পৃথিবী জুড়েই কি জুয়াড়িরা বিখ্যাত!
জুয়াড়িরা ইতিহাস বিখ্যাত হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। প্র্রযুক্তি বিশ্বের কারণে পৃথিবী বিখ্যাত এসব জুয়াড়িদের বিপুল সংখ্যক ভক্ত তৈরি হয়েছে। বর্তমান প্রবন্ধে উল্লিখিত জুয়াড়িদের সফলতা যেমন আকাশচুম্বী, তেমনি অনেকেই সব হারিয়ে পথের ফকির হয়েছিলেন। অনেকেই আবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন কিংবা ভাগ্য আর তাদেরকে বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যাননি। পেশাজীবী জুয়াড়িদের মধ্যে ইতোমধ্যে অনেকেই কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছেন।
কিংবদন্তী এসব জুয়াড়ীদের প্রত্যেকের একেকটা অসাধারণ গল্প রয়েছে। আর মৃত্যু অদ্যাবধি জুয়াখেলায় তাদের আসক্তি ছিলো অকল্পনীয়। ইতোমধ্যে তাদেরকে নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র ও বই লেখা হয়েছে। এসব বইয়ে কারো কারো জীবন ফুটে উঠেছে অসাধারণভাবে। একইভাবে, কিছু কিছু বইয়ে জীবনের বিষাদময় দিনগুলোর উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
কিংবদন্তি এসব ব্যক্তিত্বরা বিশ্বব্যাপী জুয়াড়িদের বিভিন্নভাবে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন। এর ফলে অনেকেই উৎসাহিত হয়ে জুয়াখেলাকে জীবনের পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আবার অনেকেই বছরের পর বছর তাদের কৌশলগুলো রপ্ত করার জন্য তাদেরকে নিয়ে লেখা বইগুলো চিবিয়ে খেয়েছেন। এসত্ত্বেও প্রবন্ধে উল্লিখিত জুয়াড়িদের মধ্যে সবাই সফলতা লাভ করেননি! কিন্তু সবাই বিভিন্ন কারণে পৃথিবী বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন। এইসব কিংবদন্তী জুয়াড়িরা হলেন-
১. জন মন্টেগো
২. ব্রেইন মলোনি
৩. ওয়াইল্ড বিল হিকক
৪. ক্যারি প্যাকার
৫. আর্কিক ক্যারাস
৬. নিক ড্যানডুলাস
৭. এমআইটি ব্ল্যাকজ্যাক টিম
চলুন, এদের গল্পগুলো শুনা যাক।
জন মন্টেগো
জন মন্টেগো ছিলেন একজন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ। ৪র্থ আর্ল অব স্যান্ডুইচ ছিলেন। উনিশ শতকে এই বিখ্যাত জুয়াড়ি বেঁচেছিলেন। সামরিক বাহিনীতে কাজ করেছেন। ব্রিটিশ ইতিহাসে তিনি ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ। প্রিয় সখের মধ্যে অন্যতম ছিলো জুয়াখেলা। তার জীবনের অন্যতম একটি কৃতিত্ব হলো স্যান্ডুইচকে জনপ্রিয় করে তোলা।

জুয়ার সাথে স্যান্ডউইচ এর সম্পর্ক
স্যান্ডুইচকে জনপ্রিয় করে তোলার সঙ্গে জুয়াখেলার সম্পর্ক রয়েছে। জুয়াখেলার দীর্ঘ সেশন চলাকালে তিনি প্রায় সময় মাংসকে দুটি পাউরুটির মাঝখানে দিয়ে খাওয়ার প্রস্তাব দিতেন। তার সহকর্মীরা খেয়াল করতেন যে, প্রায় সময় তিনি স্যান্ডুইচ বলে অর্ডার দিয়ে এই খাবারটি উপভোগ করতেন। অবশেষে, খাবারটি স্যান্ডুইচ নামে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। অবশ্য ঘটনাটি সম্পর্কে একেবারেই অবকাশ নেই তা নয়। তবে, জুয়াখেলার সঙ্গে স্যান্ডুইচের সম্পর্ক নিয়ে আমরা একমত হতে পেরেছি।
রকমারি ডট কম থেকে ৭০% ছাড়ে বই কিনতে ক্লিক করুন !!
ব্রেইন মলোনি
ইতোমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কতিপয় জুয়াড়ি নেতিবাচক কারণে বিখ্যাত হয়েছিলেন। ব্রেইন মলোনি তাদের মধ্যে অন্যতম। মলোনি জুয়াখেলা নিয়ে অতি উৎসাহের কারণে বারবার শিরোনাম হয়ে প্রচার পেয়েছেন। জুয়াখেলার জন্য একটি কোম্পানি থেকে আটলান্টিক শহরে ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ তিনি আত্মসাৎ করেছিলেন। খুব দ্রুত একেবারেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন।

