লেখকমাত্রই তাঁর নিজস্ব লিখনি অভ্যাস থাকবে। তিনি যেভাবে লিখতে আরাম পান ঠিক সেভাবেই তাঁকে লিখতে হবে, তা-না-হলে হয়তো সেটি মনের মতো লেখা হয়ে উঠবে না। কিছুকিছু ক্ষেত্রে কারো কারো লিখনির এ অভ্যাসগুলো হয়ে ওঠে বিচিত্র ও বৈচিত্র্যময়। আসুন তাহলে জেনে নেই বিখ্যাত ১০ লেখকের অদ্ভুত সব অভ্যাস সম্পর্কে।

০১। ডান ব্রাউন
লেখার সময় হলেই ডান ব্রাউন চলে যেতেন বাড়ির ছাদঘরে। সে ঘরে একটা ঘড়ি ছিল। যেটি এক ঘণ্টা হওয়ার পর বেজে উঠতো। প্রতিদিন ব্রাউন একঘণ্টা পরপর লেখা থেকে সাময়িক বিরতি নিতেন। শরীর টানটান করতেন। সিট আপ এবং পুশআপস করে নিতেন। এরপর ছাদে দুই পা দিয়ে উল্টো হয়ে নিচে ঝুলতেন। তাঁর ধারণা, এতে নাকি শরীরের রক্ত চলাচল ভালো হয়। ছাদ থেকে ঝুলবার জন্য তিনি দুই পায়ে স্পেশাল বুট পরতেন, যা দিয়ে তার পা ছাদে আটকে থাকতে পারতেন। এসব ঠিকঠাক মতো হয়ে গেলে তিনি আবার লেখার জন্য বসে যেতেন। তাঁর ‘দ্য ভিঞ্চি কোড’ সহ সকল বই তিনি এভাবেই রচনা করেছিলেন।

০২। হারুকি মুরাকামির
হারুকি মুরাকামির লেখার অভ্যাস কিছুটা ডান ব্রাউনের মতো ছিল। যদি বড় উপন্যাস লেখার নিয়ত করতেন তাহলে ভোর ৪টায় উঠতেন। উঠে লিখতে বসতেন। টানা লিখতেন। ৪-৫ ঘণ্টা একাধারে লেখাটা ছিল তাঁর কাছে মামুলি ব্যাপার। কিন্তু বিকেল হয়ে গেলে আর লিখতেন না তিনি। বের হয়ে যেতেন। নিয়মিত দশ কিলোমিটার দৌড়াতেন। তারপর সাঁতারের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। অনেকক্ষণ সাঁতার কাটতে। এরপর ধ্যানমগ্ন হতেন। তিনি এটিকে আত্মমগ্ন বলতেন। হারুকি মনে করেন, ভালো লেখার জন্য আত্মমগ্নতার প্রয়োজন। মুরাকামির লেখার সাথে যদি পরিচয় না থাকে তবে রকমারিতে তার বইয়ের কিছু অংশ দেখে নিতে পারেন। দেখুন হারুকি মুরাকামির সকল বই ।

০৩। মায়া অ্যাঞ্জেলো
মায়া অ্যাঞ্জেলো খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতেন। উঠে অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে বাইরে চলে যেতেন। গিয়ে উঠতেন একটি হোটেলের ছোট ঘরে। সঙ্গে নিতেন একটি বাইবেল, এক প্যাকেট তাস আর এক বোতল শেরি। ঘড়িতে তখন সকাল ৭টা বাজতো। তারপর লিখতে বসতেন। তারপর একটানা ৭টা থেকে ২টা পর্যন্ত লিখতেন। এই তার লেখার সময়। এভাবেই তিনি মুঠো মুঠো লেখার জন্ম দেন। তার লেখা বইগুলো দেখুন এখানে।

০৪। জেন অস্টেন
জেন অস্টেনের লেখার অভ্যাসটা খুবই অদ্ভুত। তিনি লেখার সময় একটি কাগজে নানা শব্দ লিখে ফেলতেন। উদাহরণ হিসেবে দেওয়া যায় ডার্সি শব্দটা। বারবার খাতায় লিখতেন এই শব্দটা। তারপর সেটি রূপ নিত মানুষে। মানুষটি হয়ে যেত নায়ক। এভাবে আরও অনেক শব্দ লিখে ফেলতেন। সেগুলো মিলিয়ে তৈরি করে ফেলতেন বাক্য। বাক্য মিলে হয়ে যেত বই। দারুণ সব বই লিখে অর্জন করেছিলেন বিশ্বময় খ্যাতি। তার সর্বাধিক জনপ্রিয় উপন্যাস প্রাইড এন্ড প্রিজুডিস , বিশ্বজুড়ে এটি প্রায় ২০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। সিনেমা থেকে শুরু করে মঞ্চনাটকও নির্মিত হয়েছে এই উপন্যাস অবলম্বনে।

