অফিস রাজনীতি সামাল দেয়ার জন্য আপনার কাছে কি বিশেষ দক্ষতা রয়েছে?
৭. আপনার জন্ম-ই কি হয়েছে সফল হওয়ার জন্য?
৮. আপনার জন্য কি লোকেদের বোকা বানানো সহজ নাকি আপনাকে বোকা বানানো লোকেদের জন্য সহজ?
৯. আপনি কি ভুয়া নম্রতা দেখাতে পটু?
উপরোক্ত প্রশ্নগুলো শতাধিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছে। যার মাধ্যমে একজন যোগত্যাহীন নেতাকে খুঁজে নেয়া যায়। এই প্রক্রিয়াটা সফল হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হল মানুষদের অতিরিক্ত অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। গবেষণা বলে যোগত্যাহীন ব্যক্তিরা সাধারণত তাদের নম্রভাবে প্রকাশ করতে উৎসাহিত নন বরং তাদের এইসব প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং অজ্ঞতার প্রকাশ পেয়ে থাকে। এখন আপনি যদি আপনাকে মূল্যায়ন করতে চান তাহলে প্রশ্নগুলোর সাপেক্ষে আপনার উত্তরগুলো লিখে ফেলুন। এরপর ৫ এর ভিতরে নিজেকে মূল্যায়ন করুন। যে জায়গাগুলোতে আপনার ঘাটতি আছে বলে মনে করেন সেই জায়গাগুলোতে কিভাবে নিজেকে আরোও যোগ্যতর হিসেবে গড়ে তুলতে চান সেটাকে লিপিবদ্ধ করুন। কমেন্টে জানান কত এর ভিতরে কত মার্কস পেলেন এবং পরবর্তী ৩ মাসে নিজের ভিতর কোন পরিবর্তন আনতে চান?
আশ্চর্যজনকভাবে তারা নিজেদের এইভাবে প্রকাশ করতে ভালবাসে। তাদের অজ্ঞাতা এবং অতিরিক্ত অহংকারের ফলে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে আদতে তারা যোগত্যাহীন। এই বিষয়টি আরও সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যখন তাদের প্রতিক্রিয়ার (তারা নিজেদের যতটা ভাল মনে করে) সাথে তাদের যোগ্যতার(আসলে তারা যতটা ভাল) এক বিশাল পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। অন্যদিকে একজন যোগ নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি পুরেপুরি উল্টে যায়, দক্ষ ব্যক্তিদের আত্নবিশ্বাস ও যোগ্যতার মাঝে পার্থক্য খুবই কম পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। তারা নিজেদের নম্রভাবে উপস্থাপনে অধিক আগ্রহী এবং নিজের ব্যর্থতার দায়ভার অন্যের উপর চাপানোতে বিশ্বাসী নয়। সর্বপরি তারা নিজের প্রতিষ্ঠান এবং অধীনস্থ লোকদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়ে থাকেন যা একজন অযোগ্য নেতার পক্ষে সম্ভবপর নয়।
তাই আর বিলম্ব না করে আজ-ই যাচাই করুন নিজেকে এবং নিজের প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বস্থানীয় লোকদের যেন যোগ্য নেতা-ই বস হয়, অযোগ্যের হাতে না যেন কোম্পানির ধ্বস হয়।
ব্যাবস্থাপনা, বিক্রি এবং পরিকল্পনার জন্য যে বইগুলো পড়তে পারেন?
2 thoughts on “৯ টি প্রশ্ন দিয়ে যাচাই করুন আপনার Leadership কোয়ালিটি”
এই প্রশ্নগুলোর বাইরে আর কোন প্রশ্ন একজন ব্যবসায় নেতার যোগ্যতাকে পরিমাপ করতে পারবে বলে আপনি মনে করেন? কমেন্ট সেকশনে আপনার মতামত জানাতে পারেন।
নেতৃত্ব শুধু বাই বর্ন কোয়ালিটি না, এক ধরনের প্র্যাকটিসেরও ব্যাপার। সফল মানুষের কিছু প্যাটার্ন থাকে, সেই প্যাটার্নগুলা বুঝার চেষ্টা করা দরকার। শুরু করার জন্য বেশ গুরুত্বপুর্ন।