১৯৮২ সালে তার আত্মসাতের ঘটনাটি ধরা পড়ে এবং তাকে আটক করা হয়। আটক হওয়ার মাত্র একদিন আগে ক্যাসারস (ক্যাসিনো)-এ তিনি প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার হারিয়েছেন। মলোনিকে আড়াই বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। তার জুয়াখেলা নিয়ে লিখিত বইয়ের শিরোনাম দেওয়া হয়েছিলো ‘স্টাঙ্গ’ (Stung), যার অর্থ হলো যাকে দংশন করা হয়েছে বা দংশিত। এছাড়া তাকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র হলো ‘ওনিঙ ম্যাহোনি’ (Owning Mahowny)।
ওয়াইল্ড বিল হিকক: যুগের শ্রেষ্ঠ জুয়াড়ি
জেমস বাটলার হিকক। ওয়াইল্ড বিল নামে সুপরিচিত। তিনি ছিলেন একজন বন্দুকযোদ্ধা, শৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জুয়াখেলায় মেতে থাকতেন। আমেরিকার ওল্ড ওয়েস্ট যুগে (প্রায় উনিশ শতক জুড়ে আমেরিকার পশ্চিমভাগকে রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া) তিনি ছিলেন সবচেয়ে খ্যাতিমান জুয়াড়ি। মূলত তিনি পোকার (এক ধরণের জুয়া) খেলতেন এবং এখেলায় দারুণ পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন। তার মৃত্যুর অনেক দিন পর তাকে ‘হল অব ফেম’ খ্যাতি দেওয়া হয়েছিলো।

১৮৭৬ সালে হিকক তার পছন্দের একটি স্যালুন বারে পোকার খেলছিলেন। এসময় বারের দরজা ছিলো তার পেছনে। এ অবস্থায় জ্যাক ম্যাককল তার মাথায় গুলি করে এবং তৎক্ষণাত হিকক মারা যান। এই ঘটনার রহস্য এখনো উন্মোচন করা যায়নি। তবে অনেকেই মনে করেন যে, ম্যাককল তার কাছে জুয়াখেলায় প্রচুর অর্থ খুইয়ে ছিলেন। মৃত্যুকালে এইট ও এইচেস দুটি কার্ড হিককের হাতে ছিলো, যা বর্তমান পোকারদের কাছে মৃত ব্যক্তির হাত বলে পরিচিত।
নির্মলেন্দু গুণ এর ‘আমেরিকায় জুয়া খেলার স্মৃতি ও অন্যান্য‘ বইটি
কিনতে পারেন রকমারি ডট কম থেকে !
ক্যারি প্যাকার
ক্যারি প্যাকার ছিলেন একজন অস্ট্রেলিয়ান মোগল। জুয়াখেলতে বেশ পছন্দ করতেন। বিশ্ব সিরিজ ক্রিকেট প্রতিষ্ঠায় ব্যবসায় সফলতা আনতে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিলো। কিন্তু তিনি জুয়াখেলার জন্য সবচেয়ে বেশি খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ২০০৫ সালে ৬৮ বছর বয়সে এই বিখ্যাত জুয়াড়ি মৃত্যুবরণ করেন।
প্যাকার ছিলেন অশ্বরোহী-জুয়াড়ি। লাস ভেগাসসহ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ অশ্বারোহী দৌড়বিদ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। প্রায় সময় তিনি সর্বোচ্চ সম্ভব ঝুঁকি নিয়ে লড়তেন। একইভাবে, খেলায় মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার হেরেছেন। বলা বাহুল্য যে, প্যাকার যেমনি জয়লাভ করতেন, তেমনি হারতেন।

প্যাকারকে নিয়ে অনেক কিংবদন্তি গল্প রয়েছে। তার যুগের শ্রেষ্ঠ জুয়াড়ি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। একদা তিনি লাস ভেগাসে ফিরে আসেন। সেখানে এই মোগলের জন্য বিশেষ একটি চেয়ার বরাদ্দ ছিলো। একবার ক্যাসিনোতে তার বসার জায়গার একটি ক্রিস্টাল অ্যাশট্রের চাবি এক কর্মচারি খুঁজে পাচ্ছিলো না। এতে মালিক (ডিলার) প্যাকার হতাশ না হওয়ার জন্য ওই ক্রিস্টাল অ্যাশট্রেটি ভেঙে ফেলেছিলেন।
এরই মধ্যদিয়ে মূলত ক্যাসিনোগুলোতে তার প্রতি সম্মান ও প্রভাব বুঝা যায়। তিনি লাস ভেগাসের ক্যাসিনোগুলোতে ফোন করে তাদের ভল্টের সংখ্যা জানতে চাইতেন। এভাবে পুরো ভল্টের জন্য লড়তেন। ভেগাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ক্যাসিনোগুলোতে তিনি যেমন জনপ্রিয় ছিলেন তেমন ভীতির সঞ্চার করতেন।
আর্কেইক ক্যারাস: ঐতিহাসিকভাবে একজন খ্যাতিমান জুয়াড়ি
আর্কেইক সর্বযুগে পৃথিবী বিখ্যাত জুয়াড়িদের মধ্যে অন্যতম। একাধিক সময় তিনি বিপুল সংখ্যক অর্থ যেমন জয়লাভ করেছিলেন, তেমনি খুইয়েছিলেনও। অবশ্য জুয়াড়িদের এধরণের ঘটনাগুলো বিরোধাত্মক বলে মনে হলেও বিষয়টি তুলে ধরছি।
আর্কেইক একজন দারুণ জুয়াড়ি হিসেবে এগিয়ে যেতে লাগলেন। ধীরে ধীরে আর্কেইকের প্রতিদ্বন্ধী হ্রাস পেতে শুরু করে। এক সময় তিনি পোকার খেলতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার ব্যাঙ্করল দাঁড়িয়েছিলো ২ মিলিয়ন ডলার। ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে তা মাত্র ৫০ ডলারে নেমে আসে।

ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আর্কেইক লাস ভেগাসে গেলেন। এসময় তার যাত্রা ছিলো বিস্ময়কর। ১৯৯০’র দশকে (৯০-৯২ ও ৯৫) মাত্র ৫০ মার্কিন ডলার নিয়ে লড়ে অর্জন করেছিলেন ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার! অদ্যাবধি জুয়াখেলার এই রেকর্ড এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি।
দূর্ভাগ্যবশত, ১৯৯৫ সালে বাকারেট, পোকার ও ডাইচ খেলতে গিয়ে তিনি পুরো অর্থই খুইয়েছিলেন। তার কতিপয় উল্লেখযোগ্য অর্জনের পাশাপাশি বেশ কয়েকবার অভাবনীয়ভাবে হেরেছেনও। লাস ভেগাসে এই কিংবদন্তির এখনো আসা-যাওয়া রয়েছে।
নিক ড্যানডুলাস
নিক ড্যানডুলাস গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। একারণে তিনি ‘নিক দ্য গ্রিক’ বলেও পরিচিত ছিলেন। ‘জুয়াড়িদের রাজা’ বলে খ্যাতিলাভ করেছিলেন। ১৮৮৩ সালে একটি সচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরে তিনি আমেরিকা এসে শিকাগো শহরে স্থায়ী হন। এখানে তিনি পিতামাতার কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের একটি ভাতা লাভ করেছিলেন।

মন্ট্রিলে যেয়ে অশ্বদৌড়ে যোগ দেন। এখেলায় তিনি কিছুটা সফলও হন। অর্থনৈতিকভাবে অনুল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে শিকাগো চলে গেলেন এবং ডাইচ ও কার্ড খেলে সব টাকা খুইয়েছিলেন। খুব অল্প সময়ে খেলার প্রায় সবকটি ধরণ রপ্ত করেছিলেন তিনি। এরই মধ্যদিয়ে লাভ করেছিলেন বিপুল অর্থ। তার মতে, হারজিত দুটোই তার জীবনে একই গতিতে এসেছিলো।
শেষ ১ বছরের রকমারির বেস্টসেলার বইসমূহ কিনতে ক্লিক করুন !!
দ্য এমআইটি ব্ল্যাকজ্যাক টিম
১৯৭৯ সালের শুরুতে এমআইটির কয়েকজন অ্যালামনাই তাদের কার্ড কাউন্টিং তত্ত্ব নিয়ে ভেগাস ও আটলান্টিক সিটিতে যোগদান করেন। এসব খেলোয়াড় একসঙ্গে বিপুল লোকজনের কাছ থেকে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করেন এবং ভেগাস ও আটলান্টিক সিটিতে কার্ড গণনার জটিল প্রক্রিয়াটি উদ্ভাবন করেন । এর গোপনীয়তা ও উচ্চ ঝুঁকির কারণে খেলাগুলো থেকে অনেক সদস্য দূরে থাকেন। যাই হউক, এই ভয়ংকর ঝুঁকির ও ব্ল্যাকজ্যাকের স্বাদ পেতে নতুন মুখগুলো যোগদান করে।

সফলতার মাত্রার উপর নির্ভর করে বছরজুড়ে অনেকের আসা-যাওয়া ঘটেছে। জুয়াড়ির সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা কার্ড-উৎসাহী লোকদের সহজে নিয়োগ দিলো। ১৯৮৪ সালের মধ্যে কাপলান খেলাটিকে জনপ্রিয় করে তুললেন। তিনি প্রথমদিককার খেলোয়াড়দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ক্যাসিনোতে তাকেও উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে খেলাটিতে অংশগ্রহণ করতে হয়েছিলো।
সূত্র: https://www.slotsbaby.com/blog/the-most-famous-gamblers-in-history
আরও পড়ুনঃ