০৫। আগাথা ক্রিস্টি
বই দিয়ে দেয়াল বানাতেন আগাথা ক্রিস্টি। একটি বইয়ের ওপর রাখতেন আরেকটি বই। এভাবে স্তরে স্তরে সাজাতেন তিনি। কাজগুলো করতেন তার লেখার টেবিলের দুপাশে। তারপর তিনি মাঝখানটায় লিখতে বসতেন। লিখতে বসা ছাড়াও গোছল করতে করতে তার মাথায় লেখা আসত। লেখা আসতো খাওয়ার সময়ও। তাঁর সহযোগীকে সেসব নোট করতে বলতেন। এভাবে তিনি তাঁর লেখার কাজ সম্পাদনা করতেন। আগাথা ক্রিস্টি সম্পর্কে আরেকটি তথ্য পাঠককে জানিয়ে রাখি তা হলো, তার ডাকনাম “দ্য কুইন অফ ক্রাইম” (অপরাধ উপন্যাসের রাণী বা রহস্য সাম্রাজ্ঞী)। তার লেখা অনেকগুলো রহস্য কাহিনী থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এর তথ্যানুসারে অগাথা ক্রিস্টি বিশ্বের সর্বকালের সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের লেখক এবং যেকোন ধরনের সাহিত্যকর্মের সর্বাধিক বিক্রীত লেখক, যে ক্ষেত্রে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারই কেবল তার সমকক্ষ। তার রচিত বইয়ের প্রায় দুইশত কোটি কপি বিশ্বব্যাপী বিক্রি হয়েছে, যার চেয়ে কেবলমাত্র বাইবেলই অধিকসংখ্যক বিক্রি হয়েছে। আগাথা ক্রিস্টির লেখা বই দেখুন।

০৬। চার্লস ডিকেন্স
দৈনিক দশ মাইল হাঁটার অভ্যাস ছিল চার্লস ডিকেন্সের। হাঁটতে গিয়ে হারিয়ে যেতেন। না, ভুলবশত না। ইচ্ছে করেই। কারণ হারিয়ে গেলেই তাঁর লেখার স্পার্ক চলে আসতো। এই স্পার্ক চলে এলেই তিনি বাড়িতে ফিরে আসতেন। তারপর লিখতে বসে যেতেন। অসংখ্য বই তিনি কৃত্রিম এই স্পার্ক তৈরি করে লিখে ফেলেছিলেন। তাছাড়া তাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হতো,“আপনার লেখা সেরা উপন্যাস কোনটি?” তিনি নির্দ্বিধায় উত্তর দিতেন, “অবশ্যই ডেভিড কপারফিল্ড।” যদিও সাহিত্য সমালোচকগণ তার সাথে একমত নন, তাদের দৃষ্টিতে ‘গ্রেট এক্সপেকটেশন’ ছিল চার্লসের সেরা উপন্যাস। তিনি সর্বমোট পনেরটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। চার্লস ডিকেন্সের লেখা সকল বই।

০৭। ওয়ার্ডস ওয়ার্থ
ওয়ার্ডস ওয়ার্থ ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত কবি। তাঁর কবিতা ঠিক হয়েছে নাকি ঠিক হয়নি সেটি যাচাই করতেন কুকুরের মাধ্যমে। প্রতিদিন তিনি তাঁর পোষা কুকুর নিয়ে বেরিয়ে যেতেন। রাতে লেখা কবিতাগুলো কুকুরের সামনে জোরে জোরে আবৃত করতেন। যদি কুকুর চুপ করে সে কবিতা শুনতো তাহলে বুঝতেন কবিতাটি ঠিক হয়েছে। আর ঘেউ ঘেউ করলে বুঝতে কবিতার কিছুই হয়নি। বাড়িতে এসে সে কবিতা বদলাতেন। নতুন করে লিখতেন। যতক্ষণ না কুকুরের কবিতা পছন্দ না হতো ততক্ষণ তিনি কবিতাকে ঠিক ভাবতেন না।

০৮। জন স্টেইনবেক
পেন্সিলে লিখতেন জন স্টেইনবেক। কোথাও শব্দ অথবা বাক্য সংযোজন বা বিয়োজন করতে রাবার দিয়ে মুছে কাজটি সম্পাদনা করতেন। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘গ্রেপস অফ রথ’ লিখতে ক্ষয় হয়েছিল ৩০০টি মোটাসোটা বড় পেন্সিল। ত্রিশের দশকের মহামন্দার প্রেক্ষাপটে তিনি এক আলোড়নসৃষ্টিকারী উপন্যাস লিখেন, যার নাম দ্য গ্রেপস অব র্যাথ। বইটি প্রায় ১৪ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। ১৯৬৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার জয় করেন।

০৯। এনিড ব্লাইটন
এনিড ব্লাইটন ছিলেন আপাদমস্তক একজন শিশুসাহিত্যিক। সকালের দিকে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন এ লেখক। লেখার সময় সঙ্গে রাখতেন লাল রঙের একটা মরোক্কান শাল। তিনি মনে করতেন শালের লাল রঙ তাকে লেখায় উদ্দীপ্ত করে। লিখতেন টাইপরাইটারে। খুব একটা বিরতি দিতেন না। টানা লিখে যেতেন। দিনে তিনি ছয় হাজার শব্দ লিখতে পারতেন। এনিড ব্লাইটনের লেখা সকল বই দেখুন।
বিশ্বসেরা উপন্যাসগুলোর বাংলা অনুবাদ দেখুন
আরও পড়ুন
হুমায়ূন আহমেদের ২৬টি হাসির ঘটনা
* পুনঃপ্রকাশিত, লেখাটি রকমারি ব্লগে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো ২০১৭ সালে
comments (2) view All
Pingback: একাকীত্ব উদযাপন করতে পারেন যে ৬টি বই পড়ে! - রকমারি ব্লগ
ভালো লাগলে শেয়ার করে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারেন।